প্রতিটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের একটা প্যাটার্ন আছে। প্রতিটা আন্তর্জাতিক আসর শেষেই আগমন ঘটে তরুণ কিছু খেলোয়াড়ের, যারা বড় বড় তারকার মধ্যে থেকে আলো কেড়ে নেন। টুর্নামেন্টের পরের কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায় তাঁদের নিয়ে। ইউরো সে তালিকা থেকে বাদ যাবে না কেন?
এবারের ইউরো ২০২০ এও আলো কেড়ে নিয়েছে তরুণ কিছু তারকা। আলোচিত হয়েছে তাঁর নৈপুণ্য। তাঁদের কয়েকজনকে নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।
- পেদ্রি (স্পেন)
তালিকার প্রথম নামটাই স্প্যানিশ তারকা পেদ্রি। পুরো টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরুষ্কার যার হাতে উঠেছে, তাকে তালিকার প্রথমে না রাখা তো অপরাধের সামিল।
গত এক বছর ধরেই পেদ্রিকে নিয়ে অনেক কথা উঠেছে, বার্সেলোনার ১৮ বছর বয়সী তারকাকে নিয়ে কথা হবে না, এমনটা কী হতে পারে? কারণও ছিল। লিওনেল মেসির সাথে মিলে বার্সেলোনার মাঝমাঠের চিত্রই বদলে দিয়েছেন পেদ্রি। এই মৌসুমের গুটিকয়েক সুন্দর স্মৃতির সাক্ষী ছিলেন এই দুজনে। লুইস এনরিকে তাই ভরসা রেখেছিলেন তার উপরে। বিন্দুমাত্র হতাশ করেননি পেদ্রি।
নতুন করে গড়া স্প্যানিশ দলের মূল তারকা হিসেবে তাকেই বেছে নিয়েছিলেন লুইস এনরিকে। স্পেনের বোরিং ফুটবলের মাঝে পেদ্রি ছিলেন মন্দের ভালো। যে কারণে এই ইউরোর সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরুষ্কারটা গিয়েছে তার পকেটে।
- মিকেল ড্যামসগার্ড (ডেনমার্ক)
ডেনমার্কের প্রথম ম্যাচের মাঝেই দলের সেরা তারকাকে হারিয়ে ফেলে তারা। ক্রিসচিয়ান এরিকসেনের হার্ট অ্যাটাক তাকে ছিটকে দেয় পুরো টুর্নামেন্ট থেকেই। ফলে তার জায়গা পূরণ করার জন্য মাত্র ২১ বছর বয়সেই সে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয় মিকেল ড্যামসগার্ডকে। আর সে দায়িত্ব কাঁধে পেয়ে ভিন্দুমাত্র গেলাফেলা করেননি তিনি। সামনে থাকা মার্টিন ব্রেথওয়েট আর ইউসুফ পৌলসেনকে একের পর এক বল বানিয়ে দিয়েছেন। চমকটা দেখিয়েছেন সেমি-ফাইনালে এসে। পুরো টুর্নামেন্ট গোলবার অক্ষত রাখা জর্ডান পিকফোর্ড আর ইংল্যান্ডকে দিয়েছেন গোলের তিক্ত স্বাদ। শুধু তাই নয়, গোলটাও করেছেন ফ্রি-কিকে। যেটা হয়ে তয়েছে এই ইউরোর একমাত্র ফ্রি-কিক থেকে গোল।
যদিও তার শেষটা মনমতো হয়নি, তাতে কী? ডার্কহর্স হিসেবে ইউরোতে প্রবেশ করা ডেনমার্ক নিজেদের সেরা খেলোয়াড়কে হারিয়েও নিজেদের সেরা খেলাটা দিতে পেরেছে, এই তো আনন্দের।
- জেরেমি ডোকু (বেলজিয়াম)
ইউরো টুর্নামেন্টটা খুব একটা ভালো যায়নি বেলজিয়ানদের জন্য। প্রতিবারই তারা ফিফা টুর্নামেন্ট খেলতে আসে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে, অথচ ভগ্নরথী হয়ে ফেরত যেতে হয় তাদের। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারের আসরেও নিজেদের হতাশ করেছে বেলজিয়াম। কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালির কাছী হেরে তাদের এবারের মতন স্বপ্নযাত্রাতে ছেদ পরেছে। কিন্তু এই দলের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল যদি কোনো তারকা থাকেন, সেটা হচ্ছে জেরেমি ডোকু।
রেঁনের এই মিডফিল্ডার নিয়ে আগে থেকেই কথা হচ্ছিল, কিন্তু ইউরোপের বড় মঞ্চে প্রমাণ না করতে পারলে কী আর চলে? সে সুযোগটা করে দিয়েছিল এই ইউরো। আর তাতেই বাজিমাত। রবার্তো মার্তিনেজ তাকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটায়, তাতেও নিজের স্পিড আর পজিশনিং সেন্স দিয়ে জানিয়ে দিলেন, বেলজিয়াম এই জেনারেশনের পরেই শেষ নয়, আরো আছে।
তার উপর মার্তিনেজ ভরসা করেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালেও, ইডেন হ্যাজার্ডের জায়গায় নিজেকে মানিয়েও নিয়েছিলেন, কিন্তু ইতালির অভিজ্ঞ ডিফেন্স ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। হেরে গেলেও ডোকু নিজের জাত চিনিয়েছেন বটে।
- বুকায়ো সাকা (ইংল্যান্ড)
এবারের ইউরোতে যদি কোনো সারপ্রাইজ প্যাকেজ থাকে, সেটা অবশ্যই বুকায়ো সাকা। আর্সেনালের এই উইঙ্গার নিজের স্বভাবসূলভ খেলা দেখানো শুরু করেছেন গত মৌসুম থেকে, তাতেই কেড়ে নিয়েছিলেন গ্যারেথ সাউথগেটের দৃষ্টি। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আর্সেনালের ভঙ্গুর স্কোয়াডকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ব্রেক আউট সিজন শেষ করে সাকা মনোযোগ দিয়েছিল ইউরো ঘরে ফেরানোর লক্ষ্যে।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে এসে প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন, আর তাতেই কেড়ে নিয়েছিলেন আলো, পেয়েছেন ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরষ্কার। সেখান থেকে শুরু, জার্মানির বিপক্ষে রাউন্ড অফ সিক্সটিন, ডেনমার্কের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল; সব জায়গাতেই ছিলেন নিজের পিক ফর্মে।
ইংল্যান্ডের বোরিং ফুটবলকেও আনন্দময় করে তুলেছিলেন সাকা। কিন্তু শেষটা মনমতো হয়নি সাকার। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তার উপর ভরসা করেছিলেন সাউথগেট। কিন্তু ইংল্যান্ডকে বাঁচিয়ে দেওয়ার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। মিস করে নিজের বাড়ির সামনে থেকেও শিরোপা হাতছাড়া করেছেন।
তাতে করে নতুন করে উদীয়মান তারকার লিস্টে সুযোগ করে নিতে কোনো ঝামেলাই পোহাতে হয়নি তাকে। পেনাল্টি মিস করে যে প্রেশার এখন তার উপর, তা কতটা হ্যান্ডেল করতে পারেন, তার উপরেই নির্ভর করছে তার ভবিষ্যৎ।