ইংল্যান্ডের বিস্মৃত উমহাদেশীয় একাদশ

উপমহাদেশীয় বংশদ্ভুত ক্রিকেটারদের সংখ্যা ইংল্যান্ডে এতটাই বেশি যে তাঁদের নিয়ে চাইলে আলাদা কয়েকটা একাদশ করা যায়। এর মধ্যে একটা একাদশ হতে পারে এমন ক্রিকেটারদের নিয়ে যাদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা খুব বেশি লম্বা হয়নি। তবে চমক হিসেবে এই একাদশে আছেন একজন ড্যানিশ ক্রিকেটার!

দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটারদের অনেকের জন্মই ইংল্যান্ডের বাইরে! বেন স্টোকস, জেসন রয়, জোফরা আর্চার কিংবা ইয়ন মরগ্যানরা অন্য দেশে জন্ম নিলেও ক্যারিয়ার গড়েছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। তবে ইংল্যান্ড দলে এমন চিত্র মোটেও নতুন নয়। উপমহাদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া অনেক ক্রিকেটারই পরবর্তীতে খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে।

উপমহাদেশীয় বংশদ্ভুত ক্রিকেটারদের সংখ্যা ইংল্যান্ডে এতটাই বেশি যে তাঁদের নিয়ে চাইলে আলাদা কয়েকটা একাদশ করা যায়। এর মধ্যে একটা একাদশ হতে পারে এমন ক্রিকেটারদের নিয়ে যাদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা খুব বেশি লম্বা হয়নি। তবে চমক হিসেবে এই একাদশে আছেন একজন ড্যানিশ ক্রিকেটার!

  • বিক্রম সোলাঙ্কি (অধিনায়ক)

ভারতীয় বংশদ্ভূত বিক্রম সোলাঙ্কি খেলেছেন ৫১ ওয়ানডে। অসাধারণ স্ট্রোক মেকিংয়ের পাশাপাশি তিনি একজন দুর্দান্ত ফিল্ডারও ছিলেন। ২০০৩ সালে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন টানা ১৩ ম্যাচ! ক্যারিয়ারে এটিই ছিল তাঁর টানা সর্বোচ্চ ম্যাচ। যদিও নির্বাচকদের আস্থা হতে পারেননি কখনোই। কখনো সুযোগ পাননি সাদা পোশাকে।

কাউন্টি ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করার সুবাদে এই একাদশের অধিনায়ক সোলাঙ্কি। উইকেটরক্ষকের দায়িত্বও তাঁর। যদিও, তিনি এখানে স্পেশালিস্ট নন। তবে, ২০০৭ সালে একবার ম্যাট প্রায়রের ইনজুরিতে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন উইকেটের পেছনে।

  • ওয়াইজ শাহ

ভারতীয় বংশদ্ভূত সাবেক ইংলিশ ব্যাটার ওয়াইজ শাহ জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ পেয়েছেন ৬ টেস্ট ও ৭১ ওয়ানডেতে। বলতে গেলে রঙিন জার্সিতে ছিলেন নিয়মিত মুখ। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ১৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচও। ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯৮ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন তিনি।

রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে দূর্বলতা ও ফিল্ডিং মিস ও স্নায়ুচাপ সামাল দিতে না পারায় টেস্ট ক্যারিয়ার সীমাবদ্ধ ছিল মাত্র ৬ টেস্টে।  টেস্টে ৮৮ ও ৩৮ রানের ইনিংসের পরেও সাদা পোশাকে লম্বা ক্যারিয়ার গড়তে পারেননি তিনি।

  • মার্ক রামপ্রকাশ

তার সময়ের সেরা ইংলিশ ব্যাটার হিসেবে পরিচিত ছিলেন মার্ক রামপ্রকাশ। ইংল্যান্ডের হয়ে ৫২ আর ১৮ ওয়ানডেতে খেলেছেন তিনি। ২০০২ সালে ৩২ বছর বয়সে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলেন রামপ্রকাশ।

জাতীয় দলের হয়ে অনিয়মিত এক মুখ ছিলেন। মূলত নিজের ব্যা্টিং ব্যর্থতার কারনেই জাতিয় দলে লম্বা সময় টিকে থাকতে পারেননি তিনি। অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটে হাজার হাজার রানের কারণে সুযোগ পেয়ে যেতেন জাতীয় দলে।

  • আফতাব হাবিব

পাকিস্তানি বংশদ্ভূত আফতাব হাবিব ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন মাত্র দুই টেস্ট। এই ২ টেস্টে তিন ইনিংস মিলিয়ে করেছেন মোটে ২৬ রান! ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে টেস্ট সিরিজে অভিষেক হয় হাবিবের। এরপরই বাদ পড়েন দল থেকে! ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থতার পরে আর জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ারটা ছিল এ পর্যন্তই।

