কাকতালীয় সব কাণ্ড

ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। আর এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই কাকতালীয় ভাবে অনেক কিছুই ঘটে যা কিনা অবিশ্বাস্য। ক্রিকেটে প্রতিনিয়ত রেকর্ড ভাঙা গড়ার মাঝে বেশ কিছু কাকতালীয় ঘটনা দেখা যায়। অদ্ভুতভাবেই আমাদের জীবনে অনেক কিছু অন্য কোনো বিষয় কিংবা ব্যক্তির সাথে মিলে যায়। ক্রিকেট মাঠেও এমনি অনেক ঘটনা আছে।

এই কাকতালীয় ঘটনা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। ক্রিকেট মাঠের সেরা দশ কাকতালীয় ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

  • তিন ডাবল সেঞ্চুরি ও জয়ের কাকতাল

লিটন মাস্টার খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দ্র শেবাগ এবং হিটম্যান খ্যাত রোহিত শর্মা এই তিনজন ব্যাটসম্যান ওয়ানডেতে ভারতের হয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবার এই কীর্তি গড়েন শচিন। সেওয়াগ ২০১১ সালে এবং রোহিত শর্মা ২০১৩ সালে ডাবল সেঞ্চুরি করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। রোহিত অবশ্য পরে আরো দুইবার এই রেকর্ড গড়েন! যার মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬৪ রান করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন ওয়ানডেতে।

অবাক করা ব্যাপার হলো- শচিন, সেওয়াগ, রোহিতের (দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি) তিন ডাবল সেঞ্চুরির ম্যাচেই ভার‍ত জয় পেয়েছে ১৫৩ রানে!

  • মাইকেল ক্লার্ক + অ্যালিস্টেয়ার কুক = শচীন টেন্ডুলকার

টাইটেল দেখে আপনার মনে হতে পারে এটা কোনো অংক। তবে আদতে সেটা নয়। মাইকেল ক্লার্ক ও সাবেক ইংলিশ ওপেনার অ্যালিস্টেয়ার কুকের ১০০ টেস্ট শেষে দুইজনের রান ছিলো যথাক্রমে ৭৯৬৪ ও ৭৯৫৫। যার মধ্যে ক্লার্কের ২৬ আর কুকের ছিলো ২৫ সেঞ্চুরি। এই দুইজনের ১০০ টেস্টের পরিসংখ্যান যোগ করলে দেখা যায় দু’জনে মিলে ২০০ টেস্টে ১৫৯১৯ রানবার ৫১ টি সেঞ্চুরি করেছেন। যা কিনা কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকারের ২০০ টেস্টের পরিসংখ্যানের সাথে প্রায় এক! শচীন ২০০ টেস্টে ১৫৯২১ রান আর ৫১ টি সেঞ্চুরি করেছেন।

  • ধোনির প্রথম ওয়ানডে ও টেস্ট সেঞ্চুরি

সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ২০০৫ সালে ওয়ানডেতে মেইডেন সেঞ্চুরির দিনে ১৪৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তার এক বছর পর তার মেইডেন সেঞ্চুরির দিনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফয়সালাবাদে ১৪৮ রানেরই ইনিংস খেলেন আবারো! অবাক করা ব্যাপার হলো তার খেলা দুই ফরম্যাটের ১৪৮ রানের ইনিংস দু’টিই পাকিস্তানের বিপক্ষে! এবং দুই বারই তিনি ওই ফরম্যাটের ৫ম ইনিংসে যেয়ে একই রানের ইনিংস খেলেছেন।

  • এক নম্বরের সিরিজ

১১/১১/১১ – এই তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার ১১১ রান প্রয়োজন ছিলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জিততে। কেপটাউনে ঠিক সেই সময় ঘড়িতে ১১ টা ১১ বাজছিলো।

তখন লেখা উঠছিলো ছিলো ঠিক এমন – ১১:১১ ১১/১১/১১ টু উইন ১১১

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ২৩৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে গ্রায়েম স্মিথ ও হাশিম আমলার সেঞ্চুরিতে সহজ জয় পায় প্রোটিয়ারা। তার আগে সেই অলৌকিক সমীকরণ দেখেছিলো ক্রিকেট বিশ্ব।

