একরোখা গ্রেটনেস

সাল ২০১২।

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল তখন ইংল্যান্ড সফরে এসেছে। হঠাৎ একটা খবর ছড়ালো ইংলিশ ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন তার দলনেতা অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের সম্পর্কে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়ের সাথে মুঠোফোন বার্তায় কথা বলেছেন। এমনকি স্ট্রাউসের ব্যাটিংয়ে কোথায় দূর্বলতা সহ দলের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য পিটারসেন তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার বন্ধুর কাছে পাঠান।

অভিযোগ প্রমাণিত হবার পরের ম্যাচেই দল থেকে বাদ পড়লেন তিনি! যেটা ছিলো সিরিজের শেষ টেস্ট। আগের টেস্টেই তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন আর পরের টেস্টেই কিনা বিতর্কের জন্ম দিয়ে বাদ পড়লেন। সেই টেস্টে ইংলিশদের হারিয়ে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর স্থান দখল করে প্রোটিয়ারা। পরবর্তীতে খবর শোনা যায় যে সেই বিতর্কিত বার্তা প্রোটিয়া পেসার মরনে মরকেলকে দিয়েছিলেন পিটারসেন! কিভাবে স্ট্রাউসকে আউট করা যায় সে ব্যাপারেই তথ্য দেওয়া ছিলো।

স্ট্রাউস এই ব্যাপারে জানার পর বেশ কষ্ট পান। যদিও কেভিন পিটারসেন পরবর্তীতে স্ট্রাউসের কাছে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চান। তবে এটি ক্রিকেট পাড়ায় বেশ শোরগোল ফেলেছিলো। এমনকি অনেক ইংলিশ সমর্থকরা কেভিনকে চিরকালের মতো দল থেকে বহিস্কার করার পক্ষে ছিলেন। কিছুদিন ক্রিকেটের বাইরে কাটিয়ে দলে ফিরলেও ব্যাটে রান খরায় ভুগছিলেন তিনি!

২০১৩ অ্যাশেজে তার বাজে পারফরম্যান্স আর ইংলিশদের শোচনীয় পরাজয়ে তাঁকে বাধ্য করা হয় অবসর নিতে। যদিও মনে করা হয় ২০১২ সালের সেই ‘মেসেজ বিতর্ক’ই মূলত তাঁর ক্যারিয়ারের জন কাল হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য টিম ম্যানেজমেন্ট এবং বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথেও তাঁর একটা রেষারেষি ছিলো। যার ফলে ৩৪ বছর বয়সেই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়!

ইংল্যান্ডের হয়ে খেললেও কেভিন পিটারসেনের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা টেস্ট ও ওয়ানডে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় ক্রিকেটের ৩৬০ ডিগ্রি খেলোয়াড় কে আপনি নি:সন্দেহে নাম বলবেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এবি ডিভিয়ার্সের।

তবে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ৩৬০ ডিগ্রি ক্রিকেটার বলা হয় কেভিন পিটারসেনকে। পিটারসেনই প্রথম ক্রিকেটার যিনি র‍্যাম্প শট, সুইপ্স, রিভার সুইপ্স এবং স্যুইচ হিট শট খেলা শুরু করেন। বর্নাঢ্য ক্যারিয়ার হবার পরেও কেভিন পিটারসেনকে সবচেয়ে আন্ডাররেটেড ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে ধরা হয়।

পিটারসেনের ব্যাটিং স্টাইল কিংবা খেলার ধরন ইংল্যান্ডের স্বভাবজাত খেলার সাথে কখনোই মিল ছিলো না। ইংলিশরা টেকনিকের প্রতি বরাবরই জোর দিতো, সেই সাথে ট্রেডিশনাল ভাবে খেলতো। কেভিন পিটারসেন সেই ধারা কিংবা ঐতিহ্যকে ভেঙ্গে নিজের মতো খেলা শুরু করেন। তার ব্যাটিং স্টাইল নিয়ে বেশ আলোচনা হলেও নিজের স্টাইলেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন এবং তিনি সফলও হন।