  • উসমান আফজাল

২০০১ অ্যাশেজ সিরিজে সুযোগ পান পাকিস্তানি বংশদ্ভূত উসমান আফজাল। সেখান অজিদের বিপক্ষে তিন টেস্টে সুযোগ পেয়ে এক ফিফটির দেখা পান এই ব্যাটার। বাকি ৫ ইনিংস মিলিয়ে করেন মোটে ২৯ রান! এরপরই ছিটকে পড়েন দল থেকে। টানা ব্যার্থতায় সুযোগ কাজে না লাগানোটা কাল হয়ে দাঁড়ায় উসমানের জন্য।

  • রবি বোপারা

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি করে আশা জাগিয়েছিলেন অলরাউন্ডার রবি বোপারা। তবে টেস্ট ক্যারিয়ারটা সীমাবদ্ধ ছিল মাত্র ১৩ টেস্টে। এর পেছনে মূল কারণ ছিল ওই তিন সেঞ্চুরির পরই সাদা পোশাকে টানা ব্যর্থতা।

ইংল্যান্ডের রঙিন জার্সিতে ছিলেন নিয়মিত মুখ। ১২০ ওয়ানডে আর ৩৮ টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ৩ হাজারের বেশি রান আর ৪৬ উইকেট নিজের দখলে নিয়েছেন ভারতীয় বংশদ্ভূত এই অলরাউন্ডার। তবে সাদা পোশাকে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে খেলতে পারতেন লম্বা সময়।

  • সামিত প্যাটেল

সম্ভাবনাময়ী হলেও জাতীয় দলে লম্বা সময় সার্ভিস দিতে পারেননি ভারতীয় বংশদ্ভূত অলরাউন্ডার সামিত প্যাটেল। মূলত ফিটনেস ইস্যুতেই পিছিয়ে ছিলেন তিনি।

ফিটনেস টেস্ট উৎরাতে না পেরে বাদ পড়েছেন একাধিকবার। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন মাত্র ৬ টেস্ট ও ৩৬ ওয়ানডে। তিনি ছিলে মূলত একজন বোলিং অলরাউন্ডার। লোয়ার অর্ডারে হার্ড হিটিং ব্যাটিংটাও করতেন বেশ।

  • কবির আলী

পাকিস্তানি বংশদ্ভূত ইংলিশ পেসার কবির আলী ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম করলেও জাতীয় দলে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় ৮০০ উইকেট নেওয়া কবির জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১৫ ম্যাচ! এই ১৫ ম্যাচের মধ্যে ১৪ ওয়ানডেতে ৬.০৮ ইকোনমিতে নেন ২০ উইকেট।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের হয়ে অন্যতম সেরা পেসার হিসেবেই শেষ করেছেন ক্রিকেট ক্যারিয়ার। বেশ কয়েক ম্যাচে খরুচে হওয়ায় জাতীয় দলে ক্যারিয়ার থেমে গেছে অল্পতেই। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সনাত জয়সুরিয়ার তাণ্ডবে ৬ ওভারে ৭২ রান দেওয়ার পরই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।

  • সাজিদ মাহমুদ

২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ভাল পারফরম্যান্সের পরেও অ্যাশেজ সিরিজে বাদ পড়েন পেসার সাজিদ মাহমুদ। ইংল্যান্ডের হয়ে ৮ টেস্টে ৪ ইকোনমিতে ২০ উইকেট ও ২৬ ওয়ানডেতে ৫.৮৫ ইকোনমিতে শিকার করেন ৩০ উইকেট।

রান খরুচে হলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট এনে দিতে পারতেন এই পেসার। তবে নির্বাচকদের অবহেলা আর সুনজরে না থাকায় বাদ পড়েন তিনি। ওয়ানডেতে ফিরলেও নজরকাঁড়া পারফরম্যান্সের অভাবে আর ক্যারিয়ার লম্বা করতে পারেননি তিনি।

  • আমজাদ খান

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পোর্ট অব স্পেনে ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট খেলেন আমজাদ খান। ফর্মহীনতা আর ইনজুরির কারণে জাতীয় দলে থিতু হতে পারেননি ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার। ডেনমার্ক জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ!

  • আজমল শাহজাদ

পাকিস্তানি বংশদ্ভূত পেসার আজমল শাহজাদ খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে জাতীয় দলে। এক টেস্ট, ১১ ওয়ানডে ও ৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা ১ টেস্টেই তিনি চার উইকেট শিকার করেন। ইয়োর্কশায়ারে জন্ম নেওয়া এই পেসার বল হাতে ওয়ানডেতে ১৭ আর টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন তিন উইকেট। ক্যারিয়ারটা বড় করতে পারেননি তিনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...