বিশ্বকাপে বাপ-বেটার জুটিবন্ধন

ক্রিকেটে বাবা-ছেলে খেলার ইতিহাস বহু পুরনো। কিছু ক্ষেত্রে কিংবদন্তি বাবার ছায়া থেকে বেরোতে পারেননি ছেলে। আবার কারো ক্ষেত্রে সাদামাটা ক্যারিয়ার কাটানো বাবাকে ছাপিয়ে গেছেন ছেলে। তবে, বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছেন এমন বাবা-ছেলে জুটির সংখ্যা ক্রিকেটবিশ্বে খুব বেশি নেই।

সেই সংখ্যাটা হলো মোটে ১০ জনের। মানে মাত্র ,পাঁচজোড়া বাবা-ছেলের জুটি খেলেছেন ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। তাদের নিয়েই এবারের আয়োজন।

  • রজার বিনি ও স্টুয়ার্ট বিনি (ভারত)

১৯৮৩ বিশ্বকাপে সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল ভারত। বিশ্বকাপ জয়ের পর সবাই কপিল দেব, সুনিল গাভাস্কার বন্দনায় মেতে উঠলেও সেবারের বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন স্টুয়ার্ট বিনি। পেস বোলিং অলরাউন্ডার বিনি সেবার টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন।

অন্যদিকে বাবার মতো ছেলে স্টুয়ার্ট বিনিও ছিলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। বাবার মতো দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলতে না পারলেও ঠিকই খেলে ফেলেছেন একটি বিশ্বকাপ। ২০১৪ সালে অভিষিক্ত বিনি ২০১৫ বিশ্বকাপে ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সম্প্রতি তিনি সব ধরণের ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন।

  • জিওফ মার্শ এবং শন ও মিশেল মার্শ (অস্ট্রেলিয়া)

জিওফ মার্শ এবং তার দুই ছেলে শন এবং মিশেল; তিনজনেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট। জিওফ মার্শ অ্যালান বোর্ডারের ১৯৮৭ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য। সেবারের বিশ্বকাপে ৪২৮ রান করে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক।

এছাড়া সেবারের বিশ্বকাপে নামের পাশে দুইটি সেঞ্চুরিও ছিল তাঁর। বাবার মতো ছোট ছেলে মিশেল মার্শও বিশ্বকাপ জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতা মাইকেল ক্লার্কের দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপেও খেলার কথা ছিল তাঁর, কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগের ইনজুরি দল থেকে ছিটকে যান।

অন্যদিকে বড় ভাই শন মার্শ মূলত টেস্ট ব্যাটসম্যান। ২০০৮ সালে ওডিয়াইতে অভিষেক হলেও তাই খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি এই ফরম্যাটে। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন মার্শ ভাইদের বড়জন।

  • কেভিন কুরান ও টম কুর‍ান (জিম্বাবুয়ে ও ইংল্যান্ড)

কেভিন কারান এবং তার পুত্র টম কুর‍ান দুজনেই বিশ্বকাপ খেলেছেন তবে এই তালিকার বাকিদের তুলনায় তাঁরা আলাদা। বাকিদের ক্ষেত্রে পিতা-পুত্র দুজনেই একই দেশের হয়ে খেলেছেন কিন্তু তাঁরা দুজনে বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করেছেন দু’টি ভিন্ন দেশের।

স্যাম ও টম কারান

বাবা কেভিন ১৯৮৩ এবং ১৯৮৭ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট ১১ টি ম্যাচ খেলেন তিনি। অন্যদিকে কেভিনের বড় ছেলে টম ছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের সদস্য। যদিও দলের হয়ে কোনো ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি তাঁর। টমের ভাই স্যামও এখন জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য।

  • ক্রিস ব্রড ও স্টুয়ার্ট ব্রড (ইংল্যান্ড)

বর্তমানে প্রজন্মের সবাই ক্রিস ব্রডকে ম্যাচ রেফারি হিসেবে চিনলেও খেলোয়াড়ি জীবনেও কম ছিলেন না তিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠে নেমেছেন ৩৪ টি একদিনের ম্যাচে। ১৯৮৭ বিশ্বকাপের রানার্সআপ ইংল্যান্ড দলের সদস্য ছিলেন তিনি। অন্যদিকে পুত্র স্টুয়ার্ট ব্রড নি:সন্দেহে ছাপিয়ে গেছে বাবাকে।

ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার ব্রড জাতীয় দলের হয়ে অংশ নিয়েছেন তিনটি বিশ্বকাপে- ২০০৭, ২০১১ এবং ২০১৫। যদিও ২০১৫ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর সাদা ক্রিকেট থেকে একপ্রকার নির্বাসিত তিনি। এছাড়া ২০১২ এবং ২০১৪ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড।

  • রড ল্যাথাম ও টম ল্যাথাম (নিউজিল্যান্ড)

১৯৯২ বিশ্বকাপে সাহসী ক্রিকেট খেলে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ওপেনিংয়ে পিঞ্চ হিটিং, পাওয়ার প্লেতে অফ স্পিনার দিয়ে বোলিং করানোর মতো সাহসী সব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেবার মার্টিন ক্রো। সেবারে নিউজিল্যান্ড খেলেছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল।

রড ল্যাথাম ছিলেন মার্টিন ক্রোর দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। অন্যদিকে তার ছেলে টম ল্যাথাম অংশ নিয়েছেন দুইটি বিশ্বকাপে। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলেও ২০১৯ বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচেই ছিলেন প্রথম একাদশে। যদিও দুইটি বিশ্বকাপেই রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় টম ল্যাথামকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link