কেমন হবে একাদশ? – যেকোনো ম্যাচের আগেই আসা খুব কমন একটা প্রশ্ন। যেকোনো সময়ের মত এবারও ছিল, হোক প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, চমকে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল।
তাই, বরাবরের মত এবারও একটা অনুমান ছিল, কিন্তু সেই অনুমানে ভরসা ছিল না।মচমকে গেলাম যথারীতি। শুধু চমকে যাওয়া নয়, রীতিমত পাহাড় থেকে পড়লাম।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছে কার্য্যত নয়জন ব্যাটসম্যান নিয়ে। হ্যাঁ, মেহেদী হাসান মিরাজকে ধরে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ব্যাট করবেন সাত নম্বরে, লিটন দাস খেলবেন আট নম্বরে। টিম ম্যানেজমেন্ট কতটা পলায়নপর হলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে! আর হ্যাঁ, প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে যারা নিজেদের শীর্ষ দুই ব্যাটসম্যান ছাড়া খেলতে নেমেছে।
এবার আসি বোলিং আক্রমণে। দুই পেসার, দুই স্পিনার দলে। তাসকিন আহমেদ আছেন, সাথে এবাদত হোসেন। সেই এবাদত, যিনি সাত টেস্টে মাত্র সাত উইকেট পেয়েছেন। গড় ৯০-এর ওপরে। অথচ, স্কোয়াডে আবু জায়েদ রাহি এবং শরিফুল ইসলামের মত পেসার রয়েছেন।
যে রকম উইকেটে খেলা হচ্ছে, সেখানে তিন পেসার নিয়ে খেলাটাই যুক্তিসঙ্গত। তো সেই তিন পেসার খেলালেও তাসকিনের সাথে একাদশে থাকা উচিৎ শরিফুল ও রাহির। কোনো ভাবেই এবাদত নন। সেখানে টিম ম্যানেজমেন্ট কি বুঝে এবাদতের ওপর ভরসা রাখলো সেটা তাঁরাই ভাল বলতে পারবেন।
এবার স্পিন ডিপার্টমেন্টের কি হাল? না, সেখানে বড় কোনো সমস্যা নেই। সাকিব আল হাসানের সাথে আছেন মিরাজ। সমস্যা হল – বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার বলতে কেউ নেই। চার বোলার নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ।
তো, যদি পঞ্চম বোলার প্রয়োজন হয়, বাংলাদেশে হাতে কি কি বিকল্প আছে? হ্যাঁ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কথা বলতে পারেন কেউ কেউ। রিয়াদ ২০১৪ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত এক ইনিংসে সর্বোচ্চ করেছেন ১১ ওভার, একবারই।
যাই হোক, রিয়াদ তো মূলত ‘লোয়ার মিডল অর্ডার’ ব্যাটসম্যান হিসেবে জায়গা পেয়েছেন একাদশে। ১৬ মাস আগে যখন তাঁকে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ সাদা পোশাক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তখন তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারটাকে একেবারে শেষই ধরে নেওয়া হয়েছিল। হ্যাঁ, সেখান থেকেও ফেরা সম্ভব।
রিয়াদের ফেরাটা ‘জাস্টিফাইড’ হত যদি তিনি জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) বা বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) মত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আসরগুলোতে প্রচুর রান করতেন। না, রিয়াদ সেটা করেননি। বরং, সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও তাঁর ফিটনেস নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এই অবস্থায় তাঁকে টেস্ট স্কোয়াডে হঠাৎ করে নিয়ে গিয়ে একাদশে নামিয়ে ফেলার পেছনে যুক্তি কি?
স্রেফ ব্যাটিং অর্ডারটা লম্বা করা? তামিম ইকবালের অভিজ্ঞতার ঘাটতি পোষানো? তামিম ওপেনার, সেখানে রিয়াদকে আপনারা খেলাবেন ছয় থেকে আট নম্বরের কোনো এক জায়গায়। কিভাবে তামিমের ঘাটতি রিয়াদ পোষাবেন? এটা কেবল নিকৃষ্টমানের চিন্তাই নয়, এটা আমাদের ক্রিকেট সিস্টেমের জন্যও বাজে একটা বিজ্ঞাপন।
একাদশের বাইরে থাকাদের বা জাতীয় দলের বাইরে থাকাদের কিংবা যারা জাতীয় দলে আসার অপেক্ষায় আছেন, তাদের কাছে এটা ভুল একটা বার্তা দেয়। তাঁরা বুঝেন, স্রেফ পারফরম করলেই হয় না, নামের একটা ওজনও থাকতে হয়। এই অবস্থায়, তুষার ইমরান বা নাঈম ইসলামের মত ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের এক কালের বড় পারফরমাররা যদি জিজ্ঞেস করেন, ‘কেন আমরা একটা সুযোগ পেলাম না?’ – তাহলে তাঁদের চোখে চোখ রেখে উত্তর দেওয়ার সৎ সাহস আছে তো বিসিবির?
কিংবা, এই ডাগ আউটেই বসে থাকা ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি যদি, প্রশ্ন করেন, ‘কেন আমি দুই বছর ধরে পানি টানছি? কেন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ডিং করছি?’, অথবা রাহি যদি প্রশ্ন করেন, ‘পারফরম করেও কেন আমি একাদশের বাইরে? – কি জবাব দেবেন?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অবশ্য জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করে না। বিসিবি এখন নিজেই দেশের ক্রিকেটের ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, সেখানে জবাবদিহিতার কোনো জায়গা নেই। কিন্তু, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ভুলে গেছে তাঁর মূল শক্তির জায়গা।
তাঁর শক্তি যে ক্রিকেট দল, দলের পারফরম্যান্স। এমন পলায়নপর দল দিয়ে পারফরম্যান্স আসবেই বা কি করে। টেস্ট মানসিকতার খেলা, সাহসের খেলা, সাহস দেখানোর খেলা। যে একাদশ মাঠে নামার আগেই হেরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় – সেই একাদশ মাঠের লড়াইয়ে কি আদৌ জেতার সাহস দেখাবে!