মাত্র দুই ম্যাচের দূরত্ব আর!

কথায় আছে কোপা আমেরিকার মূল উত্তেজনা শুরু হয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। গ্রুপ পর্বের ফুটবল শেষ হতে না হতেই যেন খেলায় ফিরেছে কোপা আমেরিকা। গ্রুপ পর্বে ইউরো আর কোপার তুলনা নিয়ে কম হাস্যরস হয়নি। কোয়ার্টার আসতে না আসতেই ফর্মে ফিরেছে কোপা। মেসি আর ওসপিনা ম্যাজিকে সেমি নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা আর কলম্বিয়া।

প্রথম ম্যাচে রেকর্ড গড়তে নেমেছিলেন ডেভিড ওসপিনা। কলম্বিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড এতকাল ছিল কার্লোস ভালদেরামার। ঝাঁকড়া চুলের সেই লিজেন্ডকে কেই বা ভুলতে পারে? তাকে কাটানোর সিনটা নিজের মতন করে রাঙিয়েছেন ওসপিনা। কলম্বিয়াকে একাই টেনে নিয়ে গিয়েছেন সেমি ফাইনালে। পুরো ম্যাচটা হয়েছিল ওসপিনাময়।

পুরো ম্যাচে একের পর এক আক্রমণ করে গিয়েছেন সুয়ারেজ-কাভানি। কিন্তু গোলের দেখা পাননি। পুরো কোপা জুড়েই গোলের হাহকার তাদের। ক্লাবের ফর্মটা জাতীয় দলে টেনে আনতে পারেননি দুজনের কেউই। যে কারণে একের পর এক আক্রমণই হয়েছে, ফলাফল আসেনি।

আসেনি থেকে আসতে দেননি বললে বেশি ভালো হয়। একাই দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডেভিড ওসপিনা। ৩২ বছর বয়সেও দৌন্দর্ন্ড প্রতাপে আটকে যাচ্ছেন প্রতিটি শট। ৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর খেলা গড়ায় পেনাল্টিতে। সেখানে আর আটকাতে পারেননি সুয়ারেজ-কাভাইনিকে। তাই বলে তার হিরো হওয়া কেউ থামাতে পারেনি।

উরুগুয়ের হয়ে ঐ দুজনেই ওসপিনাকে বধ করতে পেরেছেন্‌ আর বাকি দুটো শটই দূর্দান্তভাবে থামিয়ে দিয়েছেন তিনি। কলম্বিয়ার খেলোয়াড়েরা ভুল করেননি। পেনাল্টি জিতেই সেমিতে পা রেখেছিল তারা। কিন্তু কোপার সৌন্দর্য্য তখনও দেখা বাকি।

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠা প্রতিটি মানুষের ঘুমকাতুরে চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন একজন। নামটা নিশ্চয় নতুন করে বলতে হবে না। লোকটার নাম লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। আর্জেন্টিনা মানেই মেসি, সে ধারনা থেকে সরে আসার চেষ্টা কম করেননি নতুন কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি।

মেসি নির্ভরতা কমাতে চান, আর্জেন্টিনাকে আরো টিম-প্লে নির্ভর করতে চান; সবকিছুই ঠিক আছে। কিন্তু যেদিন লিওনেল মেসি চান, সেদিন লিওনেল মেসিকে আটকানোর কি কোনো উপায় আছে? এতদিন ধরে চেষ্টা করে প্রতিপক্ষই পারেনি, স্কালোনি আর কীভাবে পারবেন?

ম্যাচের শুরু থেকে শেষ, পুরোটা জুড়েই ছিল অদ্ভুত মেসিময়তা। সে রেশ কাটেনি ম্যাচ শেষেও। মেসিকে ছাড়া ইকুয়েডরকে হারাতে খুব একটা কাঠ-খড় পোড়াতে হতো না আর্জেন্টিনাকে, কিন্তু সে দায়িত্ব বরাবরের মতন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন লিও।

শুরুটা লিওকে দিয়েই হতে পারতো, ২২ মিনিটের মাথায় গোলরক্ষককে একা পেয়েও যে মিসটা করলেন, তা অন্তত লিওনেল মেসি নামটার সাথে যায় না। কিন্তু মেসির পরিকল্পনা তো সেখানেই থেমে নেই, সেখান থেকে সবেমাত্র শুরু।

৪০ মিনিটেই ধরুন না, ডি-বক্সের ভেতরে গোলরক্ষক এগিয়ে এসেছে, পোস্ট ফাঁকা। এমন জায়গা থেকে বলে শট নেবেন না এমন কখনও সম্ভব? সে শট নিয়ে যদি মিসও করতেন, লোকে বিন্দুমাত্র আপত্তি করতেন না। কিন্তু মেসি বলে কথা, তার জহুরীর চোখ খুঁজে নিলো রদ্রিগো দি পলকে। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে নিজের মনের মতন ফিনিশিং টাচ দিলেন ডি পল।

৮৪ মিনিটের গোলে অবশ্য এতকিছু ছিল না। ইকুয়েডরের ডিফেন্ডারের ভুলের সুবাদে সহজেই বল পেয়ে যান মেসি, বক্সের অন্যপ্রান্তে থাকা মার্তিনেজকে দেওয়া বলে আর কোনো ভুল হয়নি।

কিন্তু সবকিছু থাকার পরেও কী যেন একটা ছিল না। মেসি ম্যাজিক, মেসি ম্যাজিক বলা যাচ্ছে, কিন্তু গোল ছাড়া যেন মেসি ম্যাজিক সম্পন্ন হচ্ছে না। মেসিও যেন সে চেষ্টাতেই ছিলেন। শেষ মিনিটে সে সুযোগও আসে। ডি মারিয়াকে ফাউল করে হিনচাপি। প্রথমে হলুদ কার্ড দিলেও পরে ভিএআর দেখে তা পরিবর্তন করে লাল কার্ড আর ফ্রি কিক দেন রেফারি। সেটাই দরকার ছিল মেসির। দূর্দান্ত ফ্রি কিক থামানোর সুযোগ হয়নি গোলরক্ষকের। দিনের শেষটা হয়ে রইল মেসির গোল দিয়ে মেসিময়।

ফ্রি কিক গোল করে পেলেকে ছোয়ার ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন মেসি। কে জানে পরবর্তী ম্যাচেই না তাকে ছোঁয়া হয়ে যায় তার। তা নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাচ্ছেন না মেসি, তার লক্ষ্য আর্জেন্টিনার বহু প্রতীক্ষিত শিরোপা জেতা। আর তা না জেতা পর্যন্ত আর কোনোদিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন না তিনি। কে জানে সে লক্ষ্য এবারই পূরণ করে ফেলেন কী না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link