ক্রিকেটে বেশ কয়েকটি নামে তাঁকে ডাকা হতো। তবে জনপ্রিয় ছিলো কেপি। আবার তার মেজাজের কারণে তাকে ‘দ্য ইগো’ নাম দেওয়া হয়। এই ইগোর কারণেই ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) সাথে বনিবনা না হওয়ায় পরবর্তীতে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন তিনি। তাকে অনেকেই ইংল্যান্ড ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় মানেন! তবে ইগো আর পুরো ক্যারিয়ারেই বিতর্কের কারণে দলের মধ্যেই অনেকের চোখের বিষ ছিলেন তিনি।

২৭ জুন, ১৯৮০।

দক্ষিণ আফ্রিকার পিটারম্যারিটজবার্গে জন্ম নেন পিটারসেন। বাবা জেনি পিটারসেন দক্ষিণ আফ্রিকা ও মা পেনি পিটারসেন ইংল্যান্ডের হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক হওয়ার সাথে সাথে ইংল্যান্ডের নাগরিকও ছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে তখন কোটা পদ্ধতির কারণে তিনি আফ্রিকা ক্রিকেটে যোগ না দিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে ইংল্যান্ডেই পাড়ি জমান।

ছোটবেলা থেকে রাগবি খেলার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিলো পিটারসেনের। তবে কয়েকবার ইনজুরির কারণে ১১ বছর বয়সেই রাগবি খেলা ছেড়ে ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেন তিনি। রাগবি ছাড়লেও হকি, টেনিস এবং স্কশ খেলা চালিয়ে যান তিনি! যার কারণে তার ডান হাতের পেশির শক্তি আরো বেড়ে যায়।

১৯৯৭ সালে নাটালের বি দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন পিটারসেন। তখন মূলত তাকে লোয়ার অর্ডারে হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি একজন অফ স্পিনার হিসেবে খেলানো হতো। এরপর কোটা পদ্ধতির কারণে সেখান থেকে ২০০০ সালে তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। ইংল্যান্ডে তখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে হলে চার বছর কাউন্টি এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হতো।

একজন বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে ইংল্যান্ডের ক্লাব ক্যাঙ্ক সিসির হয়ে খেলা শুরু করেন তিনি। সেখানে তিনি দলকে বেশ কয়েক ম্যাচ জেতালেও বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হন তিনি। তিনি সাদা চামড়ার হলেও আফ্রিকান অ্যাকসেন্টের কারণে তাকে ঘিরে বাজে মন্তব্য করতেন তাঁর সতীর্থরা। ভাষাগত সমস্যার পাশাপাশি আর্থিক সমস্যাও একটা কারণ ছিলো তার। কোনো রকম একটা সিঙ্গেল রুম ভাড়া করে থাকতেন তিনি। একটা ক্লাব বারে চাকরি করতেন যাতে করে ক্রিকেটটা চালিয়ে যেতে পারেন!

সৌভাগ্যক্রমে একবার স্কুল ক্রিকেট ম্যাচে কোচ ক্লাইভ রিচি তাকে খেলতে দেখলো। এবং তার খেলায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ন্যটিংহাম ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলার আমন্ত্রণ জানালো। কোনো চিন্তাভাবনা না করেই সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন কেভিন। এরপর লাফব্রোর বিপক্ষে অভিষেকেই তিনি সেঞ্চুরি করেন! ৫৭.৯৫ গড়ে অভিষেক মৌসুমেই ১ হাজারেরও বেশি রান করেন তিনি। প্রথম মৌসুমেই একটি ডাবল সেঞ্চুরিও হাঁকান কেভিন।

২০০২ সালের দিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে তখন নিজের সেরা সময় পার করছিলেন কেভিন। টানা চার সেঞ্চুরির মাঝে করেছিলেন একটি ডাবল সেঞ্চুরি। নিজেকে বার বার প্রমাণ করে চলেছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে ভারত সফরে যেয়ে ১০০ এর উপরে এভারেজে ৫২৪ রান করেন তিনি! ন্যটিংহামশায়ারে দুর্দান্ত সময় কাটানোর পর হ্যাম্পাশায়ারের সাথে চুক্তি হয় তার। তবে একই সময়ে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ায় সেখানে খেলা হয়নি তার। ঘরোয়া ক্রিকেটে চার বছরের মাথায় ডাক পেয়ে গেলেন স্বপ্নের জাতীয় দলে।

একজন অলরাউন্ডার হিসেবে বেশ দুর্দান্ত ছিলেন কেভিন। সেই সাথে অসাধারণ সব ক্যাচ ধরে ফিল্ডিংয়েও বেশ সুনাম কামিয়েছিলেন তিনি। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ জিম্বাবুয়ে সফরে বিশ্রাম নেওয়ায় ডাক পান পিটারসেন। অভিষেক সিরিজেই ১০০+ এভারেজে ব্যাট করেন তিনি! তার দুর্দান্ত ফর্ম পরের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও ধরে রাখেন তিনি।

তখন দক্ষিণ আফ্রিকানরা তার ব্যাপক সমালোচনা শুরু করেন। এবং তাঁকে দেশদ্রোহী হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়। সেখানে ৬৯ বলে সেঞ্চুরি করে ওয়ানডেতে দ্রুততম ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তিনি। ৪-১ এ সেই সিরিজে ইংলিশরা হারলেও কেভিন পান সিরিজ সেরার পুরস্কার।

এরপর ২০০৫ সালেও তিনি ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে থাকেন। লর্ডসে অ্যাশেজ সিরিজে তার টেস্ট অভিষেক হয়। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একই সিরিজে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তার। এবং অভিষেক ম্যাচের দুই ইনিংসেই দুইটি ফিফটি করেন তিনি। এরপর ওভালে সিরিজের শেষ টেস্টে তিনি মেইডেন সেঞ্চুরির দেখা পান!

ওই সিরিজে ছয়টি ক্যাচ মিস করে অবশ্য ফিল্ডিংয়ে সমালোচনার জন্মও দিয়েছিলেন তিনি। তবে উপমহাদেশে তিনি বার বার ব্যর্থ হচ্ছিলেন। পাকিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে সিরিজে তিনি ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন। কেভিন পিটারসেন তার প্রথম ২১ ম্যাচেই ১ হাজার রান পূর্ণ করেন ওয়ানডেতে এবং ভিভ রিচার্ডসের পাশে নাম লেখান।

এরপর শ্রীলঙ্কার ইংল্যান্ড সফরের সিরিজে কেভিন পিটারসেন একা হাতে ম্যাচ জেতাতে থাকেন। লংকান স্পিনারদের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাট করে সেঞ্চুরিও করেন। নিজের প্রথম ১২ তম টেস্ট খেলার সময় তিনি ১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। টানা তিন ইনিংসে সেঞ্চুরি করে গ্রাহাম গুচকে টপকে দ্বিতীয় ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে এমন কীর্তি গড়েন! সিরিজ শেষে সিরিজ সেরার পুরস্কার জয়ের পাশাপাশি আইসিসির সেরা দশ ব্যাটিং র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নেন।

এরপর ২০০৬-০৭ অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংলিশরা। ইংলিশদের জন্য সেবার বেশ বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। বিশ্বের বেশ কয়েকটি বড় মিডিয়া সেবার কেভিন পিটারসেন কে সেই সিরিজের ‘মোস্ট হাইপড ক্রিকেটার’ হিসেবে আখ্যা দেন। ওই সিরিজে ৫০ এর বেশি গড়ে রান করেন পিটারসেন এবং অ্যাডিলেডে ১৫৮ রানের একটু দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন! যেটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয়বার ১৫৮ রানে আউট হওয়া ইনিংস। ৫-০ তে ইংলিশরা সিরিজ হারলেও পিটারসেন ইংলিশদের হয়ে সেরা পারফর্মার ছিলেন।

২০০৭ বিশ্বকাপে আইসিসি ওয়ানডে ব্যাটিং র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর ব্যাটসম্যান নির্বাচিত হন কেভিন পিটারসেন। সেই টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও নিউজিল্যান্ড-কেনিয়ার বিপক্ষে ফিফটি করেন তিনি। তবে ইংলিশরা সেবার সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়। ৫৫.৫ গড়ে ৪৪৪ রান করেছিলেন পিটারসেন!

