নিউজিল্যান্ডের ‘ভিন্ন’ পরিকল্পনা

গতকাল রাতে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান সফরের জন্য নিউজিল্যান্ডের ঘোষিত দলটা দেখলাম। একই সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং পরবর্তীতে ভার‍তের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্যও দল ঘোষণা করেছেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। বাংলাদেশ সফরে আসা নিউজিল্যান্ড দলের কোনো ক্রিকেটারই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে নেই। কিন্তু পাকিস্তান সফরে এই দলের সাথেই যুক্ত হবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা চার ক্রিকেটার মার্টিন গাপটিল, মার্ক চ্যাপম্যান, টড স্টল এবং ইশ সোধি।

নি:সন্দেহে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে মিরপুরের উইকেট দেখার পরই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। মিরপুরের এই লো কোয়ালিটির উইকেটে খেললে বিশ্বকাপের আগে খেলোয়াড়দের কনফিডেন্স ডাউন হওয়া ছাড়া বিশেষ কোনো লাভই হবে না তাদের। যার কারণে বাংলাদেশ সফরের জন্য দ্বিতীয় সারির একটা দল গঠন করছে; যার কেউই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেই।

অনেকের কাছেই মনে হতে পারে নিউজিল্যান্ডের মূল দলের না আসার পেছনে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) একটা বড় কারণ। হ্যাঁ, আইপিএল অবশ্যই একটা বড় কারণ। সেটা ব্যাখ্যা করছি; এর আগে একটু বলি, বাংলাদেশের বিপক্ষে সফর শেষেও আইপিএলের জন্য প্রায় এক সপ্তাহ সময় থাকবে। এবং একই সাথে বাংলাদেশ থেকে সাকিব ও মুস্তাফিজও আইপিএলে অংশ নিবে। আর যেসব ক্রিকেটাররা কোনো সিরিজের বায়োবাবল থেকে আইপিএলে অংশ নিবেন তাদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না, অর্থাৎ পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ এলেই সরাসরি তারা দলের যাথে যোগ দিতে পারবেন।

আইপিএলের স্থগিত হওয়া বাকি অংশ অনুষ্ঠিত হবে আরব আমিরাতে। এই আরব আমিরাতেই বসবে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। ১৫ অক্টোবর আইপিএল শেষ হওয়ার পর ২৪ অক্টোবর থেকেশুরু হবে বিশ্বকাপ (মূল পর্ব)। আইপিএলের ঠিক ৯ দিনের মাথায়ই কিন্তু একই ভেন্যুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে দলগুলো। এখন এমন সিচুয়েশনে শুধু নিউজিল্যান্ড না প্রায় সব দলই তাদের খেলোয়াড়দের আইপিএলে যাওয়ার ছাড়পত্র দিবে। প্রতিটা দলই কিন্তু এই এডভান্টেজটা নিতে চাইবে।

প্রথমত, আইপিএলে খেলার কারণে বিশ্বকাপের আগে তারা কন্ডিশনের সাথে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারবে। দ্বিতীয়ত, আইপিএলে যেসব ফরেইন প্লেয়ার খেলবে এদের বেশিরভাগই কিন্তু পরবর্তীতে নিজ নিজ দলের হয়ে ওয়ার্ল্ডকাপেও খেলবে। যার কারণে আইপিএলে থাকা ক্রিকেটাররা বেশ কাছ থেকেই সতীর্থ কিংবা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তা এবং দূর্বলতা গুলো পরখ করতে পারবে। এই কারণেই আইপিএলে যারা খেলবে তাদেরকে তো নাই বরং বাকি যারা আছে তাদের কাউকেই বাংলাদেশ সফরের দলে অন্তর্ভুক্ত করেনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। বাকিদের ক্ষেত্রে মূল কারণটা মিরপুরের উইকেট সেটা আগেই উল্লেখ করলাম।

নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ মূল স্কোয়াডে থাকা ১৫ সদস্যর সাতজনই এবার আইপিএলের কোনো না কোনো ফ্র‍্যাঞ্চাইজিতে আছে। এই সাতজনই আইপিএলে যাবে। এদের সবাই নিজ নিজ ফ্র‍্যাঞ্চাইজির মূল একাদশে সুযোগ না পেলেও দলের সাথে একমাস অনুশীলন করবে। সেই সাথে কন্ডিশনের মানায় নিতে একটা লম্বা সময়ও পাবে তাঁরা। একই সাথে উইকেটের আচরণ, বিশ্বকাপে থাকবে এমন খেলোয়াড়দের এই উইকেটে পারফরম্যান্স সবকিছুই তারা কাছ থেকে পরখ করতে পারবে। খেলোয়াড়দের এই অভিজ্ঞতাটাই পরবর্তীতে বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে কাজে লাগাতে চাইবে প্রতিটি দল।

উপমহাদেশের উইকেট আর কন্ডিশনের সাথে খাপ খাওয়াতে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা চারজনকে তারা পাকিস্তান সফরের জন্য নির্বাচন করছে। অবশ্য ইংল্যান্ড ক্রিকেটও কিন্তু একই সিদ্ধান্তই নিয়েছিলো। বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে খেলোয়াড়েরদের আইপিএলে খেলার জন্য ছাড়পত্র দেয় ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। অবশ্য তারাও চাইলে দ্বিতীয় সারির দল পাঠাতে পারতো। তবে ইসিবির চিন্তায় আপাতত বিশ্বকাপ বহির্ভূত কিছু নেই।

যদি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা কাউকেই বাংলাদেশ সফরে পাঠাবে না তাহলে সিরিজ স্থগিত কেনো করলো না নিউজিল্যান্ড? যেহেতু তারা বিশ্বকাপ স্কোয়াডের কাউকেই এই সফরে পাঠাচ্ছে না, তাহলে সফরটা স্থগিত করতেও পারতো। এই সফরের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড়কে তৈরি করবে। বেঞ্চ শক্তি আরো শক্তিশালী করতেই অনেকটা তারুন্য নির্ভর দল গঠন করেছে কিউইরা।

বাংলাদেশ সফরে এলে এই দলটা খুব সম্ভবত হোয়াইটওয়াশই হতে যাচ্ছে। তবে কিউই স্কোয়াডে হেনরি নিকোলস, টম লাথাম, ডগ ব্রেসওয়েলদের মতো এক্সপেরিয়েন্স ক্যাম্পেইনার আছে। পাকিস্তানের স্পোর্টিং উইকেটে হয়তো ভালো কিছু করতে পারে কিউইরা। কারণ সেই দলে আবার মার্টিন গাপটিল, ইশ সোধিরা যুক্ত হবেন। তবে এই দুই সিরিজ থেকেই বেশ কিছু নতুন ক্রিকেটারকে তৈরি করে নিবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। সব দিক বিবেচনায় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই আমি মনে করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link