শত জ্বালার আগুনে পোড়া স্টার্লিং

কিছু খেলোয়াড়ের শুধু স্কিলফুল হইলেই হয় না- মিরিয়াম ওয়াকার খান স্পোর্টস রাইটার, তাঁর মতে – ‘It is a tale of loss, of racism, of vilification, of talent, of dreaming big and of a sportsman’s power to make a difference on and off the pitch. And, at every stage, of proving his doubters wrong.’

স্টারলিং একজন ইংলিশ ফুটবল তারকা হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বাধা পার হন তার ব্যাখ্যা করতেই কথাগুলো লেখেন মিরিয়াম। এসব কারণে আমি লিটন দাস আর সৌম্য সরকারকে অনেক সময়ই রয়ে সয়ে সমালোচনা করি। এদের খেলার বাইরেও মানসিক প্রেশার থাকে, জিতলে বাংলাদেশ, হারলে আসে ধর্মের প্রসঙ্গ।

মেসুত ওজিল বলেছিলেন, ‘আমি যখন জিতি তখন আমি জার্মান, যখন হারি, তুর্কী বংশোদ্ভূত জার্মান হয়ে যাই।’
২০১৮ সালে রাহিম স্টার্লিংয়ের পায়ের ট্যাটুতে ‘M16 Assault rifle’ দেখার পর সান পত্রিকায় তাঁকে ‘সিক’ বলা হয়। কিন্তু চোখে দেখা গল্পের ভেতরটা জানা যায় অতীতে। রাহিম স্টার্লিংয়ের বাবাকে জ্যামাইকার কিংস্টনে গুলি করে মেরে ফেলা হয় যখন স্টারলিংয়ের বয়স ছিল ২।

বিশ্বকাপের যখন কয়েক মাস সময় বাকি, তখন স্টারলিংকে ব্যাখ্যা করতে হয় তার বাবা কীভাবে মারা গিয়েছিলেন!
ভাবেন, মানসিক চাপ, অ্যাংজাইটি কোন লেভেলে। বাবার কথা একেবারেই মনে নাই স্টারলিংয়ের। মায়ের প্রতি আছে চরম ভক্তি।

স্টার্লিং প্লেয়ার্স ট্রিবিউনে মা সম্পর্কে বলেন, ‘যদি কারো খুশি হওয়ার থাকে সেটা আমার মা, ইংল্যান্ডে তিনি এসেছিলেন খালি হাতে। এখন একটা নার্সিং হোমের পরিচালক এবং তার ছেলে ইংল্যান্ডের হয়ে ফুটবল খেলে।’

ক্যারিয়ারের শুরুতেই ঝামেলা হয়ে যায় ম্যানচেস্টার সিটি যাওয়ার পর! ২০ বছর বয়স, ৪৯ মিলিয়ন পাউন্ড প্রাইসট্যাগ। প্রচণ্ড চাপ! লিভারপুলে বলে এসেছেন ট্রফি জিততে চান। এর মধ্যে সিটিতেই স্টার্লিংকে বর্ণবাদ সইতে হইলো! তাকে বর্ণবাদী মন্তব্য করে ২৯ বছর বয়সী একজন জেলেও যায়।

ইংল্যান্ড, বুলগেরিয়ার সোফিয়া সবখানেই শুনতে হয়েছে, গোল মিসেও শুনতে হয়েছে, শুনতে হয়েছে গোল দেয়ার পরেও! স্টার্লিং এখন আর শুধু ফুটবলার নন। ২৬ বছর বয়সী এই ইংলিশ এখন একজন মুখপাত্র বর্ণবাদের বিরুদ্ধে!
বুলগেরিয়া গিয়ে সোফিয়ার মাঠের দর্শকদের ইডিয়ট বলেছেন তিনি।

তিনিই বলেন, ‘আমরা ফুটবলারদের কীভাবে ট্রিট করছি সেটা ম্যাটার করে। গণমাধ্যম কীভাবে ট্রিট করছে সেটাও করে।’

ইতালির লিওনার্দো বনুচ্চি একবার ভিক্টিম ব্লেমিং করেছিলেন, জুভেন্টাসের মইজে কিন দর্শকদের সামনে হাত প্রসারিত করে উদযাপন করার সময় দর্শকরা যখন তাকে বর্ণবাদী মন্তব্যে জর্জরিত করে। বনুচ্চি বলেন, ‘সে অন্যভাবে উদযাপন করলেও পারতো। দোষ ৫০-৫০।’

স্টার্লিং বলেন, ‘হাসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ২০২১ সালে স্পোর্টসে বর্ণ সমতা আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার জন্য এমবিই- মেম্বার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার দেয়া হয়। আর খেলায়?

তিনি শুধু লিভারপুলে কথা দিয়ে আসা কথাটা রাখেননি, ম্যানচেস্টার সিটি প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে প্রথম দল যারা ১০০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করে, সেই মৌসুমে স্টার্লিং বড় ভুমিকা রাখেন। ফুটবল লেখকদের ভোটে পান বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব। ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ৪৫ ম্যাচে করেন মাত্র ২ গোল। পরের ২২ ম্যাচে করেন ১৫ গোল।
২ ম্যাচে ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্বও করেন স্টার্লিং।

ইউরোর বাছাই পর্বে ইংল্যান্ডের করা ৩৭ গোলের মধ্যে ১৫টিতে স্টারলিংয়ে সরাসরি অবদান আছে। যদিও লিগে খুব একটা ভালো সময় যায়নি, তাই সাউথগেটের দলে থাকবেন কি না সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সন্দেহ তৈরি হলেও, সেটা স্টারলিংয়ের মনে কোন প্রভাব ফেলেনি। সাতই জুলাই ব্রিটিশ কিংবদন্তি, লিনেকার লিখে দেন, ইংলিশ শার্ট পরা কোন ফুটবলারের অন্যতম সেরা প্রদর্শনী দেখেন তিনি।

ইংল্যান্ডের এই শতাব্দীর সেরা অর্জনে স্টার্লিংয়ের অবদান অন্যতম সেরা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসেও সে একদিন সেরা ১০ জনের তালিকায় ঢুকে যাবেন বলেই আমার বিশ্বাস। জয়তু স্টার্লিং, সমালোচনা আসবেই, গোলও মিস হবে, কিন্তু সময়মতো গোল করার কাজটাই আসল কাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link