কপিল দেবের কথাটা বাংলাদেশে কেউ যদি বলত!

‘আমার মনে হয় নির্বাচকদের উচিত সিনিয়র ক্রিকেটারদের ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। নির্বাচকদের উচিত আইপিএলে যেসব তরুণ ক্রিকেটাররা পারফরম করছে তাদের নিয়ে ভাবা। এখন কি সময়না তাদেরকে সুযোগ দেওয়ার? তাঁরা যদি হারে তাতেও ক্ষতি নেই, কারণ সেখান থেকে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। কিন্তু যদি এখন বড় বড় নামধারী ক্রিকেটাররা এখন পারফরম করতে না পারে এবং বাজে ক্রিকেট খেলে তাহলে অবশ্যই অনেক সমালোচনা হবে। বিসিসিআই’র উচিত এই ব্যাপারে ভাবা এবং তরুনদেরকে দলে সুযোগ দেওয়া।’

উপরের কথাগুলো বলেছেন সাবেক বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় অধিনায়ক কপিল দেব। ভারতের এতো এতো সাফল্যর পরেও বিশ্বমঞ্চে দুই ম্যাচে ভরাডুবিতেই চটেছেন সাবেক এই অধিনায়ক। অবশ্য তিনি মোটেও যে কথাগুলো ভুল বলেননি। অস্ট্রেলিয়ার ও ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয়, ঘরের মাটিয়ে অভাবনীয় সাফল্যর পরেও তিনি চান বড় বড় নামগুলোর প্রতি নির্বাচকরা যাতে নজর দেন। আর পারফরম করতে না পারলে বাদ দেওয়ার ইঙ্গিতও দেন সাবেক এই অধিনায়ক।

কপিল আরো বলেন, ‘যদি অন্য দলের পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করে সেমিতে যাওয়া লাগে তাহলে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশংসা পাওয়ার মতো নয়। আপনি যদি বিশ্বকাপ জিততে চান কিংবা সেমিতে যেতে চান নিজের সামর্থ্য দিয়েই সেটা করুন। অন্য দলের উপর নির্ভর হওয়াটা মোটেও ভালো কিছু নয়।’

ঠিক ভিন্ন চিত্রটা যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে। ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মতো উইকেট বানিয়ে জিতলেও বিশ্বমঞ্চে খাচ্ছে নাকানিচুবানি। সিনিয়র ক্রিকেটাররা প্রায় ১৪-১৫ বছর ক্রিকেট খেললেও অভিজ্ঞার ঝুলি থেকে দলকে দিতে পারেননি কিছুই। বরং হতাশাজনক পারফরম্যান্স আর মাঠের বাইরে বিভিন্ন কারণে জন্ম দিয়েছেন সমালোচনার।

এতো বাজে পারফরম্যান্সের পরেও সিনিয়র ক্রিকেটারদের সিন্ডিকেট ভাঙার ব্যাপারে কেউ কি কথা বলেছেন? বোর্ডের কেউই এ বিষয়ে কথা বলেননি। দলে অভিজ্ঞ কয়েক সিনিয়র ক্রিকেটার থাকা সত্ত্বেও প্রসঙ্গ আসেনি তাদেরকে বাদ দেওয়ার। বরং পূর্বের ইতিহাস টেনে তাদেরকে ডিফেন্ড করেছেন অনেকেই। মুশফিকুর রহিমকে ওমানের বিপক্ষে আট উইকেটে নামানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলে বসেন, ‘মুশফিককে আপনি আটে খেলাতে পারেন না। সে ১৪ বছর বাংলাদেশ দলকে কি দিয়েছে সেটা একবার দেখুন!’

কপিল দেবের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলি এভাবে সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাজে পারফরম্যান্সের পরেও যদি ডিফেন্ড করা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত কি?!

প্রেস কনফারেন্সে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ‘পেইন কিলার’ আর মুশফিকের ‘আয়না’ প্রসঙ্গ নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি। সমালোচনার জবাবটা অন্য দেশে ব্যাট হাতে দিলেও আমাদের ক্রিকেটাররা দিয়েছেন প্রেস কনফারেন্সে। টানা ২০-২২ ম্যাচ বাজে পারফরম্যান্সের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ভালো ইনিংস খেলার পরই প্রেস কনফারেন্সে সমালোচকদের আয়নায় মুখ দেখতে বলেন মুশফিক! ম্যাচ হারের পর সাংবাদিকদের সামনে রিয়াদ জানান ‘পেইনকিলার’ নিয়ে খেলার কথা!

অন্যান্য দেশের কাছে পারফরম্যান্সটাই মূখ্য। সিনিয়র কি জুনিয়র সেটা নিয়ে তারা মোটেও চিন্তা করেন না। নিজের সেরাটা দিতে পারলে দলে থাকবে নয়তো সাইড বেঞ্চে! মিডল অর্ডার থেকে উঠে এসে অনেকেই এখন বিশ্বক্রিকেটে ত্রাস করছেন। মোহাম্মদ রিজওয়ান, জশ বাটলারদের দিকেই তাকান?! আর আমরা?

আফিফ হোসেন স্লগার না হওয়া সত্ত্বেও তাকে স্লগার বানানোর চেষ্টা মত্ত। সৌম্য সরকারকে কখনো ওপেনার, কখনো মিডল অর্ডারে নয়তো ফিনিশার! নেই কোনো জবাবদিহিতা। জাতীয় দলটা যেনো শেখার জায়গা!

আমাদের দেশে কপিল দেবের মতো সরাসরি সাহসী কথা বলার যোগ্য লোকের অভাব দেখেই হয়তো আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের এমন অবস্থা। সাধারণ দর্শকদের সমালোচনাতেই মিডিয়ার সামনে যারা আবেগ ঢেলে ইতিহাস টানেন, ক্ষোভ ঝাড়েন! জানতে ইচ্ছে করে, ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা যখন বিশ্বমঞ্চে খর্বশক্তির দেশগুলোর সামনেও ফিঁকে হয়ে যায় তখন কি আপনাদের গায়ে লাগে না?!

কপিল দেব ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত ভেবে সিনিয়রদের ব্যাপারে নির্বাচকদের ভাবতে বললেন। যেই সিনিয়র ক্রিকেটাররা শুধু সিরিজ জয়ই নয়, এর মধ্যে অনেকেই বিশ্বকাপ জয়েও রেখেছিলেন বড় অবদান। কিন্তু তাতে কি? প্রসঙ্গটা যখন জাতীয় দল! ভারতীয় ক্রিকেট! তখন কারো ব্যাপারেই ছাড় নয়। পারফরম করলে দলে থাকবে নয়তো বাদ। তরুনদের সুযোগ দিয়ে তৈরি করতে হবে।

পার্থক্যটা মানসিকতায়! এজন্য সবাই পারলেও আমরা পারছিনা। আবার বলতে হয়, ‘আমাদের হচ্ছে না!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link