সাধারণত, দীর্ঘ শরীর এবং বিশালত্ব সাঁতারের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা প্রদান করে। বিশেষত: বাটারফ্লাইয়ে। ডানা ছড়িয়ে এক এক স্ট্রোকে যখন অনেকটা জল টেনে নেওয়া যায় আর দু’পায়ের ধাক্কায় গতি আসে, সেটা মোকাবিলা করতে গেলে অত্যন্ত উন্নত মানের টেকনিকের দরকার হয়।
যে গল্প বর্ণনা করতে যাচ্ছি, সেখানে আমাদের হিরো কিন্তু বিশালাকায় কেউ নন। বরং সাধারণ বাটারফ্লাইয়ারদের মতো উচ্চতাও তাঁর নেই। বরং এমন কিছু আছে, যা প্রথম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাঁতারুদের ছিল না। তবু তাঁর নাম উল্লেখের আগে তিনজনের পরিচয় দিতে হয়।
প্রথমজন, পাবলো মোরালেস। বর্তমানে মাইকেল ফেল্পসকে সর্বকালের সেরা বাটারফ্লাই সাঁতারু বলা হয়। কিন্তু আশির দশকে ছিলেন পাবলো মোরালেস। ১৯৮৪’র অলিম্পিকে যাবার আগে আগেই বিশ্ব রেকর্ড করে হট ফেভারিট ছিলেন ১০০ মিটার বাটারফ্লাইতে। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির অ্যালবাট্রস মাইকেল গ্রসের কাছে হারতে হয় ১০০ মিটার বাটারফ্লাই অলিম্পিক ফাইনাল।
গ্রসের উচ্চতা ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি, দু হাত ছড়ালে ২.১৩ মিটার চওড়া হয়ে যেতে পারেন। তা জল ঠেলে এগিয়ে যাবার পথে তাঁর অ্যাডভান্টেজ তো থাকবেই। গ্রস ১৯৮৪’র ফাইনাল জেতেন বিশ্বরেকর্ড করে। মোরালেস হাল ছাড়ার পাত্র নন, ৮৬তে আবার বিশ্বরেকর্ড নিজের দখলে নেন। পরবর্তী ৯ বছর তাঁর কাছেই ছিল।
কিন্তু এই মোরালেস ১৯৮৮’র সিওল অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হলেন না। ইউ এস ট্রায়ালসে চতুর্থ হয়ে অলিম্পিকে যাবার যোগ্যতা হারালেন। সিওল অলিম্পিকে ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে অ্যামেরিকার প্রতিনিধিত্ব করলেন জে মর্টেনসন আর ম্যাটস বিয়ন্ডি। সাঁতার থেকে অবসর নিলেন মোরালেস। আবার ফিরলেন ১৯৯১তে এবং ফিরেই অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করলেন এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৯২-তে বার্সেলোনা অলিম্পিকে আট বছর আগের ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন জোড়া লাগালেন ১০০ মিটার বাটারফ্লাইতে সোনা জিতে।
ম্যাটস বিয়ন্ডিও এক বিশাল বাজপাখি। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চির বিয়ন্ডির বিস্তার ২.০৯ মিটারের। তিনি ১৯৭২-এ মার্ক্স স্পিৎজের ৬টা স্বর্ণপদকের রেকর্ড ভেঙে ৭টা সোনা জিততে নামছেন সিওল অলিম্পিকে। ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল, ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল, ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল, ১০০ মিটার বাটারফ্লাই, ৪x১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলে, ৪x২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলে আর ৪x১০০ মিটার মেডলি রিলে।
