নয় ব্যাটসম্যানেও বিপর্যয়

ছয়-সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিতই রান করেছেন লিটন দাস। টেস্ট ক্যারিয়ারের  আটটি হাফ সেঞ্চুরি লিটন করে ছিলেন এই পজিশনে ব্যাট করে। তবে তাঁর বিপক্ষে বড় অভিযোগ ছিল ইনিংস বড় করতে না পারার। যে কারণে আটটি হাফ সেঞ্চুরির বিপরীতে তাঁর ছিলো না কোন সেঞ্চুরি।

এর আগে একবার সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে গিয়েও সেটা হাতছাড়া করে ছিলেন লিটন। আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে দলের বিপর্যয়ের মুখে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে সেই আক্ষেপ দূর করার সুযোগ পেয়ে ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। তবে আজও একরাশ হতাশা নিয়েই ফিরতে হয়েছে তাকে।

ডোনাল্ড টিরিপানোর বাউন্সারে টাইমিং মিস করে ভিক্টর নিয়াউচির হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৪৭ বলে ৯৫ রান করে ফিরে যান লিটন। এটাই তাঁর টেস্টে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে শেষ বিকেলের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি।

টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে এই দুজনের জুটিতেই প্রথম দিন শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৯৪ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত রয়েছেন  ৫৪ রান করে। এছাড়া চাপের মুখে ৯২ বলে ৭০ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।

সকাল থেকেই হারারের আকাশ ছিল অনেকটা মেঘলা। শুষ্ক উইকেটে ছিল বাউন্স। তাই নতুন বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জ ছিল প্রবল। তবে নতুন বলে সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ম্যাচের শুরু থেকেই সফরকারী ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেন মুজারাবানি এবং ভিক্টর নিয়াউচি।

তবে এই দুজনের কৃতিত্বের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দায়টাই ছিলো বেশি। দৃষ্টিকটু ভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। নিজেদের ধারাবাহিক ব্যর্থতাকে আরো লম্বা করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাইফ হাসান।

ম্যাচের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে রানের খাতা খোলার আগেই মুজারাবানির ভেতরে ঢোকা বল পুরোপুরি লাইন মিস করে বোল্ড হন সাইফ হাসান। পাঁচ টেস্টের ক্যারিয়ারে এই নিয়ে তিন বার শূন্য রানে আউট হলেন এই ওপেনার। এই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর চতুর্থ ওভারে আবার আঘাত হানেন মুজারাবানি।

এই পেসারের একটু অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বল খোঁচা দিয়ে তৃতীয় স্লিপে ডিয়ন মেয়ার্সের হাতে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৮ বলে ২ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলার পরের চার ইনিংসে শান্তর সংগ্রহ মাত্র ২৮ রান। যার ভিতর শূন্য রানেই ফিরেছেন দুই বার।

৮ রানে দুই উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মুমিনুল হক ও সাদমান ইসলাম অনিক। শুরুতে ছন্দ খুঁজে না পেলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে নিজেদের উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেন দুজনই। তবে নিজের ভুলে বেশী দূর যেতে পারেননি সাদমান। রিচার্ড এনগারাভার অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন এই ওপেনার।

সাদমানের বিদায়ে ভাঙে ৬০ রানের জুটি। ৬৪ বলে ২৩ রান আসে সাদমানের ব্যাট থেকে। ৩ উইকেট হারিয়ে ৭০ রান নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তবে বিরতি শেষেও বাংলাদেশকে স্বস্তি দেয়নি মুজারাবানি। দ্বিতীয় স্পেল করতে এসে প্রথম ওভারেই মুশফিকুর রহিমকে ফিরিয়ে দেন এই পেসার।

মুজারাবানির ভেতরে ঢোকা বল না বুঝে ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে মুশফিক ফিরে যান ৩০ বলে ১১ রান করে। মুশফিককে হারানোর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই বাংলাদেশের ইনিংসে বড় আঘাত হানেন ভিক্টর নিয়াউচি। তার করা অনেক বাইরের বল অযথা তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন ৫ বলে ৩ রান করা সাকিব আল হাসান।

সাকিব ফিরে যাওয়ার পর বিপদ হতে পারতো আবারো। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি করা মুমিনুলের সহজ ক্যাচ ছাড়েন মুজারাবানি। তবে জীবন পেয়েও আর বেশি দূর যেতে পারেননি মুমিনুল। নিয়াউচির বাইরের বল কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ৯২ বলে ৭০ রান করে মুমিনুল যখন ফিরে যান তখন ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ।

এরপর সপ্তম উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও লিটন দাস। দুই জনের ৩৫ রানের জুটিতে ৬ উইকেটে ১৬৭ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। চা বিরতি শেষে দিনের শেষ সেশনেও ছন্দ ধরে রাখেন এই দুই ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ের বোলারদের কোন সুযোগ না দিয়ে ১৩৮ রান যোগ করেন দুজন।

সেঞ্চুরি মিস করে লিটন ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ শূন্য রানে ফিরে গেলে দিনের শেষ উইকেট জুটিতে ২৪ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন আহমেদ। মাহমুদউল্লাহ ৫৪ রান করে ও তাসকিন ১৩ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

জিম্বাবুয়ের বোলারদের ভিতর মুজারাবানি তিনটি উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়া  নিয়াউচি ও টিরিপানো দুটি এবং এনগারাভা একটি উইকেট পেয়েছেন।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর: (প্রথম দিন শেষে)

টস: বাংলাদেশ

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৯৪/৮ (ওভার: ৮৩; সাদমান- ২৩, সাইফ- ০, শান্ত- ২, মুমিনুল- ৭০, মুশফিকুর- ১১, সাকিব- ৩, মাহমুদউল্লাহ- ৫৪*, লিটন- ৯৫, মিরাজ- ০, তাসকিন- ১৩*) (মুজারাবানি- ১৬-৩-৪৮-৩, নিয়াউচি- ১২-১-৬৯-২)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link