সমালোচনামুখর নারী লিগ

বাইলজ মানা হলে কিংবা ক্লাবটিকে দেওয়া হলে তারা হয়তো এমনটি করতো না। দায়সারা গোছের একটি লিগ আয়োজনের বড় নতুনা কাচিঝুলিকে বহিস্কার করা। এমনিতে মেয়েদের লিগে দল খুজে পাওয়া যায়না। সেখানে একটি দলকে বহিস্কার করে কি খেলার উন্নতি সম্ভব। মেয়েদের লিগের সর্বশেষ দুটি আসর দেখে মনে হয়েছে এখানে অংশগ্রহণকারীরা বসুন্ধরা কিংসকে চ্যাম্পিয়ন করাতেই অংশ নিয়েছে! ২০১৩ সালের পর গত বছর লিগ অনুষ্ঠিত হয়। এক বছর আগের লিগ থেকে এবার কয়েকটি দল ছিলনা। সামনের লিগে হয়তো এবারের আসর থেকেও থাকবেনা কয়েকটি দল।

মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের অনেক অর্জণ রয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলের হয়ে পাওয়া। মূলত ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ আর ২০১২ সালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপের মধ্যদিয়ে দেশের ফুটবল নতুন দিগন্তে পা রাখে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই টুর্নামেন্ট থেকে বাছাই করা খেলোয়াড়দের নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য খেলোয়াড় গড়ে তোলার কাজটি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভালভাবেই করেছে। বিশেষ করে মেয়েদের টুর্নামেন্ট থেকে দেশের প্রমীলা ফুটবল নতুন দিগন্তে পা রাখে। মেয়েদের ফুটবলে আজকে যাদেরকে বয়সভিত্তিক দল থেকে জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তারা সবই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই টুর্নামেন্ট থেকে ওঠে আসা।

জাতীয় দলে খেলা বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই এবার মেয়েদের লিগে খেলছে। যার মধ্যে বড় অংশটা বসুন্ধরা কিংসের। যে দলটি টানা দ্বিতীয়বারের মতো লিগের শিরোপা জিতেছে। সেটি এক ম্যাচ হাতে রেখেই। ১৩ ম্যাচ থেকে পূর্ণ ৩৯ পয়েন্ট পাওয়ায় শিরোপা জিততে কোন অসুবিধাই হয়নি। কিন্তু যে লিগ মেয়েরা খেললো সেটি দেশের ফুটবলের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

নানা কারণেই এই লিগকে বিতর্কের বলতে হচ্ছে। আর প্রায় পুরো জাতীয় দল নিয়ে দল গড়ায় একপেশে আর হাস্যরসে পরিণত হয়েছে ম্যাচগুলো। বিশেষ করে বসুন্ধরার সাথে খেলা হলেই বড় ব্যবধানে পরাজয়ের শংকায় থাকতো প্রতিপক্ষরা। এই যেমন শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে জামালপুরের কাচারীপাড়া একাদশকে ১৮-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয় নিশ্চিত করে সাবিনা খাতুনরা।

এই ফলাফলে পরিস্কার বোঝা যায় লিগটা কতটা প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ হয়েছে? তবে উল্লাস করতে কম করেনি আবু ফয়সাল আহমেদের শীষ্যরা। চ্যাম্পিয়ন হবার বিষয়টি আগে থেকেই জানত বলে ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা টি শার্ট পড়ে উল্লাস করেছে মেয়েরা। আর পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে শেষ শ্যাচটা জিতে তবেই উল্লাস করতে চায় তারা। আগের ম্যাচে কুমিল্লা ইউনাইটেডকে হারিয়ে শিরোপা প্রায় নিশ্চিত হলেও উল্লাস করেননি। মূলত লিগে বসুন্ধরার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধী আতাউর রহমান ভুইয়া কলেজ পয়েন্ট তালিকায় নুন্যতম ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় শিরোপা জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

