প্যান্ডোরা পেপারস: সম্পদ গোপন করেছেন শচীনও!

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ড গড়ে সবসময়ই আলোচনায় ছিলেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার। ২০১৩ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর আবারো নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। বিতর্কিত ‘প্যান্ডোরা পেপার্সে’ নাম এসেছে শচীন টেন্ডুলকার সহ তাঁর পরিবারের আরো দুই জনের।

২০১৬ সাল থেকে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে সাস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদার হিসেবে যুক্ত হন শচীন। শুধু শচীনই নয় এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন শচীনের স্ত্রী অঞ্জলী টেন্ডুলকার এবং তার বাবা আনন্দ মেহতা। এই প্রতিষ্ঠানটির বিও’এর পদে ছিলেন শচীন ও তাঁর পরিবার। যদিও ২০১৬ সালে সেই বিনিয়োগের টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয় বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

ন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর প্রকাশিত প্যান্ডোরা পেপারসে আরো অনেক বৈশ্বিক বড় বড় নামের সাথে শচীন ও তাঁর পরিবারের নামও উঠে এসেছে। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, সর্ব প্রথম ২০০৭ সালে প্যান্ডোরা রেকর্ডসে সাস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নাম উঠে আসে।

২০১৩ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর থেকে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে রাজ্যসভার একজন সদস্য ছিলেন শচীন। এর মাঝেই ২০১৬ সালে সাস ইন্টারন্যাশনালের সাথে যুক্ত হন তিনি। সম্প্রতি সাড়া জাগানো ‘প্যান্ডোরা পেপারস’ কাণ্ডে বিভিন্ন দেশের অনেক বড় বড় নাম বেড়িয়ে এসেছে। কর ফাঁকি দিয়ে অর্থ লুকিয়ে রাখতেই এমন কাণ্ড করেছেন তাঁরা। আর এই তালিকায় নাম এসেছে শচীন টেন্ডুলকারেরও!

সাস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড একটি শেয়ারভিত্তিক লিমিটেড কোম্পানি। তাঁরা ৫০ হাজার শেয়ার ইস্যু করেছে, যার প্রতিটির মূল্য এক ডলার। ২০০৭ সালের ১০ আগস্ট কোম্পানিটি গড়ে তোলা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুলোতে ওই কোম্পানির প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় সেখানে শচীনের মোট ৯ টি শেয়ার আছে! যার ভারতীয় অর্থে মূল্য দাঁড়ায় ৭ কোটি রূপি। শচীনের স্ত্রী অঞ্জলির ১৪ ও তার বাবা মেহরার ছিলো ৫ টি শেয়ার। শচীনের স্ত্রীর শেয়ারের মূল্য ১১ কোটি ও মেহরার আছে ৪ কোটি রূপি।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা সহ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির তথ্য ফাঁসের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে বলেও জানা যায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের কিছু ঘনিষ্ঠ লোক সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটির দেশের বড় বড় নেতা এবং প্রভাবশালীরা কর ফাঁকি দিয়ে বড় রকমের অর্থ এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়।

বিভিন্ন দেশের বড় বড় সেলিব্রিটি সহ ফুটবলার এবং অনেক নামকরা নেতাদের নামও এসেছে এই কেলেঙ্কারিতে। শচীন ছাড়াও এই তালিকায় আছেন আরো ৬ ভারতীয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৯১ টি দেশের রাজনৈতিক বড় বড় নেতাসহ বহু সেলিব্রিটিদের নাম উঠে এসেছে এই তালিকায়।

পানামাভিত্তিক আইনী প্রতিষ্ঠান অ্যালকোগ্যালের অনুসন্ধানে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।  তাঁদের তদন্তে দেখা গেছে – শচীন ও অঞ্জলি নিজেদেরকে ‘পলিটিক্যালি এক্সপোজড পারসন’ (পিইপি) হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছেন। পিইপির একটি রেজিস্ট্রিতে শচীন টেন্ডুলকার নিজেকে একজন এমপি বলে একটি হিসাবনামা দেখিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ থাকা ক্যাটাগরিভুক্ত হন।

তবে, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শচীন টেন্ডুলকারের আইনজীবী। তিনি বলেছেন শচীনের সব কিছুই বৈধ এবং দেশের কর আইন মেনেই তিনি সবকিছু করেছেন। এখানে অবৈধ কোনো কিছুই তিনি করেননি।

তিনি বলেন, ‘শচীনের বিদেশে বিনিয়োগ ছিলো। কিন্তু তা আইন মেনেই করা হয়েছে। কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য সঠিক নয়। আইন না মেনে কোনো বিনিয়োগ করা হয়নি। বৈধ উপায়ে সব কিছু কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তবেই সেই বিনিয়োগ করা হয়েছে।’

ব্যাটসম্যান শচীনের অনেক রহস্যই বিশ্বের নামজাদা সব বোলারদের কাছে ছিল অজানা। তাই তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। তবে, কেবল নিজের ব্যাটিংয়ের রহস্য নয়, নিজের সম্পদও গোপন করেছেন বলে দাবি প্যান্ডোরা পেপার্সের। এই রহস্যের নিশ্চয়ই আরো ডালপালা বের হবে – অপেক্ষা করা যাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link