শচীন-ব্রেট লি ও একটি অটোগ্রাফ

শচীনের বিপক্ষে বোলিংয়ে আসলেই উইকেট শিকারের নেশাটা কয়েকগুন বেড়ে যেত লি'র। এক সাক্ষাৎকারে লি বলেন, ‘শচীনের বিপক্ষে আমি যখনই খেলি সেরা অবস্থানে থাকি কারণ শচীনই আমার সেরাটা বের করে আনতো।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একশো আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির মালিক। বিশ্বের বাঘা বাঘা বোলারদের বিপক্ষেও ব্যাট হাতে দাপট দেখিয়েছিলেন লিটল মাস্টার খ্যাত কিংবদন্তি ভারতীয় তারকা শচীন টেন্ডুলকার। ক্যারিয়ারজুড়ে প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর দাপট দেখিয়েছেন তিনি।

যদিও সবচেয়ে বেশিবার ধরাশায়ী হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা পেসার ব্রেট লি’র কাছে। ব্রেট লিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়িয়েছেন লম্বা সময়। গতির ঝড়ে দমিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের অজস্রবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্রেট লি সবচেয়ে বেশি ১৪ বার শচীনের উইকেট শিকার করেছেন।

শেন ওয়ার্নের সাথে শচীনের দ্বৈরথটা ক্রিকেট পাড়ায় বেশ বিখ্যাত। ব্রেট লি এর বিপক্ষেও শচীন ব্যাট হাতে ছিলেন বেশ দুর্দান্ত। ২০০৮ সালে কমওয়েলথ ব্যাংক সিরিজে ব্রেট লি’র করা ১৫০+ কি.মি (ঘন্টায়) গতির পর পর তিন বলে তিন বাউন্ডারি হাঁকান শচীন। কিন্তু ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশিবার আটকাও পড়েছেন লি’র জালেই।

প্রথমবার শচীনের বিপক্ষে খেলতে নেমে অটোগ্রাফ চেয়ে বসেছিলেন ব্রেট লি। সেই ম্যাচেই আবার শচীনের উইকেটও নেন এই তারকা পেসার। গেল ২৪ এপ্রিল শচীনের জন্মদিনে সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে নিজের ইউটিউব চ্যানেল ব্রেট লি বলেন, ‘১৯৯৯ সালে ক্যানবেরায় প্রথমবার শচীনের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। ভারতের বিপক্ষে আমি অস্ট্রেলিয়া প্রাইম মিনিস্টার একাদশে হয়ে খেলছিলাম। ভারতের হয়ে শচীনও খেলছিল। অনুশীলন ম্যাচ ছিল। শচীন যখন ব্যাট করতে আসলো আমি তখন বোলিংয়ে। আমি ভেবেছিলাম তার কাছ থেকে একটা অটোগ্রাফ নেওয়া যায়। বলটা নিয়ে তাঁর কাছে গিয়ে বললাম এখানে একটা অটোগ্রাফ দিবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তখন মাত্র ক্যারিয়ারে উঠতি অবস্থায়। আমি তাঁকে ওই ম্যাচে আউট করেছিলাম। ম্যাচ শেষে আমরা হাতও মেলাই। আমি সত্যি মুগ্ধ হয়েছিলাম এই মানুষটার প্রতি।’

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সমর্থকরা সাধারণত অন্য দেশের ক্রিকেটারদেরকে দুয়ো দেয়। কিন্তু শচীন ছিলেন ভিন্ন। শচীন ব্যাটিংয়ে নামার সময় পুরো স্টেডিয়ামজুড়েই হৈচৈ রব থাকত। সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান পেসার বলেন, ‘যারা সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড় না তারা খেলতে আসলে সেভাবে দর্শকদের কাছে সাপোর্ট পান না। বরং দর্শকদের কাছে দুয়োধ্বনির শিকার হতে হয়। অন্য খেলোয়াড়দের সমর্থন করলেও অস্ট্রেলিয়ানরা সেটি সামনে প্রকাশ করে না এটাই এখানের সংস্কৃতি। কিন্তু শচীন যখনই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ব্যাট করতে নেমে দর্শকদের মাঝে হৈচৈ রব উঠে। শুধু অস্ট্রেলিয়ানদেরই না ভারতীয় সমর্থকদেরও শব্দে স্টেডিয়াম ভারী হয়ে উঠে।’

শচীনের বিপক্ষে বোলিংয়ে আসলেই উইকেট শিকারের নেশাটা কয়েকগুন বেড়ে যেত লি’র। এক সাক্ষাৎকারে লি বলেন, ‘শচীনের বিপক্ষে আমি যখনই খেলি সেরা অবস্থানে থাকি কারণ শচীনই আমার সেরাটা বের করে আনতো।’

টেস্ট হোক বা ওয়ানডে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ব্যাট হাতে শচীনের রেকর্ডটা কিন্তু দুর্দান্ত। ৭১ ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭০ ইনিংসে ব্যাট হাতে ৪৪.৫৯ গড়ে ৩০৭৭ রান করেছিলেন তিনি। আর সাদা পোশাকে ৩৯ ম্যাচের ৭৪ ইনিংসে ৫৫ গড়ে ঝুলিতে তুলেছিলেন ৩৬৩০ রান।

অপরদিকে, বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অন্যতম সেরা এবং সফলদের একজন ছিলেন লি। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি – তিন ফরম্যাট মিলিয়ে শিকার করেছেন সাতশোর বেশি উইকেট।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...