১০০ ফ্রিস্টাইলে প্রথমে সোনা জিতলেন তিনি। পরের দিন নিজের কোয়ালিফাইং রেসও জিতলেন, সর্বসাকুল্যে দ্বিতীয় সেরা সময় করে। কোয়ালিফাইং হিটের সেরা সময় করেছেন ৫৩.৩৪ সেকেন্ডে ব্রিটেনের অ্যান্ডি জেমসন। বিয়ন্ডি তাঁর সামান্য পিছনে ৫৩.৪৬। ফাইনালের আগে তো কেউই সেরাটা দেয় না।
সেপ্টেম্বর ২০ ১৯৮৮, বিকালের প্রথম ইভেন্ট ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ের ফাইনাল। রয়েছেন অ্যান্ডি জেমসন, রয়েছেন বিয়ন্ডি, রয়েছেন মাইকেল গ্রস। সিওলের জ্যামসিল ইন্ডোর স্যুইমিং পুল জমজমাট এক লড়াই দেখার জন্য। লেন নং ৪এ জেমসন, ৫এ বিয়ন্ডি আর ৬এ দ্য অ্যালবাট্রস। লঞ্চ প্যাডের উপর দাঁড়ালেন সবাই বন্দুকের আওয়াজের প্রতীক্ষায়। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন, মাইকেল গ্রস জলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন বন্দুক চলার আগেই। চাপ কোন মাত্রায় পৌঁছেছে তা বোঝা গেল।
লেন নং ২-এ আছেন অস্ট্রেলীয় জন সিবেন। সিবেন আগের অলিম্পিকের ২০০ মিটারে গ্রসকে হারিয়ে সোনা জিতেছিলেন। লেন নং ৩-এ আছেন অ্যান্টনি নেস্টি। নেস্টি সুরিনামের অর্থাৎ ডাচ গায়ানার। সুরিনাম অন্ধ্রপ্রদেশের থেকে আকারে সামান্য বড় কিন্তু জনসংখ্যা প্রায় দাদরা, নগর হাভেলির সমান। সুরিনামের প্রথম সাঁতারু হিসাবে অলিম্পিকে এসেছিলেন নেস্টি ১৯৮৪-তে। সুরিনামের রাজধানী পারামারিবো, সেখানে দেশের একমাত্র ৫০ মিটারের স্যুইমিং পুল।
রোনাল্ড নেস্টি ১৯৬৮-তে ত্রিনিদাদ থেকে কাঠের ব্যবসা করতে এসেছিলেন ত্রিনিদাদ থেকে। তখন অ্যান্টনির বয়স মাত্র ৭ মাস। গত ষোলো বছরে দিব্যি ফুলে ফেঁপেছে ব্যবসা। এখন খান দুই বক্সাইটের খনি আছে রোনাল্ড নেস্টির। ছেলেবেলাতেই অ্যান্টনিকে দেখে রোনাল্ডের মনে হয়েছিল এর মধ্যে কিছু মশলা রয়েছে। অ্যান্টনির ট্রেনিং-এর জন্য যা যা করার করতে কসুর করেননি। প্যান অ্যামেরিকান গেমস ১৯৮৩। অ্যান্টনি প্রথম আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রবেশ। তারপরের বছরই অলিম্পিক। লস অ্যাঞ্জেলসে ১৬ বছরের অ্যান্টনি জাতীয় রেকর্ড করেন ১০০ মিটার বাটারফ্লাইতে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ২১তম হন।
এরপরেই মোড় ঘুরে যায় জীবনের। আসলে এই সময়েই আমরা দেখি, আমাদের দেশের পায়োলি গ্রামের ঊষার কথা। মাথা ঝোঁকাতে পারেননি বলে ১৯৮৪র ব্রোঞ্জ পাওয়া হয় না। বারবার বলা হয় বিদেশে, বিশেষত অ্যামেরিকায় প্রশিক্ষণের কথা। কিন্তু ঊষা তাঁর নাম্বিয়ার স্যারকে ছেড়ে কোত্থাও যাননি। চোট আঘাত মিলিয়ে কাঙ্ক্ষিত অলিম্পিক সাফল্যও আসেনি।