জামালপুরের দলটিকে নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে ওঠা বসুন্ধরার ১৮ গোলের মধ্যে কৃষ্ণা রাণী সরকার পাচটি, সাবিনা খাতুন চারটি, শামসুন্নাহার তিনটি ও সানজিদা দুটি গোল করেছেন। এর আগের ম্যাচে কুমিল্লা ইউনাইটেডকে ৬-০ গোলে হারিয়েছিল বসুন্ধরা। এই দলের হয়েই সাবিনা কয়েক ম্যাচ আগে মেয়েদের লিগে অর্ধশত গোলের অনন্য অর্জন করেছেন সাবিনা খাতুন। এর আগে নিজের গোলের সেঞ্চুরিও করেন সাতক্ষীরার এই মেয়ে। আতাউর রহমান ভুইয়া কলেজের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ে দুটি গোল আসেন সাবিনার পা থেকে। এটিকে যদি ভাল দিক বলা যায় উল্টো খারাপ দিকও রয়েছে।

যখন সরকারীভাবে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ ছিল পেশাদার লিগ থেকে শুরু করে চ্যাম্পিয়নশীপ লিগ ও মেয়েদের লিগও বন্ধ ছিল। যার মধ্যেই লুকোচুরি করে বসুন্ধরা ও আতাউর রহমান কলেজের ম্যাচ আয়োজন করা হয়! দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে গ্রুপ রয়েছে সেখানে আপডেট দেওয়া হয়ে থাকে। ১৪ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধের একদিন আগেই এই ম্যাচটি সংবাদ মাধ্যমকে আড়াল করে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ম্যাচ অনুষ্ঠানের আগে সূচি দেওয়া স্বাভাবিক রীতি থাকলেও সেটি মানা হয়নি। মিডিয়া তো নয়ই এই ম্যাচটি পুনরায় নারী ফুটবল শুরু জানেন না মহিলা ফুটবল কমিটির অনেকেই! মিডিয়াকে অন্ধকারে রেখে শুধুমাত্র ম্যাচের ফলাফলটি সরবরাহ করা হয়েছে। এই বিতর্কের আগে আরেকটা ঘটনা ঘটেছে মেয়েদের লিগ নিয়ে। টানা দুই ম্যাচে মাঠে না এসে বহিষ্কারের মতো বড় শাস্তি পেয়েছে ময়মনসিংহের কাচিঝুলি স্পোর্টিং ক্লাব।

এক ম্যাচ করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার রিপোর্ট না দেওয়ায় এবং টানা দুই ম্যাচ মাঠে না আসায় দলটির বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাফুফের শৃঙ্খলা কমিটি। টানা তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ওয়াকওভার দেওয়ার পর বাফুফে থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল ক্লাবটিকে।

তারপর ডিসিপ্লিনার কমিটি জরুরি সভা করে দলটিকে লিগ থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে জানা গেছে, নিজেরা আরেকটি টুর্নামেন্টে খেলার কারণে বাফুফে থেকে নাকি অনুমতিও নিয়েছিল। তবুও তাদেরকে বহিস্কতার করায় খুব বেশি কিছু করেনি তারা। কারণ এমনিতেই লিগে কোন প্রকার প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়তে না পারার হতাশ ছিল ঢাকার বাইরে থেকে আসা ক্লাবটি।

বিশ্লেষক মহল মনে করে, বাইলজ মানা হলে কিংবা ক্লাবটিকে দেওয়া হলে তারা হয়তো এমনটি করতো না। দায়সারা গোছের একটি লিগ আয়োজনের বড় নতুনা কাচিঝুলিকে বহিস্কার করা। এমনিতে মেয়েদের লিগে দল খুজে পাওয়া যায়না। সেখানে একটি দলকে বহিস্কার করে কি খেলার উন্নতি সম্ভব। মেয়েদের লিগের সর্বশেষ দুটি আসর দেখে মনে হয়েছে এখানে অংশগ্রহণকারীরা বসুন্ধরা কিংসকে চ্যাম্পিয়ন করাতেই অংশ নিয়েছে! ২০১৩ সালের পর গত বছর লিগ অনুষ্ঠিত হয়। এক বছর আগের লিগ থেকে এবার কয়েকটি দল ছিলনা। সামনের লিগে হয়তো এবারের আসর থেকেও থাকবেনা কয়েকটি দল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...