ছেলেটা ছোট রান-আপে এত জোরে কী করে বল করে, সেটাই সবার কাছে বিস্ময়। ছোট রানআপ হলেও অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটে আসত, ঝাঁকড়া চুলগুলো পিঠের ওপর নাচত, তারপর ছোট্ট একটা লাফ, বাঁ-হাত মাথার ওপর ঘুরিয়ে তার বিষাক্ত ইয়র্কার ধেয়ে যেত প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের দিকে।
তাঁর হাবভাব, চুলের কায়দা, সব তার ক্যাপ্টেনের মতো। মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা শুরু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তার আগুন ঝরানো বাউন্সারগুলো বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের হাড় হিম করে দিত। ইনসুইংগারগুলো তীরের ফলার মতো বিঁধতে চাইত উইকেটকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্বাডোজে টেস্ট চলছে। সবুজ পিচ। এমন পিচই তো সে চায়। উপমহাদেশে এমন পিচ কোথায়?
অধিনায়ক তাঁর হাতে বল তুলে দিল। সামনে আইজ্যাক ভিভিয়ান আলেকজান্ডার রিচার্ডস। চিউয়িং গাম চিবোতে চিবোতে এমন ভঙ্গিতে ব্যাট করেন ভদ্রলোক, যেন পার্কে হাওয়া খেতে এসেছেন। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছয় মারেন, যেন মশা মারছেন। স্টেপ আউট কাকে বলে জানেনই না যেন। হুক করা তো বাঁ-হাতের খেল!
ছেলেটির বয়স সবে কুড়ি। সামনে ভিভ রিচার্ডস তো কী হয়েছে, দেখে নেবে সে। ছ-ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার ওয়াসিম দুরন্ত গতিতে ছুটে এসে প্রথম বলটাই বাউন্সার দিল। ভিভ ডাক করতে গিয়েও পারল না, মাথা থেকে টুপিটা পড়ে গেল।
সরাসরি পরস্পরের দিকে তাকাল তাঁরা। ভিভের ভ্রূ কুঁচকে গেছে। ওয়াসিমের চোখে কৌতুক।
ওয়াসিম প্রচণ্ড খুশি হল এবং তাঁকে লেখার অযোগ্য এমন এক গালি দিয়ে বসল। ভিভ বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি ভিভ রিচার্ডস, তাঁকে গালি দিচ্ছে একটা রোগাপটকা বাচ্চা ছেলে!
পরের বল আবার বাউন্সার, আবার ভিভের টুপি খুলে মাটিতে, ওয়াসিমের আনন্দের চোটে আবার গালিবর্ষণ।
এবার ভিভ প্রচণ্ড রেগে গিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে ব্যাট তুলে বলল, ‘হেই, আই উইল কিল ইউ’। ওয়াসিম তার অধিনায়ক ইমরানকে গিয়ে বলে যে, ভিভ আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। ইমরান বলেন, ‘তুই চালিয়ে যা, আমি বুঝে নেব’।
ইমরানের কথায় সাহস পেয়ে স্লেজিংয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিল এবং সেই ওভারেই বোল্ড করে দিল ভিভকে। বোল্ড করে প্রচণ্ড উচ্ছাসে ভিভের পাশে গিয়ে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে লাফালাফি শুরু করে দিল। ভিভ শান্তভাবে চিউয়িংগাম চিবোতে চিবোতে মাঠ ছাড়লেন।
খেলা শেষে পাকিস্তান দল তখন ড্রেসিংরুমে। ওয়াসিমের এক সতীর্থ তাকে এসে বলে, ভিভ রিচার্ডস তাকে বাইরে ডাকছেন। ওয়াসিম ঘাবড়ে গিয়ে দরজা খুলে উঁকি দেয়। দেখে খালি গা, একটা কালো শর্টস পরা, কাঁধের ওপর ব্যাটটা ঠিক গদার মতো ধরা – ভিভিয়ান অপেক্ষা করছেন তার জন্য। ওই মারাত্মক বাইসেপ আর ফোর-আর্মস দেখে ঘাবড়ে গিয়ে ওয়াসিম তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দেয়। ক্যাপ্টেন ইমরান খানকে গিয়ে বলে, ‘ইমরান ভাই, রিচার্ডস হমকো মারনে আয়ে।’
‘আচ্ছা’
‘আচ্ছা কেয়া! আপ বোলেথে আপ দেখলেঙ্গে …’
‘হা, ও গ্রাউন্ডমে বোলাথা। গ্রাউন্ডকে বাহার তেরা প্রবলেম, খুদ লিপটো’।
ওয়াসিম কী বলবে ভেবে পায় না। একটু অপেক্ষা করে ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা ভিভের পায়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষমা চাইতে থাকে। তারপর মাথা তুলে দেখে ভিভ হাসছেন। পেছনে তাকিয়ে দেখে তার ক্যাপ্টেন হাত দুটো বুকের কাছি আড়াআড়ি ভাঁজ করে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে।