এই মুহূর্তে সাদা বলের ক্রিকেটে বিশ্বের সবচেয়ে সফল ওপেনারদের একজন রোহিত শর্মা। ভারতের এই ওপেনার রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরে রীতিমত রাজত্ব করছেন। আন্তর্জাতক ক্রিকেট, আইপিএল সবজায়গাতেই সমান কৃতিত্বের সাথে খেলে যাচ্ছেন তিনি। তবুও রোহিতের ক্যারিয়ারে আছে এক অপূর্ণতা। কিছুতেই যেন সেই সোনার হরিণের দেখা পাচ্ছেন না রোহিত।
বিরাট কোহলি অধিনায়ক হিসেবে কোন শিরোপা জিতেননি এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। তবে ক্রিকেটার কোহলির ঝুলিতে একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস আছে। ২০১১ বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না রোহিত শর্মা। হ্যাঁ, তিনি ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন, ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও জিতেছেন। তবে, তাঁর ক্যারিয়ারটা আসলে শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের পর থেকে। ২০১২ সালেই যেমন তিনি ১৩ টি ওয়ানডেতে রান তুলেছেন মোটে ১২.০২ গড়ে।
এই বিশ্বকাপের পর বিরাট কোহলি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্বকাপের পর দায়িত্বটা হয়তো তাঁর কাঁধেই উঠবেই। তবে তারচেয়ে বেশি জরুরি রোহিতে একটা আন্তর্জাতিক শিরোপা জয় করা। তবে আগামী দুই বছরে তাঁর সামনে আছে তিনটা সুযোগ। এবছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগামী বছরও আছে আরেকটি বিশ্বকাপ। এছাড়া ২০২৩ সালে ভারতে বসতে যাচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
আগে বর্তমানেই নজর দেয়া যাক। এবারে বিশ্বকাপ শুরুর আগে খুব একটা সুখকর অবস্থায় নেই ভারত দল। অধিনায়কের ফর্ম ও দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া, কোচ নিয়ে আলোচনা সবমিলিয়ে ভারত দলে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। আবার রোহিতের ফর্মও বিশ্বকাপের শুরুটায় যুৎসই ছিল না, পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ শুরু করেছেন গোল্ডেন ডাক দিয়ে। আবার সংবাদ সম্মেলনে একজন তো একাদশে রোহিতের জায়গা নিয়েও তুলেছেন প্রশ্ন।
তবে, সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে এবার রোহিতের কাঁধে বড় দায়িত্ব। অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে সাপোর্ট দেয়াও তাঁর অন্য্যম দায়িত্ব। এছাড়া ভবিষ্যতে তাঁর নেতৃত্বে দল কেমন হবে সেটা দেখানোরও বড় মঞ্চ এবারের বিশ্বকাপ।
ওদিকে আইপিএলের সফলতম অধিনায়ক রোহিত শর্মা। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে ঠিক যা করতে চেয়েছেন তাই হয়েছে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাঁর নেতৃত্বে মোট পাঁচ বার আইপিএলের শিরোপা জিতেছে। তবে ভারতের জার্সি গাঁয়ে যেদিন রোহিত বিদায় নিবেন সেদিন নিশ্চয়ই নিজের দাপটে একটা শিরোপা জিততে না পারার বেদনা থেকেই যাবে। এটা নিশ্চয়ই হতে দিতে চাইবেন না রোহিত। তাঁর সামনে এখনো আছে ঠিক তিনটি সুযোগ।
এছাড়া বড় ম্যাচে রোহিত দ্য হিটম্যানের জুড়ি নেই। ২০১৯ বিশ্বকাপে টানা পাঁচটি সেঞ্চুরি করে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হয়েছিলেন। এছাড়া ২০২০ আইপিএলের ফাইনালেও দারুণ এক ইনিংস খেলে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। এছাড়া ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সেঞ্চুরিটিও অবিস্মরণীয়। ফলে এবারের বিশ্বকাপেও নিজের জাত চেনাতে চাইবেন।
সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে রোহিত শর্মার অর্জনের শেষ নেই। নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন বিশ্বসেরাদের কাতারে। তবে নিজের সামর্থ্যে একটি বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষুধা রোহিতের মধ্যে নিশ্চই আছে। বিদায় বেলায় নিশ্চয়ই এই আক্ষেপ নিয়ে চলে যেতে চাইবেন না রোহিত।
ক্যারিয়ারের শুরুর অনেকটা বছর সাদামাটাই কেটেছে রোহিত শর্মা। লম্বা সময় তিনি দলে জায়গা ধরে রাখতে সংগ্রাম করেছেন। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখন তিনি কেবল ভারতেরই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান নন, বিশ্বেরও এই মহূর্তের অন্যতম সেরা। আর অনেকের মতে, সময়ের অন্যতম সেরা পাওয়ার হিটারও তিনি। সেজন্যই তিনি হিটম্যান। তবে, নিজের ব্যাটে, দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে বৈশ্বিক বড় শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ তাঁর এখনও আছে। নিশ্চয়ই শেষ বেলায় সেই আক্ষেপটা মিটিয়ে ফেলে সব হিসাব চুকিয়ে দিতে চাইবেন হিটম্যান।