একজন অলরাউন্ডারকে মাপার সবচেয়ে জুতসই মাপকাঠি কি হতে পারে? ব্যাপারটা নির্ধারণ করা সহজ নয়। এখনো অবধি সবচেয়ে জনপ্রিয় মাপকাঠি হলো ব্যাটিং ও বোলিং গড়ের আঙ্কিক তফাৎ। কিন্তু সেই মাপকাঠি কি সব উত্তর দেয়? জানি না।
তাই আমি নিজের মতো করে একটা অনুশীলন করার চেষ্টা করেছি অলরাউন্ডারদের নিয়ে। আজ সেই অনুশীলনের প্রথম পর্ব। আগেই বলে রাখি, আমি অল-রাউন্ডার নির্বাচন করার সময় শুধু মাত্র তাঁদেরই বেছে নিয়েছি যাঁদের কমপক্ষে ২০০০ রান ও ১০০ উইকেট রয়েছে। এই অনুযায়ী, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে খেলোয়াড় দাঁড়াচ্ছেন ৩১ জন। এই পরিসংখ্যানের সময়সীমা গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর অবধি।
আজ প্রথম পর্বে দেখে নেবো, নিজেদের দলের ব্যাটিংয়ে এই অলরাউন্ডারদের অবদান ঠিক কতটা। এই অনুশীলনের জন্যে আমি তালিকাভুক্ত অলরাউন্ডারদের, তাঁদের ক্রিকেট জীবনে, তাঁরা দলে থাকাকালীন যে কটি ম্যাচ হয়েছিল সেই ম্যাচ গুলি মিলিয়ে দলের রানের কত শতাংশ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়টি করেছেন তা বার করেছি। এছাড়া গোটা দলের ব্যাটিং গড়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়টির ব্যাটিং গড় বিয়োগ করে যা দাঁড়াচ্ছে তা বার করেছি।
বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও এই অনুশীলন করেছি, তবে তা কিঞ্চিৎ আলাদা। সে বিষয়ে পরবর্তী পর্বে আসছি। আগে দেখে নেওয়া যাক ব্যাটিং এর ক্ষেত্রে এর ফলাফল কি দাঁড়াচ্ছে। একটা উদাহরণ দেই, ধরুন সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়টি হলেন এন্ড্রিউ ফ্লিন্টফ। তিনি তাঁর ক্রিকেট জীবনে ৭৯ টেস্টে ৩১.৭৭ গড়ে ৩৮৪৫ রান করেছেন।
ঠিক সেই ৭৯ টেস্টে, ইংল্যান্ডের গোটা দল করেছে ৩৮৯৮৯ রান, এবং দলের মিলিত গড় ৩১.৯৩। সেক্ষেত্রে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ তাঁর দলের রানের ৯.৮৬% রান করেছেন এবং তাঁর নিজের গড়ের সাথে দলের মিলিত গড়ের তফাৎ দাঁড়াচ্ছে ঋণাত্মক .১৬%। অর্থাৎ ফ্লিনটফ তাঁর দলের মিলিত গড়ের চেয়ে কম ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন।
তা এই তালিকা অনুযায়ী, দলের মিলিত রানের মধ্যে নিজের রানের অবদানের শতাংশের বিচারে প্রথম পাঁচ জন হলেন –
ফরম্যাট হলো: নিজের রান/দলগত রান (নিজের রানের শতাংশ)
- স্যার গ্যারি সোবার্স – ৮০৩২/৪৯৬৬৬ (১৬.১৭%)
- জ্যাক ক্যালিস – ১৩২৮৯/৮৩৪২৩ (১৫.৯৩%)
- সাকিব আল হাসান – ৩৮৬২/২৬৩৪৬ (১৪.৬৬%)
- টনি গ্রেগ – ৩৫৯৯/২৬৫৭৫ (১৩.৫৪%)
