জয়-পরাজয় ছাপিয়ে শুধুই এরিকসেন

এরিকসেনের ইনজুরি কাঁপিয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। তাঁর এক ঘটনায় থমকে গিয়েছিল পুরো বিশ্ব। মাঠে লুটিয়ে পরার পর থেকে ম্যাচ শুরুর আগ পর্যন্ত পুরো বিশ্ব এক হয়ে অপেক্ষা করছিল একটা সুসংবাদের। আর সেটিও এসে গিয়েছে আধ ঘন্টার মাঝেই। হাফ ছেড়ে বেঁচেছে যেন পুরো বিশ্ব। ইউরোর দ্বিতীয় দিনের সব আলো কেড়ে নিয়েছে এরিকসেনের ঘটনা। তবে গতকালের তিন ম্যাচের ফলাফল হয়েছে তিনরকম, তিন ম্যাচে রোমাঞ্চ ধরা দিয়েছে তিনভাবে।

  • ওয়েলস ১-১ সুইজারল্যান্ড

এরিকসেনের সাথে যেটা ঘটেছিল সেটা ঘটতে পারতো ওয়েলস-সুইজারল্যান্ড ম্যাচেও। ওয়েলসের কিফার মুর আর সুইজারল্যান্ডের এমবাবুর মধ্যে ম্যাচের শুরুতেই একটা ক্ল্যাশ হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে থাকলেও উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মুরকে। কিন্তু ২ মিনিট পরেই মাথাত লাল ব্যান্ডেজ বেঁধে মাঠে নামেন তিনি। আর ম্যাচের শেষদিকে ওয়েলসের ত্রাতা হয়ে এসেছেন সেই মুরই।

ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল সুইজারল্যান্ডের। শাকা, শাকিরি আর কেভিন এমবাবুরা পুরো মাঠ দখল করে রেখেছিলেন। শুধু গোল হচ্ছিল না। এতে ওয়েলস গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ডের অবদানও কম নয়। ওয়েলসকে একাই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন অনেকটা। অন্যদিকে সুইস গোলকিপার ইয়ান সোমারও সমানতালে খেলে গিয়েছেন। দুজনের ম্যাচের প্রথমার্ধে বিশ্বমানের দুই সেভ দিয়ে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন।

দ্বিতীয়ার্ধে এসে খেলায় যেন গোলের দেখা মিলল। ৪৯ মিনিটে এসে শাকিরির কর্নার থেকে বল জালে জড়িয়ে দিলেন এমবোলো। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। ম্যাচে প্রথম ৬০ মিনিট ছড়ি ঘুরিয়েছে সুইজারল্যান্ড। কিন্তু শাকিরি নেমে যেতেই সুইসরা যেন খেই হারিয়ে ফেলে, আস্তে আস্তে তীব্রতাও কমে আসে। আর সে সুযোগটাই কাজে লাগায় ওয়েলস। ৭৪ মিনিটে জো মোরেলের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ক্রসে দ্রুত ছুঁতে এসে এক হেড করেন মুর। সেটা একদম বার ঘেঁষে ঢুকে যায় জালে। মুরকে আনমার্কড রাখার খেসারত দিতে হয় সুইজারল্যান্ডকে।

তবে ৮৪ মিনিটে মাঠে নেমেই হিরো বনে গিয়েছিলেন মারিও গাভ্রানোভিচ। মাঠে নেমে প্রথম শটই ছিল তার গোলপোস্টে। গোল উদযাপন শেষ হতে না হতেই রেফারি ডাক দেন ভিএআরকে। তারাই বলে, উদযাপন করে আর লাভ হবে না। ফলে ম্যাচটা শেষ হয় সমতাতে।

  • ডেনমার্ক ০-১ ফিনল্যান্ড

এই ম্যাচের গল্পটা লেখা হতে পারতো ফিনল্যান্ডের অর্জন নিয়ে। কীভাবে প্রথমবারের মতন বড় কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে এসেই দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে ফিনল্যান্ড। কিন্তু ম্যাচের পুরো গল্পটাই এরিকসেনকে নিয়ে। ৪০ মিনিটের মাথায় হঠাৎই মাঠের মাঝে লুটিয়ে পরেন এরিকসেন।

সেকেন্ডের মধ্যে জড়ো হন সকলে। অধিনায়ক সিমোন কায়ের দিতে শুরু করেন সিপিআর, ফিনল্যান্ডের দর্শকেরা নিজেদের পতাকা দিয়ে দেন তাকে ঘিরে প্রটেকশন তৈরি করার জন্য। মাঠের সকলের উপস্থিত বুদ্ধি আর সতর্কতাই যেন বাঁচিয়ে দিয়েছে এরিকসেনকে। ডাক্তারদের প্রাণান্ত চেষ্টার পর মাঠেই জ্ঞান ফেরে এরিকসেনের।

