অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও বোলারদের নৈপুণ্যে লক্ষ্যটা নাগালের ভিতরই ছিল বাংলাদেশের। এরপরেও টার্নিং উইকেটে জয় নিয়ে শঙ্কাতো একটা ছিলই। ইনিংসের মাঝপথে সেই শঙ্কা গাঢ় হয়েছিল আরো। তবে আফিফ হোসেন ধ্রুব ও নুরুল হাসান সোহানের দারুণ এক জুটিতে অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে ৩১ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন আফিফ ও ২১ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান। এর আগে বল হাতে দারুণ বল করে জয়ের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। চার ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকার করেছিলেন এই পেসার। এছাড়া স্লগ ওভারে দারুণ বোলিংয়ে দুই উইকেট পেয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম।
আজকের ম্যাচে জয়ের ফলে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। সিরিজের বাকি তিন ম্যাচের একটিতে জয় পেলেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ার সাথে এর আগে একটি করে ওয়ানডে ও টেস্টে জয় পেলেও কোন ফরম্যাটে সিরিজ জেতা হয়নি বাংলাদেশের।
তবে ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের প্রথম দুই ওভার নিরাপদে নাঈম শেখ খেললেও তৃতীয় ওভারে স্টাইক পেয়েই শূন্য হাতে ফিরে যান সৌম্য সরকার। মিচেল স্টার্কের স্ট্যাম্পের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান এই ওপেনার। পরের ওভারে একই ভাবে ফিরে যান নাঈমও।
জশ হ্যাজেলউডের সোজা বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ১৩ বলে ৯ রান করে নাঈম ফিরে যাওয়ার পর ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে চারে ব্যাট করতে নামেন মেহেদী হাসান। এই তরুণকে সাথে নিয়ে ২১ রানে দুই ওপেনারকে হারানো দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। স্টার্ককে টানা তিন চার মেরে শুরু করেন সাকিব। রানরেট নেমে এসেছিল পাঁচের কাছাকাছি।
তবুও ঝুঁকি নিলেন সাকিব। খেসারত দিলেন লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে। ১৭ বলে ২৬ রান করে সাকিব বিদায় নিলে ভাঙে ৩২ বলে ৩৭ রানের জুটি। দলীয় ৫৮ রানে সাকিব ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ আরো চাপে পড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে হারিয়ে। অ্যাশটন অ্যাগারের একটু স্পিন করে বেড়িয়ে যাওয়া বল তাড়া করে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে শূন্য হাতে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ।
অধিনায়কের বিদায়ের পর দারুণ খেলতে থাকা মেহেদী অ্যাডাম জাম্পাকে উইকেট ছেড়ে বেড়িয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হয়ে বিদায় নিলে ম্যাচে ফেরে অস্ট্রেলিয়া। ২৪ বলে ২৩ রান করে মেহেদী ফিরে গেলে ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। তখনও জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫৩ বলে ৫৫ রান।
তবে এরপর আর বিপদ হতে দেননি আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান। ৪৫ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন দু’জন। ৩১ বলে ৩৭ রান করে আফিফ ও ২১ বলে ২২ রান করে সোহান অপরাজিত থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ভিতর একটি করে উইকেট শিকার করেন মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড, অ্যাশটন অ্যাগার, অ্যান্ড্রু টাই ও অ্যাডাম জাম্পা।
এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালো হয়নি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান। এই স্পিনারের অফ স্টাস্পের বেশ বাইরের ফুল লেংথ বল খেলতে গিয়ে মিড অনে নাসুম আহমেদের হাতে ধরা পড়ে ফিরে যান অ্যালেক্স ক্যারি।
১১ বলে ১১ রান করে ক্যারি ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি আরেক ওপেনার জশ ফিলিপে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে উইকেটের দেখা পান মুস্তাফিজুর রহমান। এই পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি সামনে এগিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করেন ফিলিপে। বল গিয়ে আঘাত হানে লেগ স্ট্যাম্পে।
১৪ বলে ১০ রান করে ফিরে যান ফিলিপে। ৩১ রানে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার দলের হাল ধরেন মোজেস হেনরিকস ও মিশেল মার্শ। দুই ব্যাটসম্যান দেখে শুনে খেলে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন। তবে পাওয়ার প্লেতে রানের জন্য লড়াই করা অস্ট্রেলিয়া পাওয়ার প্লের পরেও রানের গতি বাড়াতে পারেননি।
দশ ওভার শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ছিল মাত্র ৫৩ রান। এরপরই রানের গতি বাড়াতে চেষ্টা করেন দুই ব্যাটসম্যান। এই জুটি যখন ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছিল তখনই দারুণ এক ডেলিভারিতে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন সাকিব আল হাসান। সাকিবকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান হেনরিকস। ২৫ বলে ৩০ রান করে হেনরিকস ফিরে গেলে ভাঙে ৬৮ রানের জুটি।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মার্শ। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে আসা শরিফুল ইসলামের উপর চওড়া হতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন এই ব্যাটসম্যান। ৪২ বলে ৪৫ রান করে মার্শ ফিরে যাওয়ার পর মুস্তাফিজের জোড়া আঘাতে শেষের ঝড়ও তুলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার কোন ব্যাটসম্যান।
১৮তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ফিরে যান ম্যাথু ওয়েড এবং অ্যাশটন অ্যাগার। ওয়েড ৪ রান করলেও রানের খাতায় খুলতে পারেননি অ্যাগার। এরপর শরিফুল ইসলাম অ্যাশটন টার্নারকে ফিরিয়ে দিলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২১ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন মিচেল স্টার্ক।
বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। এছাড়া শরিফুল ইসলাম দুটি এবং সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান একটি করে উইকেট শিকার করেন।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ১২১/৭ (ওভার: ২০; ক্যারি- ১১, ফিলিপে- ১০, মার্শ- ৪৫, হেনরিকস- ৩০, ওয়েড- ৪, স্টার্ক- ১৩*) (সাকিব- ৪-০-২২-১, মেহেদী- ৩-০-১২-১, শরিফুল- ৪-০-২৭-২, মুস্তাফিজুর- ৪-০-২৩-৩)
বাংলাদেশ: ১২৩/৫ (ওভার: ১৮.৪: নাঈম- ৯, সৌম্য- ০, সাকিব- ২৬, মেহেদী- ২৩, মাহমুদউল্লাহ- ০, আফিফ- ৩৭*, সোহান- ২২* ) (অ্যাগার- ৪-০-১৭-১, জাম্পা- ৪-০-২৪-১)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।