স্মৃতির ডালপালা: ভারতের প্রথম দিবারাত্রীর ম্যাচ

সিডনির পর বিশ্বের দ্বিতীয় শহর হিসেবে দিন-রাতের ম্যাচ কোথায় আয়োজিত হয়? ক্রিকেট কুইজে প্রশ্নটা টাই-ব্রেকিং প্রশ্ন হতে পারে। মেলবোর্ন না, ইংল্যান্ডের কোনো মাঠ তো নয়ই, নিউজিল্যান্ডের কোনো মাঠ না। খোদ দিল্লীতে। কিন্তু কোটলায় না। জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে।

যে মাঠে ১৯৮২ সালে এশিয়ান গেমস ও ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমস খেলা হয়েছিল। এই মাঠ ক্রিকেটের জন্যে মাত্র দুবারই ব্যবহার হয়েছিল। দুটি ম্যাচই খেলা হয় নৈশালোকে। দুটি ম্যাচেই আশ্চর্য্যজনক ভাবে জয়ী দলের সর্বোচ্চ স্কোরারের নাম কেপলার ওয়েসেলস। প্রথম ম্যাচে ওয়েসেলস করেন ১০৭, দ্বিতীয় ম্যাচে ৯০।

তবে দুটি ম্যাচ অবশ্য দুটি আলাদা দেশের হয়ে খেলেন। প্রথমটি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে, দ্বিতীয়টি দক্ষিণ আফ্রিকার পুনরাবির্ভাব সিরিজে তাদের অধিনায়ক হিসাবে। প্রথম ম্যাচটি খেলা হয়েছিল ১৯৮৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। একটু বিশদে বলা যাক।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমটি মধ্যবয়স্ক ক্রিকেট প্রেমীদের ভালো মনে থাকার কথা। সেই মরসুমেই তো কপিল দেব জীবনে প্রথম ও শেষবারের জন্যে বাদ যান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে কলকাতা টেস্টে কপিল বাদ যান, সেই টেস্টেই আবার হায়দরাবাদের এক ছিপছিপে তরুনের অভিষেক হয়। ইংল্যান্ড সেই সিরিজ জেতে। টেস্ট ও ওয়ানডে দুটোই। তবে সেবার ভারত সফরে ইংল্যান্ড ছাড়াও ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়াও এসেছিলো।

শুধুমাত্র একদিনের ম্যাচ খেলতে। সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিল্লীর জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে হয়। এবং নৈশালোকে। এই খেলাটি বোধহয় চরম বিস্মৃত। তাই আজ কাউকেই এ নিয়ে আলোচনা করতে দেখলাম না। খেলাটি হয় ৪৮ ওভারের। অস্ট্রেলিয়া টসে জিতে ব্যাট নেবার পর ওয়েসেলসের ১০৭ ও কিম হিউজ ৭২ রান করেন। অস্ট্রেলিয়া শেষ করে ২২০ তে। ওয়েসেলস ও হিউজ ছাড়া দুই অংকের রান করেন একমাত্র গ্রাহাম ইয়ালোপ।

ভারতের ইনিংস ১৭২ রানেই থেমে যায়। কপিল দেব (৩৯) ও দিলীপ ভেঙসরকার (৩৩) ছাড়া কেউ সেরকম লড়াইও দিতে পারেননি। গাভাস্কার ও পাতিল কুড়ির কোঠায় রান করেন। কার্ল রাকেমন ৪ উইকেট পান। বাঁহাতি স্পিনার টম হোগান নেন তিন উইকেট। একটি ম্যাচ রিপোর্টে দেখলাম, অস্ট্রেলিয়ার উইকেট রক্ষক ওয়েন ফিলিপ্স নাকি দিল্লির ফ্লাডলাইটের কারণে স্পিনার হোগানের বিরুদ্ধেও কয়েকপা পিছনে দাঁড়িয়ে কিপ করেন।

অস্ট্রেলিয়া সেই সিরিজ জেতে ৩-০। ৫ ম্যাচের সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচ ভেস্তে যায়। ভারতে এরপর পরবর্তী দিন রাতের ম্যাচটিও এই মাঠে হয়। ওই ওপরে লিখলাম, দক্ষিণ আফ্রিকার পুনরাবির্ভাব সিরিজে। নেহেরু স্টেডিয়ামের পর তৃতীয় শহর হিসাবে নৈশালোকে একদিনের ম্যাচ হয় মেলবোর্নে। ভারতের মাঠে নিয়মিত দিন-রাতের ম্যাচ শুরু হয় হিরো কাপে।

তাও তা নিতান্তই অনিয়মিত ছিল। বছরে খান দুয়েক দিন রাতের ম্যাচ হতো। ২০০০ সাল অব্দিও ভারত লাল বলে একদিনের সিরিজ খেলেছে। কাজেই ১৯৮৪ সালে দাঁড়িয়ে ভারতের মাটিতে দিন-রাতের ম্যাচ যথেষ্ট ঐতিহাসিক। তবে ইতিহাসেরও কিছু কিছু পাতা থাকে, অবহেলায় আবৃত। ক্রিকইনফোর কল্যানে তা মাঝে মধ্যে একটু নেড়ে ঘেঁটে দেখা হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link