  • ১৮৩ রান এবং ভবিষ্যত অধিনায়ক

সৌরভ গাঙ্গুলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং বিরাট কোহলির মধ্যে একটা ব্যাপারে বেশ মিল আছে। তাদের তিনজনই ওয়ানডে ক্রিকেটে তাদের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ১৮৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। এবং ১৮৩ রানের ইনিংস খেলার পর প্রত্যেকেই পরবর্তীতে ভারতের অধিনায়ক নির্বাচিত হন।

সৌরভ গাঙ্গুলি ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮৩ রানের ইনিংস খেলেন। পরের বছরই তিনি ভারতের অধিনায়ক হন। মহেন্দ্র সিং ধোনি ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮৩ রানের ইনিংস খেলেন এবং ২০০৭ সালে তিনি ভারতের অধিনায়ক হন। সবশেষ ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিরাট কোহলি ১৮৩ রানের ইনিংস খেলেন এবং ২০১৭ সালে ভারতীয় দলে অধিনায়কের দায়িত্ব পান।

  • রাহুল দ্রাবিড় এবং চেতেশ্বর পুজারার টেস্ট মাইলস্টোন

ক্রিজে আঠার মতো লেপ্টে থাকার জন্য রাহুল দ্রাবিড় এবং তার পরবর্তীতে বেশ নাম কামিয়েছেন চেতেশ্বর পুজারাও। তবে এই একটা দিক ছাড়াও দু’জনের মাঝে রয়েছে আরো এক ব্যাপারে দারুন মিল। দ্রাবিড় এবং পুজারা দুইজনেই ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন ৬৭ তম ইনিংসে! ৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন ৮৭ তম ইনিংসে! সবশেষ ৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন ১০৮ তম ইনিংসে যেয়ে।

  • মাইক হাসি ও ক্যাটিস

এক সময়ে মাইক হাসি ও সায়মন ক্যাটিচের টেস্ট রান ছিলো একই!

সাবেক দুই অজি ব্যাটসম্যান সায়মন ক্যাটিচ ও মাইক হাসি তাদের ৫২ তম টেস্ট শেষে তাদের দু’জনেরই সংগ্রহ ছিলো ৩৯৮১ রান! অবশ্য পরবর্তীতে আর বেশিদূর যেতে পারেননি ক্যাটিচ। ৫৬ টেস্টে ৪১৮৮ রান নিয়েই ক্যারিয়ার শেষ করেন তিনি। অপরদিকে, ৭৯ টেস্টে ৫১.৫৩ গড়ে ৬২৩৫ রান নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন মাইক হাসি। যার মধ্যে ছিলো ২৯ টা ফিফটি আর ১৯ টি সেঞ্চুরি।

  • নভেম্বর ২৭ এবং ৩০০ উইকেটের মাইলফলক

১৯৮১ সালের ২৭ নভেম্বর। সাবেক অজি স্পিডস্টার ডেনিস লিলি দ্রুততম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট শিকার করেন। মাত্র ৫৬ টেস্টেই এই কীর্তি গড়েন তিনি। তার ঠিক ৩৬ বছর পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন এই রেকর্ড ভেঙ্গে দেন। ৫৪ টেস্টে ৩০০ উইকেট শিকার করে নতুন রেকর্ড গড়েন অশ্বিন।

  • টনি গ্রেগ এবং তার ভাই ইয়ান গ্রেগের অভিষেক বোলিং

সাবেক ইংলিশ অলরাউন্ডার এবং কিংবদন্তি কমেন্টেটর টনি গ্রেগ ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষিক্ত হন। এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানে ৪ উইকেট নেন! যার ফলে ইংলিশরা ৯৮ রানে জয় পায়। ১০ বছর পর তার ছোট ভাই ইয়ান গ্রেগ পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে অভিষিক্ত হন। এবং ওই টেস্টে সে ৫৩ রানেই ৪ উইকেট শিকার করেন! ঠিক তার বড় ভাইর মতোই!

  • শচিন টেন্ডুলকার এবং বিরাট কোহলি

শচিন এবং বিরাট দুইজনেই তাদের ১ হাজারতম আন্তর্জাতিক রান করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। দু’জনেই ইনিংসের ১৯ তম ওভারে সেঞ্চুরি করার মাধ্যমে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন। শুধু তাই নয় দু’জনেই তাদের ২৬ বছর বয়সে এমআরএফ ব্যাট ব্যবহার করা শুরু করে।

দু’জনেই তাদের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। দু’জনেই তাদের ৫৮তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে! এবং দু’জনেই সেই ইনিংসে ১০৩ রান করে করেন। সেই দুই টেস্টেই ভার‍ত জয় পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link