এই মুহূর্তগুলোর জন্যই তিনি সাকিব

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দ্বিতীয় অংশে আরব আমিরাতে ম্যাচের পর ম্যাচ বেঞ্চ গরম করছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। সাকিব সুযোগ পাচ্ছেন না, সাকিবের আইপিএলে যাওয়া উচিত হয়নি – এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছিলো আলোচনা-সমালোচনা।

টুর্নামেন্টের একদম শেষভাগে সুযোগ পেয়েই করলেন বাজিমাত। টানা তিন ম্যাচেই দলের জয়ে অবদান রাখলেন সাকিব। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে শেষ ওভারে সাকিবের ব্যাটে চড়েই কিনা দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে পা দিলো কলকাতা নাইট রাইডার্স।

ম্যাচের আগে গুঞ্জন ছিলো আন্দ্রে রাসেল ফিট থাকায় একাদশে সুযোগ পাবেন না সাকিব। তবে, সব শঙ্কা কাটিয়ে গতকাল এলিমিনেটরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পান তিনি।

প্রথম বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রান দেন তিনি। তাঁর টাইট বোলিংয়ে চাপের মুখেই ছিলো ব্যাঙ্গালুরু। এরপর সুনিল নারিনের ৪ উইকেট শিকারে অল্প রানেই থামে বিরাট কোহলির দল। ১৩৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শেষ ওভারে কলকাতার জয়ের জন্য প্রয়োজন ৭ রান! এদিকে ঠিকমতো ব্যাটে বলে করতে পারছিলেন না পুরো আসরেই অফ ফর্মে থাকা ইয়ন মরগ্যান। তাই ভরসাটা ছিলো সাকিবের উপরই।

শেষ ওভারে স্ট্রাইকে তখন সাকিব। বল হাতে সেই ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান! তাঁকে অবশ্য ভোলার কথা নয় সাকিবের। এইতো সবশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ঘরের মাঠে সাকিবকে এক ওভারে ৫ ছক্কা মেরেছিলেন তিনি! এবার সেই ক্রিশ্চিয়ানের বলেই কিনা দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন সাকিব।

প্রথম বলেই ‘স্কুপ’ করে চার মারেন তিনি। সেই সাথে জয়ের সমীকরণটাও সহজ করে দেন সাকিব। শেষ ৫ বলে দরকার ৩ রান! পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের হাতে নিয়ে নেন সাকিব। তৃতীয় বলে আরেক রান নিয়ে স্কোর লেভেল করেন মরগান। এরপর ক্রিশ্চিয়ানের করা ওভারের চতুর্থ বলে সহজ রান নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন সাকিব।

কিছুদিন আগেও সাকিবই কলকাতার একাদশে ছিলেন উপেক্ষিত! অপরদিকে, বাজে পারফরম্যান্সের পরেও কলকাতার একাদশে স্রেফ অধিনায়ক কোটায় খেলে যাচ্ছিলেন ইয়ন মরগ্যান! মরগ্যানের দলে থাকা নিয়েও উঠছিলো নানান প্রশ্ন। মাঝে আন্দ্রে রাসেলের ইনজুরিতে সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিলো সাকিব সুযোগ পাবেন। কিন্তু দলে নেওয়া হলো আরেক কিউই পেসার টিম সাউদিকে!

এরপর লকি ফার্গুসনের ইনজুরিতে এক বোলার কমিয়ে টিম সেইফার্টের মতো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান দলে নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে কলকাতার টিম ম্যানেজম্যান্ট। মাত্র চারজন জেনুইন বোলার নিয়ে সাত নম্বরে ব্যাটসম্যান খেলানোর যৌক্তিকতা কতটুকু সে নিয়ে সমালোচনাও করেন জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার আকাশ চোপড়া।

বিশেষভাবে সমালোচনার তীরটা উঠে কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের উপরই। নিজ দেশের ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দেওয়ায় ফেসবুক সহ টুইটারে তীব্র সমালোচনার শিকার হন তিনি।

গ্রুপ পর্বে তখন আর মাত্র ২ ম্যাচ বাকি! বিপাকে পড়ে ম্যাককালাম এবার আগেই বলে দিলেন সাকিব একাদশে থাকছেন। এরপর সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে পেলেন সুযোগ। আর আইপিএলের দ্বিতীয় অংশে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে শিকার করলেন ১ উইকেট। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে বল হাতে প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে শিকার করেন যশস্বী জ্যাসওয়ালের উইকেট। এরপর পুরো ইনিংসেই আর বল পাননি তিনি!

এ নিয়েও গত ম্যাচের পর সমালোচনার মুখে পড়েন মরগান। ম্যাচ জিতলেও মরগানের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন বাংলাদেশি সমর্থকরা।

আইপিএলের প্রথম অংশে ভারতে প্রথম তিন ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছিলেন সাকিব। তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে ৩৮ এবং বল হাতে ১০ ওভারে ৮.১ ইকোনমিতে ৮১ রান দিয়েছিলেন তিনি! এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পরই দল থেকে বাদ পড়েন। তাঁর জায়গায় নিয়মিত খেলছিলেন সুনীল নারাইন। তবে মরগ্যানের একাদশে থাকা নিয়ে উঠছিলো নানান প্রশ্ন! অধিনায়ক কোটায় মরগ্যানকে খেলানোর যৌক্তিকতা কতটুকু সে নিয়েও চলছিলো আলোচনা। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে বেশ দুর্দান্ত পারফরম করলেও আইপিএলের দ্বিতীয় অংশে টিম কম্বিনেশনের কারণে সুযোগ পাচ্ছিলেন না সাকিব।

এবার অন্তিম মূহুর্তে সুযোগ পেয়ে অনবদ্য পারফরম্যান্স দিয়ে ফেসবুক সহ টুইটারে ভক্তদের প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। ২০১২ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ফাইনালে বেন হিলফেনাসকে স্কুপ শটে চার মেরেছিলেন সাকিব। সাকিব-মনোজ তিওয়ারির ব্যাটে সেবার ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয় কলকাতা। গতকাল আবারো একই শটে কলকাতাকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান সাকিব! নার্ভ ধরে রেখে অভিজ্ঞতার পূর্ণ প্রতিফলনটাই দেখালেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link