ছয় সেপ্টেম্বর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্যে দূরবর্তী দেশগুলোর খেলা দেখা একটু কষ্টেরই বটে। রাত জেগে অপেক্ষা করতে হয়। আর খেলা যদি সুপার-ক্ল্যাসিকো তাহলে অপেক্ষার প্রহর যেন দ্বিগুন হয়ে যায়। অপেক্ষার শেষ বাংলাদেশ সময় ঠিক রাত একটায় খেলা মাঠে গড়ালো, ব্রাজিলের করিন্থাস অ্যারেনায়।
কিন্তু হায়! খেলার পাঁচ মিনিটেই পুলিশের বাঁধায় খেলা বন্ধ। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি- কোভিড বিধি ভেঙ্গেছেন ৪ আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়। তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে চান তারা৷
এমন জল ঘোলা শেষে, বাকবিতণ্ডার পরিসমাপ্তি টেনে ঘোষণা হলো খেলা আর হচ্ছে না। করোনা আইন ভাঙায় পরিত্যক্ত হলো একটি আর্ন্তজাতিক ম্যাচ। তবে খেলা পরিত্যক্ত কিংবা পেছানোর ঘটনা এটাই নতুন নয়। আর আগেও বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেগুলোর পেছনে ঘটনাগুলো ছিল কিছুটা উদ্ভট, কিছুটা অদ্ভুত।
- সূর্যগ্রহণ
সূর্যগ্রহণ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। তাই এটিকে ঘিরে মানুষের আগ্রহের অন্ত নেই। তেমনই এক সূর্যগ্রহনের দিনক্ষণ ঠিক ছিল বহু আগেই। ১৯৯৯ সালের যেদিন সূর্যগ্রহণ হবার কথা সেদিন আবার ম্যাচ ছিল টর্কি ইউনাইটেড ও পোর্টসমাউথ এফসির বিপক্ষে।
ডেভন বিভাগীয় পুলিশ ম্যাচটি পরিত্যক্ত করে এবং পরবর্তী দিন নির্ধারণ করে দেয়৷ কারণ তারা মাঠের আশেপাশে প্রচুর মানুষ সমাগমের আশঙ্কা করে। এবং তাই-ই ঘটে। পরবর্তীতে ম্যাচটি খেলা হলে তা গোল শূন্য ড্র হয় এবং এটিই প্রমাণ করে ম্যাচটি সূর্যগ্রহনের থেকে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
- বোমা!
২০১৬ সালে প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচে ওল্ড ট্রাফোর্ডে গুজব ওঠে বোমা পাওয়ার৷ স্টেডিয়ামের ওয়াশরুমে পাওয়া যায় একটি অবাঞ্ছিত এক প্যাকেট। যেটাকে ধারণা করা হয়েছিল বোম। তারপর খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
সাবধানতার সাথে সকল প্লেয়ার, ক্রু এবং দর্শকদেরকে বের করে নিয়ে আসা হয়। অদূর অতীতে এমন কোন ঘটনা শোনা হয়নি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ খবর আসে সেটি বোম ছিলই না।
- গোলপোস্ট নেই
গোলপোস্টের অভাবে ম্যাচে পরিত্যক্ত কিংবা পিছিয়ে যেতে শুনেছেন কখনো? নিশ্চয়ই শোনেননি। কিন্তু ইতিহাসে এমন ঘটনাও ঘটেছে। ইংল্যান্ডের সাউথ-ওয়েস্ট পেনিন্সুয়ালা প্রথম ডিভিশন ইস্ট জোনের একটি ম্যাচ ঠিক গোলপোস্টের অভাবেই ৩ দিন পিছিয়ে গিয়েছিল।
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ম্যাচটি হবার কথা ছিল টেইনমাউথ ও ক্রেডিটনের মধ্যে। টেইনমাউথ গোলপোস্ট জোগাড় করতে ব্যর্থ হয় এবং ক্রেডিটনের মাঠে সেদিন অন্য একটি অনুষ্ঠান থাকায় ম্যাচটি পেছাতেই বাধ্য হয় ম্যাচ সংশ্লিষ্টরা।