নেস্টির ক্ষেত্রে কিন্তু অন্য ঘটনা ঘটল। হিট থেকে ফেরার সময় রোনাল্ডের সঙ্গে দেখা হল অ্যামেরিকার সাঁতারের প্রধান প্রশিক্ষক, গ্রেগ ট্রয়ের সঙ্গে। ট্রয় অ্যান্থনির কাঁধে হাত রেখে রোনাল্ডকে বললেন, ‘অ্যান্থনির স্ট্রোক আমি দেখেছি। ওর মধ্যে সম্ভাবনা আছে। যত দ্রুত সম্ভব ইউ এসে নিয়ে আসুন’।
কথাটা খুব সিরিয়াসলি নিলেন রোনাল্ড। পারামারিবোয় ফিরে তিনি দুটো চিঠি লিখলেন। একটা ট্রয়কে। ট্রয় তখন জ্যাক্সনভিলের বোলস সুইমিং স্কুলের কোচ। অপরটি আরেকটি বেসরকারি বোর্ডিং স্কুল ফ্লোরিডার পাইন ক্রেস্ট স্কুলকে। ট্রয় উত্তর দিলেন। অ্যান্টনি পত্রপাঠ রওনা দিলেন জ্যাকসনভিলে। সঙ্গে দিদি পলিন। পলিন সান্টা ফেতে কলেজে পড়তে যাচ্ছেন। অ্যান্টনির সাঁতারের স্কুল থেকে মাত্র একশ দশ কিমি দূরে।
শুরু হল নিরন্তর ট্রেনিং, অ্যান্থনির যেটা গুণ ছিল সেটা হল দ্রুত হাত চলত তার, আর শরীরও বেশ নমনীয়। না হলে মাত্র ৫ ফুট ১১র অ্যান্টনি দানবদের রাজ্যে টিকবেন কী করে! কিন্তু বাবা, মা, আর বাকি তিন ভাইবোনকে ছেড়ে এক অচেনা দেশে থাকতে কি আর ভালো লাগে? ফোন করে বারবার বাবাকে জানাতেন যে তাঁর ভালো লাগছে না আর থাকতে। দিদির সঙ্গে তো সেই কালেভদ্রে একবার দেখা হয়, ফোনে কথাই মাত্র। তবুই কেমন করে জানিনা বিভুঁইতে টিকে গেলেন অ্যান্টনি।
দু’বছর পরে ১৯৮৩’র প্যান অ্যামেরিকান গেমসে সোনা জিতলেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে গেল এক নতুন প্রতিভার। তবু ১৯৮৮ সিওল অলিম্পিক, তারকাদের অলিম্পিক, বিয়ন্ডি, গ্রস, সিবেন। সঙ্গে উঠে আসছেন জেমসনের মতো নতুনরা। নেস্টি কিন্তু হিটে সর্বসাকুল্যে তৃতীয় হয়েছেন। ৫৩.৫০ সেকেন্ডে।
যাই হোক, আবার সবাই লঞ্চ প্যাডে উঠলেন। ঝুঁকে পড়ে দাঁড়ালেন লঞ্চ প্যাডের সামনের অংশটুকু ধরে। রেডি, সেট, গুড়ুম করে গর্জে উঠল বন্দুক। পাঁচ নং লেন থেকে তীরের মতো বেরোলেন বিয়ন্ডি। সাতটা সোনার স্বপ্ন সফল করতেই হবে তাঁকে। আগের দিনই জিতেছেন ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের সোনা। চওড়া বাহুর জোরে প্রায় এক বডিলেন্থ এগিয়ে গেছেন তিনি। পিছনে জেমসন আর সিবেন। গ্রস অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন।
অ্যান্থনি আছেন পিছনের ঝাঁকেই কোথাও। কিন্তু লোকের তো তা দেখার সময় নেই। কালো চুলের নির্লোম ঋজু দেহের এক বিশাল বটগাছ সিওলের জামসিল পুলে ডানা মেলছেন। বিয়ন্ডি, ম্যাথু নিকোলাস বিয়ন্ডি, তাঁর সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে ডানা মেলছেন দ্রুত, অমরত্বের খোঁজে। পঞ্চাশ মিটারের পুলের শেষপ্রান্ত ছুঁয়েই, ফিরে চললেন, সোনার সন্ধানে বিয়ন্ডি। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত।
গত তিনবছরের নিরলস পরিশ্রমে, ক্যালিফোর্ণিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলে নিজেকে তৈরি করেছেন ম্যাট। ১৯৮৪-তে লস অ্যাঞ্জেলসে একটা সোনা ছিল বটে, কিন্তু সে তো রিলেতে। সেই বিখ্যাত ‘গ্রসবাস্টার’ রেস। মাইকেল গ্রসের চারটে সোনার স্বপ্ন ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে আন্ডারডগ অ্যামেরিকার ৪x২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে গ্রসবিজয়।
