শুভ গাভাস্কার দিবস

আমরা যেভাবে শচীন গুলে খেয়েছি, আমাদের আগের প্রজন্ম তেমন গাভাস্কার। কাজেই তাঁকে নিয়ে যাই লিখি, কোন নতুনত্ব থাকবে না। ওভালের ২২১, ১৯৭১ সালে আবির্ভাব, বিশ্বকাপ উদ্বোধনে বিতর্কিত ৩৬, ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের কোটলা ম্যাজিক - এসবই এতো আলোচিত যে মনে হয় এই তো সেদিন হলো।

গাভাস্কারকে নিয়ে লিখতে বসার একটা সমস্যা হলো – কি লিখবো তাঁকে নিয়ে? এতো বই লেখা হয়েছে তাঁকে নিয়ে। এতো এতো প্রবন্ধ। আমি আর নতুন করে কি লিখবো? অন্যান্য কম জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের নিয়ে তাও কিছু অজানা গল্প লেখা যায়। কিন্তু গাভাস্কার নিয়ে নতুন কি?

আমরা যেভাবে শচীন গুলে খেয়েছি, আমাদের আগের প্রজন্ম তেমন গাভাস্কার। কাজেই তাঁকে নিয়ে যাই লিখি, কোন নতুনত্ব থাকবে না। ওভালের ২২১, ১৯৭১ সালে আবির্ভাব, বিশ্বকাপ উদ্বোধনে বিতর্কিত ৩৬, ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের কোটলা ম্যাজিক – এসবই এতো আলোচিত যে মনে হয় এই তো সেদিন হলো।

আমিও তো ড্রইংরুমে বসে দিব্যি চা-মুড়ি খেতে খেতে দেখলাম গাভাস্কারের রোদ-ঝলমলে স্ট্রেট ড্রাইভ গুলো। ঠিক এইখানেই আমার বাবা-কাকাদের আমার হিংসা হয়। ওঁরা মনশ্চক্ষে নয়, সরাসরি দেখেছেন সুনীল বিক্রম।

গৌতম ভট্টাচার্যর সাম্প্রতিকতম বইয়ের নাম ‘গাভাস্কারের জন্ম’। কিন্তু আমার মনে হয়, গাভাস্কারদের জন্ম নেই, মৃত্যুও না। সুনীল মনোহর গাভাস্কার আসলে একটা স্পিরিট। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় যে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ বানিয়েছিলেন, তাতে কেন্দ্রীয় চরিত্র একটি দৃশ্যে বলছেন, ‘বিক্ষুব্ধ সময়ে কি দু’হাত তুলে মুজরো করবো?’

যদি ধরেও নি আগুনে সত্তরের দশকে বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে ক্রিকেট নিতান্তই খুব সাটল, রুচিশীল মুজরো, গাভাস্কার মশাই তা ভাবতে দিচ্ছেন কই? গাভাস্কারের একেকটা ইনিংস যেন একেকটা জাতীয় সড়ক। যখন আলকাতরা, পাথরকুচি ইত্যাদি দিয়ে শ্রমিকরা এইসব সড়কের ভিত তৈরি করেন, তখন সড়কটি দেখলে কুৎসিত মনে হয়। কিন্তু আদতে ওই ভিতের ওপরেই তো দাঁড়িয়ে রয়েছে এতো সুন্দর সব রাস্তা।

গাভাস্কারও শ্রমিক-সম নিষ্ঠায় ডিফেন্সের আলকাতরা আর পাথরকুচি দিয়ে বানাতেন সেঞ্চুরির ঝাঁ-চকচকে সড়ক। কিভাবে ক্রিকেট কে মুজরো ভাবি বলুন তো? গাভাস্কারের খেলায় যে একইসাথে রয়েছে শ্রমিকের সংগ্রাম, সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিল্প এবং মধ্যবিত্তর ইনডিফারেন্স-সত্তর দশকের তিনটি বৈশিষ্ট যা এই দশককে অন্য সব দশকের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে। মধ্যবিত্ত কেন বললাম?

মধ্যবিত্ত এমনই এক জীব, যে ঝড়-ঝঞ্ঝা-যুদ্ধ যাই আসুক, তার কোনো হেলদোল নেই। গাভাস্কারও খানিকটা তাই নন? ১৯৭৫ এর ৩৬ ধরুন। রান তাড়া করার কোনো গরজই নেই। বা ১৯৭১ সালের ঐ রকম রংমশাল জ্বালা আবির্ভাবের পর, আগামী তিন বছর যেন মিইয়ে যাওয়া তুবড়ি।

আসলে ওই স্পিরিট বললাম না, ওটাও ওই উৎপল দত্তর ‘সর্বভুক ও স্বল্পাহারির’ মতো কোনো ‘ফিগার অব স্পিচ’ নয়। আদতেই তিনি স্পিরিট। তার না আছে জন্ম না মৃত্যু। শুধু ফি বছর ওই দশই জুলাই একটা গাভাস্কার দিবস আসে, এই যা।

এমনিতে যাঁরা আমার লেখা মোটামুটি পড়েন, তাঁরা হয়তো বলেই ফেলবেন, এটা আদ্যন্ত চরিত্রবিরোধী লেখা। সাধারণত একটু পরিসংখ্যান ভিত্তিক লেখাই লেখার চেষ্টা করি। আজ একটু কাব্যি করে ফেললাম? মাফ করে দেবেন। আসলে শুরুতেই লিখলাম না, গাভাস্কারকে কে নিয়ে লিখতে বসার এটাই সমস্যা – কি লিখবো তাঁকে নিয়ে?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...