- ফোম চিজ উৎসব
এটা ঠিক বাতিল নয়। একটা উৎসবের কারণে ম্যাচের স্থানান্তরিত হওয়ার ঘটনা।
সামারসেট, ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় একটি শহর ফ্রোম। তাদের একটি বিখ্যাত উৎসব রয়েছে ‘ফ্রোম চিজ শো’। উৎসবের দিনে প্রায় হাজার দশেক মানুষের সমাগম ঘটে ছোট্ট শহরটিতে। ২০১৫ সালে সেদিন একটি ফুটবল ম্যাচ থাকায় তা পার্শ্ববর্তী অন্য শহরে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় ক্লাব, তথা লিগ সংশ্লিষ্টরা। চিপেনহাম শহরে এই বার্ষিক ডেইরি উৎসবের জন্য ম্যাচটি স্থানান্তরিত করা হয়।
- গুজব
প্রিমিয়ার লিগে ব্ল্যাকবার্ন রোভারের বিপক্ষে এক ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগে মিডলসবার্গ এফসি এক গুজব রটিয়ে দেয়। তাদের প্লেয়ারেরা কোন এক ফ্লুতে আক্রান্ত। তাদের মূলত ইনজুরি সমস্যা ছিল এবং তাদেরকে যুবদল নিয়ে খেলতে হতো। এমন পরিস্থিতিতে তারা গুজন রটিয়ে খেলাটি পরিত্যক্ত করায়। পরবর্তীতে তাদেরকে ৫০,০০০ পাউন্ড জরিমানা করা হয় এবং তাদের তিন পয়েন্ট কাটা হয়। মজার বিষয় তারা দুই পয়েন্টের জন্য অবনমিত হয়ে যায় প্রিমিয়ার লিগ থেকে।
- কনসার্ট-অঘটন
পপ সম্রাজ্ঞী ম্যাডোনার একটি কনসার্টকে কেন্দ্র করে স্টেজ বানানো হয়েছিল ফেঞ্চ ক্লাব মার্শেই এফসি এর ঘরের মাঠ ভেলোড্রম স্টেডিয়ামে। কিন্তু সেই স্টেজ ভেঙে পড়ে যায় এবং দু’জন শ্রমিকের মৃত্যুতে স্টেডিয়ামে তদন্ত চলে। সে কারণে মার্সেই এফসি তাদের দ্বিতীয় হোম ম্যাচটি খেলতে অপারগতা জানায় এবং ম্যাচটির তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
- আলোক স্বল্পতা
১৯৯৬ সালে স্কটল্যান্ড ও এস্তোনিয়ার মধ্যকার ম্যাচটি প্রথমে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা কারণ দেখায় ভ্যেনুর ফ্রাডলাইটের আলোস্বল্পতা। ফিফা খেলার সময় পরিবর্তন করে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার পরিবর্তে বিকাল তিনটায় নিয়ে আসে। এতে আবার এস্তোনিয়ার খেলোয়াড়েরা খেলতে অসম্মতি জানালে, রেফারি খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। পরবর্তীতে অন্য ভ্যেনুতে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
- যুদ্ধ
১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন গার্নসে নামক এলাকার দখল ছিল জার্মানির নাৎসি বাহিনীর। সেখানে থাকা যুদ্ধবন্দীদের সাথে স্থানীয়দের একটি মাচের আয়োজন করার কথা থাকলেও ম্যাচটি পরবর্তীতে পরিত্যক্ত করা হয়। নাৎসি বাহিনী আশঙ্কা করে বন্দিরা পালানোর চেষ্টা চালাতে পারে ম্যাচটিকে উপলক্ষ করে।
ভবিষ্যতেও আমরা হয়ত আরো উদ্ভট কোন কারণে, অধির আগ্রহে অপেক্ষায় থাকা কোন এক ম্যাচকে পরিত্যক্ত হতে দেখবো। অনিশ্চয়তাই তো এই ফুটবল খেলাটার প্রতি আমাদের মায়া, আবেগ, ভালবাসা বাড়ায়।