সে যাক, আমরা ফিরে যাই আমাদের বর্তমান রূপকথায়। বিয়ন্ডি, রেসটাকে সকলের ‘বিয়ন্ড’ নিয়ে যাচ্ছেন প্রায়। তখনও ৩০ মিটার বাকি। অ্যান্থনির মনে হল, বিয়ন্ডিকে হারানো সম্ভব নয় আর। ১০০’র মধ্যে ৯৯ বার হয়তো তিনিই ঠিক ছিলেন। কিন্তু ২০ সেপ্টেম্বরের গল্পটা অন্য ছিল। পনেরো মিটার বাকি, তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছেন নেস্টি, সামনে শুধু জেমসন এবং বিয়ন্ডি। দশ মিটার, নেস্টির মনে হল রূপো হাতের মুঠোয়। দ্রুত হাত চালাতে শুরু করলেন, শরীরের বিভঙ্গে জল ছিটকে ছিটকে যাচ্ছে, দুই পায়ের ঝটকায় এগিয়ে যাচ্ছেন আরও কিছুটা আরও কিছুটা।
১৯৭৬-এ প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সাঁতারু হিসাবে নারীদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ব্রোঞ্জ জেতেন নেদারল্যান্ডসের সুরিনামী বংশোদ্ভূত এনিথ ব্রিগিতা। কিন্তু রূপো কেউ পাননি আজ পর্যন্ত। সুরিনামের কোনও অলিম্পিক পদক নেই আজ পর্যন্ত। সময় এসেছে সে সব ভেঙে দিয়ে নতুন রূপকথা গড়ার। দ্রুত দু হাত একসঙ্গে চালাতে শুরু করলেন মাথা নিচু করে। দূরত্ব তাঁর দেখা হয়ে গেছে। দুটো সম্পূর্ণ স্ট্রোকে পৌঁছে যাবেন টাচপ্যাডে।
কিন্তু বিয়ন্ডি? বিয়ন্ডির ৬ ফুট ৬ ইঞ্চির উচ্চতাই কাল হয়েছে। হিসাবে বুঝলেন, দেড় খানা স্ট্রোক নেবার জায়গা আছে, ঘাড়ের উপর নি:শ্বাস ফেলছেন নেস্টি আর জেমসন। কিন্তু তাঁদের দিকে তাকাবার সময় নেই ম্যাট বিয়ন্ডির। তাঁর লড়াই নিজের সঙ্গে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন, একটা সম্পূর্ণ স্ট্রোকের পর বাকিটা পায়ের ধাক্কায় হাত দিয়ে ছুঁয়ে ফেলতে পারবেন।
৫৩.০১ সেকেন্ড মাইকেল গ্রসের পূর্ববর্তী অলিম্পিক রেকর্ডকে ৭ সেকেন্ডে পিছনে ফেলে টাচপ্যাড ছুঁলেন পায়ের ধাক্কায়। ছুঁয়েই বুঝলেন গণ্ডগোলটা হয়ে গেছে। তাঁর থেকে ৭ ইঞ্চি বেঁটে সাঁতারের পক্ষে ছোটখাটো, অনামা দেশের অখ্যাত এক সাঁতারু, সেকেন্ডের ভগ্নাংশে তাঁকে হারিয়ে দিয়ে অলিম্পিক রেকর্ড ও সোনার পদক নিয়ে চলে গেছেন।
সুরিনামের বর্তমান জনসংখ্যা মাত্র পৌনে ছয় লক্ষ। আলাদা করে হেভি ইন্ডাস্ট্রি বলে কিছু নেই। শুধু খনিজ পদার্থের রপ্তানির উপর টিকে আছে দেশটা। নেদারল্যান্ডসের হাত থেকে স্বাধীন হবার পর থেকেই গৃহযুদ্ধে গৃহযুদ্ধে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে দেশটা। ল্যাটিন অ্যামেরিকার উপরের ডান কোণের স্ট্যাম্পের মতো একটি দেশ থেকে এক কালো মানুষ উঠে এসেছেন অলিম্পিকের প্রথম পদক জয়ী হিসাবে। কালো মানুষ হিসাবে প্রথম সাঁতারে সোনা। স্টেডিয়ামে উপস্থিত রোনাল্ড কেঁদে ফেললেন আনন্দে। বাড়িতে দাদা, ভাই, দিদি আর সান্টা ফেতে আরেক দিদি পলিন। খুশির শেষ রইল না তাদের।