৫১ ওয়ানডে ম্যাচে ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার পথে এশিয়ান ব্র‍্যাডম্যান খ্যাত জহির আব্বাসকে টপকে যান। এরপর ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংলিশদের হয়ে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি! তবে পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ব্যাট হাতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। নেপিয়ারে সেঞ্চুরি ছাড়া ব্যাট হাতে ব্যর্থ একটা সিরিজ পার করেন কেপি।

একই বছর ২০০৮ সালে পল কলিংউড চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয় এবং তখন মাইকেল ভন সাময়িক সময়ের জন্য টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে ভন এবং কলিংউড দুইজনেই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এবং ওয়ানডে ও টেস্টে নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান কেভিন পিটারসেন। অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম সিরিজ ছিলো নিজ জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।

অধিনায়ক হিসেবে নিজের অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এবং ৪-০তে সিরিজ জিতে নেয় ইংলিশরা। একই বছর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর পিটারসেন তখনকার ইংলিশ কোচ পিটার মুরের সাথে ঝামেলায় জড়ান! পরবর্তীতে ২০০৯ এর শুরুতেই পিটা মুরেকে কোচ থেকে বাদ দিয়ে কেভিন পিটারসেনকেও চাপ দিয়ে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। তবে ব্যাট হাতে তখনো রান বন্যায় ভাসাতে থাকেন কেপি!

২০১০ আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ৪৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলের প্রথম শিরোপা জয়ে অবদান রাখেন। ১৩৭ স্ট্রাইক রেটে ওই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন পিটারসেন।

২০১১ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকলেও অনুশীলনে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যান পুরো টুর্নামেন্ট থেকেই! তার বদলি দলে ডাক পান ইয়ন মরগ্যান। পরবর্তীতে ইনজুরি কাটিয়ে ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজে দলে ফিরেন তিনি। লর্ডসে টেস্টে দূর্দান্ত এক ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি! সেই ডাবল সেঞ্চুরিতে টেস্ট ক্রিকেটে ছয় হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন কেপি।

এরপর ২০১২ সালে তিনি সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটকে বিদায় জানান! তবে টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যান তিনি। প্রথম ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে ২৩ টেস্ট সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। ২০১৩-১৪ অ্যাশেজ সিরিজে মাত্র ২৯ গড়ে রান করেন তিনি! ৫-০ তে সেবার ইংলিশরা পরাজিত হলে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) থেকে তাকে অবসর নিতে বলা হয়! এবং জানানো হয় ভবিষ্যতে তাকে আর দলে বিবেচনা করবে না বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেই ২৮ বছর পর ভারতের মাটিতে সিরিজ জেতে ইংলিশরা। টেস্টে ১০৪ ম্যাচে ৪৭ গড়ে ২৩ সেঞ্চুরি আর ৩৫ ফিফটিতে ৮১৮১ রান করেন তিনি। ওয়ানডেতে ১৩৬ ম্যাচে প্রায় ৪১ গড়ে ৪৪৪০ রান করেন, আছে ৯ সেঞ্চুরি ও ২৫ ফিফটি। টি-টোয়েন্টতে ৩৭ ম্যাচে প্রায় ৩৮ গড়ে ৭ ফিফটিতে ১১৭৬ রান করেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৭৭ ম্যাচে প্রায় ১৪ হাজারের কাছাকাছি রান করেন পিটারসেন। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬৭০ ম্যাচে প্রায় ৩০ হাজার রানের মালিক তিনি! ৬৮ সেঞ্চুরি ছাড়াও করেছেন ১৫২টি ফিফটি। বল হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়েছেন ১৮ উইকেট আর ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়েছেন ১৩১ উইকেট।

এছাড়া পিটারসেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) সহ পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), বিগ ব্যাশ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) মতো বেশ কয়েকটি ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগে খেলেছেন।

১০ বছরের বর্নাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি নিজেকে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রমাণ করলেও ক্যারিয়ারে বহুবার তিনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। নিজের ইগো বজায় রাখতে অনেকটা আগেভাগেই ক্যারিয়ার শেষ করেন তিনি। বিতর্ক পাশ কাটিয়েও তিনি ব্যাট হাতে সমানতালে রানের পাহাড় গড়েছেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের রুপ বদলে দেওয়া এই খেলোয়াড়ের ইংলিশ ক্রিকেটে অবদান আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁকে নিয়ে ইংল্যান্ড গর্ব করতে পারে, দক্ষিণ আফ্রিকা করতে পারে আক্ষেপ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link