পুরো দেড় ঘন্টা বন্ধ থাকার পর আবারও মাঠে গড়ায় ম্যাচ। ৪০ মিনিটে থেমে যাওয়া ম্যাচ সেখান থেকেই শুরু করে দুই দল। হাসপাতালে গিয়ে ভিডিও কলে এরিকসেনের সুস্থতা নিশ্চিত হওয়ার পরই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক কায়ের। এরিকসনও বলেছেন ম্যাচটা শেষ করে ফিরতে। কিন্তু ম্যাচটা ড্যানিশদের জন্য স্মরণীয় হয়ে রইল না। বরং ম্যাচটা নিজীর করে নিয়েছেন ফিনিশরা।

বলতে গেলে দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে ফিনিশিংই। ম্যাচে ৭০% বল পজেশন, ২৫টা শট নিয়েও ম্যাচ জিততে পারেনি তারা। বরং ফিনল্যান্ড সীমিত সুযোগই কাজে লাগিয়েছে। ৫৯ মিনিটে একটা মাত্র সুযোগ পেয়েই কাজে লাগিয়েছেন জোয়েল পোহইয়ানপালো। তাতেই অভিষেক রাঙানো ফিনল্যান্ডের। এটা শুধু তার নয়, ফিনল্যান্ডও অভিষেক। নিজেদের প্রথম বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল তাদের মতন করেই। গোলের পরেও কোনো উৎসব করেনি তারা।

বাঁ দিক থেকে উরোনেনের ক্রসে দারুণ হেড করেন পোহইয়ানপালো। সেই বল গিয়ে পরে ডেনমার্ক গোলকিপার ক্যাসপার স্মাইকেলের হাতে। কিন্তু ভল আয়ত্ব্বে রাখতে পারেননি তিনি। পুরো ম্যাচে মাত্র একটা শটই নিয়েছে তার, আর সেটাই হয়ে রইল ম্যাচ ডিসাইডিং।

যদিও ম্যাচে আক্রমণ বাড়িয়ে গিয়েছে ডেনমার্ক। ৭৪ মিনিটে একটা পেনাল্টিও পেয়েছিল। কিন্তু টটেনহামের মিডফিল্ডার পিয়ের-এমিল হইবিয়ার দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন ফিনল্যান্ডের গোলকিপার হ্রাদেকি। তাতে করে ডেনমার্কের আক্রমণ কমেনি। কিন্তু দিনশেষে পৌউলসেনের বাজে ফিনিশিংই ডেনমার্কের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।

  • বেলজিয়াম ৩-০ রাশিয়া

ম্যাচের শুরু থেকেই তৈরি হয়েছিল চাপা উত্তেজনা। ‘ভ্ল্যাক লাইফ ম্যটার্স’ ব্যাপারে রাশিয়া বরাবরই একটু পেছনের সারিতে অবস্থান করে। আর সে কারণেই ম্যাচের শুরুতে যখন বেলজিয়ামের খেলোয়াড়েরা হাঁটু গেড়ে বসেছিল, তখন দাঁড়িয়ে ছিল রাশিয়া। লুকাকু তা দেখছিলেন সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে। মনে মনে কিছু একটা করে দেখানোর প্রত্যয় জেগেছিল তার। আর সেটাই করে দেখিয়েছেন মাঠে।

প্রথম থেকেই রাশিয়াকে চেপে ধরে বেলজিয়াম। মাঝমাঠ থেকে উইঙ্গার দ্রিস মের্তেন্সের পাঠানো উড়ন্ত বল ঠিকমতো সামলাতে পারেননি রাশিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা। বল চলে যায় ওঁত পেতে থাকা লুকাকুর কাছে। সেটা থেকেই ১০ মিনিটের মাথায় বেলজিয়ামকে এগিয়ে নেন লুকাকু।

গোলের চেয়েও সুন্দর ছিল তার উদযাপন। সতীর্থ ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের জন্য শুভেচ্ছাবার্তা পাঠালেন গোল করেই, দৌড়ে ক্যামেরার সামনে গিয়ে বললেন, ‘ক্রিস, ক্রিস… আমি তোমাকে ভালোবাসি!’

এই ম্যাচেও বাদ যায়নি ইঞ্জুরির থাবা। ২৭ মিনিটে রাশিয়ার দালের কুজায়েভের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন বেলজিয়ান রাইটব্যাক তিমোথি কাস্তানিয়ে। প্রথমে মাঠে সেবা চললেই, একটু পরেই তাকে তুলে নেওয়া হয়। টেস্ট শেষেই বোঝা যাবে কতটা গুরুতর সেই ব্যাথা। তবে খুব সম্ভবত ইউরো শেষ তার।

তবে রাইট ব্যাকের জায়গাটা খুব ভালোভাবেই সামলেছেন থমাস মনিয়েঁ। ৩২ মিনিটে থরগান হ্যাজার্ডের মাপা ক্রস আটকাতে গিয়ে চুল করে বসেন, আর সেটিকে কাজে লাগিয়েই গোল ব্যবধান বাড়ান মনিয়েঁ।

দ্বিতীয়ার্ধে একটু খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু তা কাজে দেয়নি। বরং ৮৮ মিনিটে উলটো আরেকটা গোল করে ম্যাচ রাশিয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান লুকাকু, সেটাও বদলি নামা মনিয়েঁর সাহায্য থেকেই। আর ৩-০ গোলেই শেষ হয় ম্যাচ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link