সংশয় কমল, সাহস বাড়ল

প্রতিপক্ষ যদিও জিম্বাবুয়ে, তবু এই জয়টি দরকার ছিল আত্মবিশ্বাসের জন্য। ১৯৪ রান তাড়া কোনো দলের বিপক্ষে, কোনো উইকেটেই সহজ নয়।

জয়টা অবশ্যই আরও ক্লিনিকাল হতে পারত। তবে শেষ পর্যন্ত খুব খারাপ হয়নি। এরকম ব্যাটিং উইকেটে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯৪ তাড়া করতে না পারলে দলের বিশ্বাসে চোট লাগত। এই জয়ে নিজেদের নিয়ে সংশয় হয়তো একটু কমবে, সাহস কিছু বাড়বে।

অবশ্যই বাংলাদেশ খুব ভালো টি-টোয়েন্টি দল নয়। খুব দ্রুত নাটকীয় উন্নতির আশাও নেই। আমাদের বিপিএল নিকট ভবিষ্যতেও পিএসএল-বিগ ব্যাশের মতো হয়ে উঠবে না, পোলার্ড-রাসেলদের মতো পেশিওয়ালা পাব না, ভুরিভুরি কার্যকর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার সহসাই পাব না। আমাদের জিততে হলে এরকম সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে। স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে হবে। আমাদের উন্নতি করতে হলে, এরকম ছোট ছোট পদক্ষেপেই এগোতে হবে।

সিরিজ থেকে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে বড় প্রাপ্তি সৌম্যর ব্যাটে-বলে কার্যকারিতা ও শামিমের ঝলক। ক্যারিয়ারের প্রথম ৪৮ টি-টোয়েন্টিতে সৌম্যর ফিফটি ছিল কেবল একটি, ভাবা যায়! সবশেষ আট ম্যাচে ফিফটি এল চারটি।

এই চার ফিফটির একটি নিউজিল্যান্ডে ২৭ বলে ৫১, বাকি তিনটিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবুও এটা তার জন্য দারুণ। আগে তো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও এমন ধারাবাহিক ছিলেন না! বিশেষ করে আজকের ইনিংসটি, টাইমিং ঠিকঠাক হচ্ছিল না, ফিল্ডারদের কাছে বল যাচ্ছিল।

তবু উইকেট ছুঁড়ে না দিয়ে একটা উল্লেখযোগ্য স্কোর গড়েছেন, যা দলের খুব জরুরি ছিল। তার বোলিংই এই সিরিজের দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নিজে যেমন আরও আত্মবিশ্বাসী হবেন অলরাউন্ড ভূমিকা নিয়ে, দলও তার ওপর আরেকটু বেশি ভরসা করার সাহস পাবে।

মাস দেড়েক আগে লিখেছিলাম, শামিমকে এখনই টি-টোয়েন্টি দলে চাই। দল ঘোষণার পর দেখলাম, পেয়েছি তাঁকে। সুযোগ পাওয়ার পর তাঁকে মাঠে দেখতে চেয়েছি সেভাবে, ঠিক যেভাবে তাকে দেখেঝি ঘরোয়া ক্রিকেটে ও এইচপিতে।

তাঁর ব্যাট স্পিডের কথা লিখেছিলাম বারবার। চাবুকের মতো ব্যাট চালান। এই সিরিজে দেখতে পেয়েছি। তাঁর চোখের কথা লিখেছিলাম। লেংথ আগে পড়তে পারে। এই সিরিজে দেখতে পেয়েছি।

লিখেছিলাম রানিং বিটুউন দা উইকেট গুলির মতো। দেখতে পেয়েছি এই সিরিজে। তাঁর সাহসের কথা লিখেছিলাম, ভয়ডরহীন মানসিকতার কথা। প্রাণবন্ত, চনমনে অ্যাটিটিউডের কথা লিখেছিলাম। এই সিরিজে দেখতে পেয়েছি।

অনেক সময় বাইরের বল ক্রস খেলে ফেলেন, তাঁর দুর্বলতা। জোর করে শট বানাতে চান। সেটাও দেখতে পেয়েছি। লিখেছিলাম তার ফিল্ডিং বাংলাদেশের বাস্তবতায় অবিশ্বাস্য। খানিকটা প্রমাণ দেখতে পেয়েছি এই সিরিজ।

তার বোলিংয়ের কথাও লিখেছিলাম। খুব একটা দেখানোর সুযোগ পাননি। সামনে সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই দেখাবেন।লিখেছিলাম, তার ভেতর মসলা আছে। এই সিরিজে তিনি ঝাঁজটা বোঝাতে পেরেছেন।

আমরা অনেক ভালো ব্যাটসম্যান পেতে পারি, অনেক প্রতিভা পেতে পারি। কিন্তু এই নির্দিষ্ট ঘরানার ক্রিকেটের খুব একটা পাই না। সেজন্য শামিম বড় এক সম্পদ। আরও কঠিন প্রতিপক্ষ আসবে, চ্যালেঞ্জ আসবে, পরীক্ষা হবে।

সেসবের জন্য তাঁকে তৈরি করার দায়িত্ব টিম ম্যানেজমেন্টের, বোর্ডের, সিস্টেমের এবং তার নিজের, না পারলে, বড় ক্ষতি। যতটা তার নিজের, আরও বেশি দেশের ক্রিকেটের।

আশা করি, শামিম, মেহেদি, আফিফ, সোহানরা এই সংস্করণে পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। আশা করি, শরিফুলকে খুব সতর্কতায় সামলানো হবে আশা করি, ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার লক্ষ্য নিয়ে গোছানো, সাজানোর ভাবনা, লক্ষ্য, চেষ্টা থাকবে।

 – ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link