ইটস কামিং টু রোম!

ফাইনালে ইতালির প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড কিংবা ডেনমার্ক। করোনার আঘাত সামলে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি ইতালির মানুষ। একমাত্র ফুটবলই পারে তাদের আনন্দে ভাসাতে, প্রিয়জন হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করতে। ১৯৬৮ সালের পুনরাবৃত্তি কি করতে পারবে রবার্তো মানচিনির নতুন ইতালি? ইজ ইট কামিং টু রোম?

এবারের ইউরোর নকআউট পর্বে সাদা জার্সি পরে যারাই খেলতে নামছিল তারাই নানা নাটকীয়তার পর ম্যাচ জিতে যাচ্ছিল। অবশেষে সাদা জার্সিধারীদের জয়রথ থামালো ইতালি, নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র থাকার পর টাইব্রেকারে স্পেনকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেলো আজ্জুরিরা।

ইউরোতে স্পেন-ইতালি দ্বৈরথ পুরনো নয়। দুই দল যতবার মুখোমুখি হয়েছে মাঠে উত্তাপ ছড়িয়েছে। স্পেনের ডাগআউটে লুইস এনরিকে নিজেও চাক্ষুস প্রমাণ, ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার টাসোত্তির কনুইয়ের আঘাতে নাক ভেঙে গিয়েছিল এনরিকের। সেবার ইতালির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁর।

এরপর স্পেন ইউরোর ফাইনালে ইতালিকে বিধ্বস্ত করলেও প্রতিশোধ নেয়া হয়নি এনরিকের। সেই বিশ্বকাপ খেলা হয়নি রবার্তো মানচিনির। কোচ আরিগো সাচ্চির সাথে ঝামেলার কারণে জাতীয় দলেই কখনো আর ডাক পাননি তিনিই। দুই দলের কোচের জন্যই ম্যাচটি ছিল তাই নিজেকে চেনানোর। সেই লড়াইয়ে ট্যাকটিক্সে এনরিকের জয় হলেও শেষ হাসিটা হেসেছেন মানচিনিই।

বাঁ প্রান্তে ইতালির অন্যতম সেরা তারকা স্পিনাৎসোলা ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন আগের ম্যাচেই। তার বদলে নামা এমারসন চেষ্টা করে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে কিন্তু কোথায় যেন খামতি রয়েই গিয়েছিল। তবে লরেঞ্জো ইনসিগনে ছিলেন বরাবরেই মতো অন্যবদ্য।

টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ থেকেই ছিলেন ইতালির ভরসা হয়ে, হতাশ করেননি এদিনও। দারুণ গতির পাশাপাশি ড্রিবলিংয়ের প্রদর্শনীতে আনন্দ দিয়েছেন দর্শকদের, ক্রাস ছড়িয়েছেন স্পেনের রক্ষণে। এমনিই তো আর ইতালির মানুষ তাকে ‘ইতালির মেসি’ বলে ডাকে না!

কিয়েসা পরিবারের সাথে ওয়েম্বলির সম্পর্ক বেশ পুরনো। বাবা এনরিকো চিয়েসার গোলের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন পুত্র ফেদেরিকো চিয়েসা দ্বিতীয় রাউন্ডেই। আজকে ছিল পিতাকে ছাড়িয়ে যাবার পালা, সেখানে সফল পুত্র এনরিকো। দারুণ এক গোলে স্রোতের বিপরীতেই ইতালিকে এগিয়ে দেন এই জুভেন্টাস তারকা।

অথচ, টুর্নামেন্টের শুরুতে একাদশে জায়গা পেতেন না, ওয়েম্বলির গোল তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে প্রথম একাদশ। তবে ইতালির আজকের নায়ক চিয়েসা নন, তিনি গোলরক্ষক আন্তোনিও ডোনারুম্মা। বেতন সংক্রান্ত ঝামেলায় কয়েকদিন আগে যোগ দিয়েছেন ফ্রেঞ্চ জায়ান্ট পিএসজিতে।

ইতালির হয়ে ৩২ ম্যাচ খেলে কোনো গোল হজম করেননি ১৮ ম্যাচেই, এমনকি কোনো ম্যাচেই হজম করেননি একাধিক গোল। সাফল্যের ধারাটা বজায় রাখলেন এদিনও, ম্যাচে দারুণ সব সেভ করেছেন। টাইব্রেকারেও দলের ক্রাণকর্তা তিনিই, লোকাতেল্লি প্রথম পেনাল্টি মিস করলে অন্ধকার নেমে আসা ইতালি ডাগআউটে হাসি ফিরিয়েছেন তিনি। প্রথমে ড্যানি অলমো আর পরে আলভারো মোরাতার শট থামিয়ে আজকের নায়ক তাই তিনিই।

অথচ আজকের ম্যাচের নায়ক হবার কথা ছিল আলভারো মোরাতার। গোল মিসের সুবাধে নিয়মিত সমর্থকদের হাস্যরসের শিকার মোরাতা আজকে সমতাসূচক গোল করে হয়েছিলেন স্পেনবাসীর চোখের মণি। কিন্তু ফুটবল নিষ্ঠুর, ম্যাচ শেষের আগেই নায়ক থেকে খলনায়কে পরিণত হলেন তিনি। টাইব্রেকারে তার দুর্বল শট সহজেই ঠেকিয়ে দিয়েছেন ডোনারুম্মা।

ম্যাচ শেষে অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্পেনের নতুন তারকা পেদ্রি। অথচ সারাম্যাচজুড়ে আলো ছড়িয়েছেন এখন কৈশোর না পেরোনো এই ফুটবলার। স্বপ্নের এক মৌসুম কাটিয়ে সফল জাতীয় দলের জার্সিতেও। এদিনের ম্যাচেও ইতালির অভিজ্ঞ মিডফিল্ডকে অকেজো করে দেখিয়েছেন নিজের প্রতিভা।

ফাইনালে ইতালির প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড কিংবা ডেনমার্ক। করোনার আঘাত সামলে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি ইতালির মানুষ। একমাত্র ফুটবলই পারে তাদের আনন্দে ভাসাতে, প্রিয়জন হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করতে। ১৯৬৮ সালের পুনরাবৃত্তি কি করতে পারবে রবার্তো মানচিনির নতুন ইতালি? ইজ ইট কামিং টু রোম?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...