সেই শুরু। এরপর তিন বছর নেস্টি ১০০ মিটার বাটারফ্লাইতে হারেননি কোন রেস। ১৯৯০-এর গুডউইল গেমস, ১৯৯১-এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১৯৯২-এর প্যান অ্যামেরিকান গেমসে ১০০ মিটার বাটারফ্লাইতে সোনা পান তিনি। ১৯৯২ সালে বার্সেলোনায় অবশ্য পাবলো মোরালেসের কাছে হেরে ব্রোঞ্জেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
কিন্তু সুরিনামে? ১৯৮৮’র অলিম্পিকে মাত্র চারজন প্রতিযোগী ছিলেন সুরিনাম থেকে। নেস্টি ছাড়াও একজন ট্রাক অ্যাথলিট, এক জুডোকা এবং এক সাইক্লিস্ট। নেস্টির নামে ২৫ গিল্ডারের একটি কয়েন মুদ্রিত হল। সুরিনাম সরকার সাম্মানিক স্ট্যাম্প, সোনার ও রূপোর কয়েন প্রকাশ করলেন। পারামারিবোর ন্যাশনাল সুইমিং পুল আর একটি বোইং বিমানের নামকরণ হল অ্যান্থনি নেস্টির নামে।
এইই, সাঁতার ছেড়ে দেবার পর তিনি অ্যামেরিকায় ফিরে গিয়ে ফ্লোরিডার গেটর সুইমিং ক্লাবের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ হিসাবে যোগদান করেন। আজও রয়েছেন তিনি গেটরের সঙ্গে। এর মধ্যে নেস্টির সোনা জয়ের ২০ বছর পূর্তিতে ২০০৮-এর বেজিং অলিম্পিকে দেশের পতাকা বইবার দায়িত্ব দেওয়া হয় নেস্টিকে, সাম্মানিকী।
সেভাবে দেখতে গেলে বিয়ন্ডির হার একটা ফ্লুক, একটা দুর্ঘটনা। কিন্তু যদি সাঁতারে পিছিয়ে পড়া কৃষ্ণাঙ্গদের কথা ভাবি, যদি খেলাধুলোয় এক পিছিয়ে পড়া দেশ সুরিনামের কথা ভাবি, তখন ওটা বিয়ন্ডির হারের থেকেও নেস্টির হার না মানা মনোভাবের জয়, এক অদম্য স্পিরিটের গল্প।
এক ছোট্টখাট্টো শরীর নিয়ে শুধুমাত্র ডিসিপ্লিন, ডেডিকেশন ও ডিটারমিনেশনের জয়। যা যুগযুগ ধরে পিছিয়ে থাকা মানুষদের চালিকাশক্তি হয়ে দেখা দেয়। অলিম্পিকে সাঁতার চালু হবার বিরানব্বই বছর পর এক কালো মানুষ প্রথম সোনা জিতেছিলেন, আরও কত যে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালিয়েছিলেন আশা আকাঙ্ক্ষার আলো তার ইয়ত্তা নেই।
বিয়ন্ডি সেই অলিম্পিকে ৫টা সোনা, একটি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ পান। নারীদের মধ্যে ক্রিস্টিন অটো ৬টি সোনা পান। পরবর্তীকালে মাইকেল ফেল্পস সর্বকালের সেরা হিসেবে ১০০ মিটার বাটারফ্লাইতে তিনবার সোনা, একবার রূপা পান।
সর্বমোট ২৩টা সোনা। সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান। কিন্তু সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিঘাত চিন্তা করলে সুরিনামের অ্যান্থনি নেস্টির সোনা জয়ের গুরুত্ব সেই উচ্চতার না হলেও এক নিজস্ব মিনার গড়ে ছিলেন। ১০০ মিটার বাটারফ্লাই, যেখানে সাধারণ মানুষদের রূপকথার উড়াল দেখেছিল ১৯৮৮-এর গোটা বিশ্বও। এক বিরল প্রজাপতির বিশ্বজয়।
কৃতজ্ঞতা: ময়দানী স্ক্র্যাপবুক