- ট্রেভর গোডার্ড – ২৫১৬/১৯৩৫৭ (১৩.০০%)
এবার যদি দলের সাথে নিজের ব্যাটিং গড়ের বিয়োগফল দেখি, সেখানে প্রথম পাঁচ জন হলেন –
ফরম্যাট হলো: নিজের গড়/দলগত গড় (বিয়োগফল)
- স্যার গ্যারি সোবার্স – ৫৭.৭৮/৩৪.৫৬ (২৩.২২)
- জ্যাক ক্যালিস – ৫৫.৩৭/৩৫.৯৪ (১৯.৪৩)
- সাকিব আল হাসান – ৩৯.৪/২৬.৩৭ (১৩.০৩)
- টনি গ্রেগ – ৪০.৪৩/২৯.৫৯ (১০.৮৪)
- কার্ল হুপার – ৩৬.৪৬/২৭.৭৩ (৮.৭৩)
আশ্চর্য্যজনক ভাবে দুই তালিকাতেই প্রথম চারজন এক। এঁদের মধ্যে সোবার্স ও ক্যালিস যে দলে খেলতেন দুই দলেরই গড় বেশ ভালো। এবং তার কারণ, ক্যালিস ও সোবার্সের নিজেদের ব্যাটিং গড়। এবার দেখে নেবো এই তালিকায় একদম নিচের পাঁচ জন কারা।
ফরম্যাট হলো: নিজের রান /দলগত রান (নিজের রানের শতাংশ)
- অনিল কুম্বলে – ২৫০৬/৬৪৮০০ (৩.৮৭%)
- হরভজন সিং – ২২২৪/৫৩৬৯০ (৪.১৪%)
- শেন ওয়ার্ন – ৩১৫৪/৭৫৬৫০ (৪.১৭%)
- স্টুয়ার্ট ব্রড -৩৩৩৫/৭৩১১৬ (৪.৫৬%)
- জনসন – ২০৬৫/৪১৭৭৮ (৪.৯৪%)
গড়ের তফাতে শেষ পাঁচজন একই রয়েছেন, শুধু ক্রমিক সংখ্যা বদলে গেছে।
ফরম্যাট হলো: নিজের গড়/দলগত গড় (বিয়োগফল)
- শেন ওয়ার্ন – ১৭,৩২/৩৬.৩৩ (-১৯.০১)
- হরভজন সিং – ১৮.২২/৩৪.৯৩ (-১৬.৭১)
- অনিল কুম্বলে- ১৭.৭৭/৩৪.০২ (-১৬.২৫)
- মিশেল জনসন- ২২.২/৩৬.৫১ (-১৪.৩১)
- স্টুয়ার্ট ব্রড- ১৯.০৫/৩২.৮০ (-১৩.৭৫)
এই লেখার একেবারে শেষে দেখে নেবো, বিগ ফোর সমসাময়িক অলরাউন্ডার দের পরিসংখ্যান।
নিজের রান/দলগত রান (শতাংশে অবদান), নিজের গড়/দলগত গড় (বিয়োগফল)
- কপিল দেব – ৫২৪৮/৫৮৯০৬(৮.৯১%), ৩১.০৫/৩৩.৩৩ (-২.২৮)
- ইমরান খান – ৩৮০৭/৩৯১৯৮(৯.৭১%), ৩৭.৬৯/৩৩.৪১ (৪.২৮)
- রিচার্ড হ্যাডলি-৩১২৪/৩৫২৭৫(৮.৮৬%), ২৭.১৬/২৬.৬ (.৫৬)
- ইয়ান বোথাম-৫২০০/৪৪৫৯৪ (১১.৬৬%), ৩৩.৫৪/২৮.৩৪ (৫.২)
একমাত্র কপিলের নিজের গড়, দলগত গড়ের চেয়ে কম। কিন্তু তিনি যে হাই-রিস্ক ব্যাটিং করতেন, এরকমটা খুব আশ্চর্য্যের নয়। হ্যাডলি অন্যদের তুলনায় ঠিক কতটা দুর্বল দলে খেলতেন সেটাও এই পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে।
আমরা যখন অল-রাউন্ডারদের পরিশ্রম নিয়ে আলোচনা করবো, তখন হ্যাডলির এই ব্যাপারটা আরো আলোচনা করা যাবে। ব্যাটিং গড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ইমরান, এবং এটাও আশ্চর্য্যের না। ব্যাটসম্যান হিসাবেই তিনি শেষের দিকে কয়েকটি টেস্ট খেলেন এবং এঁদের মধ্যে ব্যাটসম্যান হিসাবে তিনিই সেরা। সবশেষে বলি বোথামের কথা। তিনিও যে দলে খেলতেন, তার ব্যাটিং দারুন কিছু নয়। দলগত গড় মাত্র ২৮.৩৪।