সবশেষ ভারত সিরিজ, এরপর এখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হার। ইংল্যান্ডের এই ব্যর্থতার পিছনে দায়ী তাদের ব্যাটিং। মূলত ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের সমস্যার কারণে টেস্ট ক্রিকেটে ইংলিশরা আগের সেই দাপট এখন আর দেখাতে পারছে না। ২০১২ সালে অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের টেস্ট থেকে অবসরের পর থেকেই মূলত ওপেনিংয়ে ইংলিশদের এই বেহাল দশা। ওপেনিংয়ে একপ্রান্তে অ্যালিস্টেয়ার কুক থাকলেও আরেকপ্রান্তে দলে আসা যাওয়ার মধ্যে ছিলেন বেশ কয়েকজন।
মাইকেল কারবারি, নিক কম্পটন, স্যান রবসন, জো ডেনলি, অ্যালেক্স হেলস, জেসন রয়, কিটন জিনিংস, হাসিব হামিদরা ব্যর্থ হবার পর সবশেষ এই তালিকায় যুক্ত হন ডম সিবলি, জ্যাক ক্রাউলি এবং রুরি বার্নস৷ অ্যালিস্টেয়ার কুকের বিদায়ের পর এরা তিনজনই মূলত ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের দায়িত্ব পান।
কিন্তু প্রায় তিন বছর দলে থাকলেও এখনো ধারাবাহিক হতে পারেননি কেউই! বরং তিনজনই চরম ব্যর্থ! যার প্রভাব টা পুরো দলের ব্যাটিংয়ের উপরই পড়েছে। টপ অর্ডারের তিনজনই যদি ব্যর্থ হয় সেখানে বড় দলগুলোর বিপক্ষে জয় পাওয়াটা অনেকটাই দুঃসাধ্য।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম দিনে লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত কোনো উইকেট হারায়নি ইংলিশরা৷ যেটা কিনা গত দশ বছরে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদের ওপেনিং রেকর্ড যে লাঞ্চ বিরতির আগে কোনো উইকেট হারায়নি! ক্রিকেট অ্যানালিস্ট বেন জোন্স মজার ছলে এক টুইট বার্তায় লিখেন, ‘শেষবার যখন ইংল্যান্ড লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত ওপেনিং জুটি টিকে ছিলো, তখন ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, ম্যানচেস্টার সিটির কোনো প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি ছিলো না এবং ওলি পোপ মাত্র ১৩ বছর বয়সী ছিলেন।’
ব্যাপারটা মজার ছলে বললেও একবার ভাবুন যেই ইংল্যান্ডের মাটিতে ক্রিকেটের জন্ম, যারা কিনা টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘকাল দাপট দেখিয়েছে তাদের টপ অর্ডার আজকে হাসির পাত্র!
সবশেষ ২০১৬ সালে কুক ও জিনিংসের সেঞ্চুরি জুটির পর গেলো পাঁচ বছরে মাত্র একবার সেঞ্চুরির জুটি গড়তে পেরেছে ইংলিশ ওপেনাররা। সেটাও ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিবলি ও ক্রাউলির। ইংলিশদের টপ অর্ডারের এমন বেহাল অবস্থা শেষ কখন দেখেছেন মনে আছে কি? আদৌ কি কেউ দেখেছে!
সিবলি, ক্রাউলি এবং বার্নসের সবশেষ খেলা বেশ কিছু টেস্টের পরিসংখ্যান ঘাটলাম। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে টেস্টে সবচেয়ে ব্যর্থ এবং বাজে টপ অর্ডার থাকলে সেটা ইংল্যান্ডের! একটু বিস্তারিত বলি তাহলে বুঝতে সুবিধে হবে।
ডমিনিক সিবলি সবশেষ খেলা ১৬ ইনিংসে মাত্র তিনবার ফিফটির দেখা পেয়েছেন, নেই কোনো সেঞ্চুরি। অবাক করা ব্যাপার হলো ইংল্যান্ডের বর্তমান এই নিয়মিত ওপেনার ১৬ ইনিংসের ১০ ইনিংসেই এক ডিজিটের রানে আউট হয়েছেন! এরপর আসি জ্যাক ক্রাউলির ব্যাপারে।
সবশেষ ১২ ইনিংসে মাত্র এক ফিফটি! তিনিও ১০ ইনিংসে সিংগেল ডিজিটের ঘরেই আউট হয়েছেন। এবং সবশেষে রুরি বার্নস – যিনি সবশেষ ১৭ ইনিংসে ২ ফিফটি আর ১ সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু তিনিও সাত ইনিংসে আউট হয়েছেন এক ডিজিটের ঘরে।
এই তিনজনেরই সেই পরিসংখ্যান দেওয়া হলো এমন না যে এর আগে তারা খুব ভালো কিছু করছে! এর আগের পরিসংখ্যান ঘাটলেও এরকম কাছাকাছি পারফরম্যান্সই দেখতে পাবেন। অর্থাৎ তিন বছর যাবৎ ইংলিশদের টপ অর্ডার চরম অধারাবাহিক সেই সাথে ব্যর্থতার চাদরে মোড়ানো আছে।
একে তো টপ অর্ডার চরম ব্যর্থ। তার মধ্যে অনভিজ্ঞ মিডল অর্ডার (জো রুট ব্যাতিত)। যার কারণে টেস্ট ক্রিকেটে আগের সেই মেজাজে নেই ইংলিশরা। বেন স্টোকস, জস বাটলার, ক্রিস ওকসরা ফিরলে সেই সমস্যার সমাধান হয়তো হবে। তার উপর জো রুট বেশ কয়েক ম্যাচেই রান পাচ্ছেন না! যদিও জো রুট ফর্মে ফিরবেন।
কিন্তু টপ অর্ডারের সমাধান কি?
সামনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পর ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। এরপরই আছে অ্যাশেজ সিরিজ। অজিদের বিপক্ষে লড়াই করে অ্যাশেজ ছিনিয়ে আনার মতো অবস্থা এখন ইংলিশদের মোটেও নেই। অন্তত এই টপ অর্ডারের ব্যর্থ তিনজন থেকে কতটুক পাবে ইংলিশরা সেটাই চিন্তার ব্যাপার।
এদিকে পাইপলাইনেও যে অনেক অপশন আছে সেটাও না! কাউন্টিতে ভালো পারফরম্যান্স করা হাসিব হামিদকে ভারতের বিপক্ষে হয়তো দেখা যেতে পারে। সেই সাথে সুযোগ পেতে পারেন কাউন্টিতে দূর্দান্ত পারফরম্যান্স করা স্যাম বিলিংসও।
অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, অ্যালিস্টেয়ার কুক, ইয়ান বেল, জোনাথন ট্রট, কেভিন পিটারসেনদের রেখে যাওয়া সেই ইংল্যান্ড এখন অনেকটাই ঘায়েল সিংহের মতো। সাদা পোশাকে যাদের কাছে পাত্তা পেতো না অনেক দল, সেখানে তারাই ভুগছে খেলোয়াড় সংকটে। টপ অর্ডারের এই ক্ষরা, টপ অর্ডারের এই ব্যর্থতা কবে কাটবে সেটা কেউ জানি না, তবে আদৌ কখনো তারা আগের রূপে ফিরতে পারবে কিনা এটা নিয়েও বেশ সন্দেহ প্রকাশ করাই যায়।