যদু-মধু ও নাঈম

একাদশ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় না বললেই চলে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে বড় অভিযোগ।

এর মধ্যেও চলতি বছর টি-টোয়েন্টির ওপেনিং জুটিতে ১২ বার পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। ভুল পড়েননি একদম, ১২ বারই লিখেছি।

তবে, দুই একটা ব্যতিক্রম বাদে – এখানে একটা নাম ছিল কমন – মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ওপেনিংয়ে কখনো লিটন দাস, সৌম্য সরকার এসেছেন। টেস্ট মেজাজের সাইফ হাসান মেহেদী হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তকে খেলানো হয়েছে। এমনকি চেষ্টা করা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে দিয়েও, কেউ তেমন একটা না টিকলেও টিকে গেছেন নাঈম।

কেন? – এই কেন’র জবাবে টিম ম্যানেজমেন্টের যুক্তি হল – তাঁর ব্যাটে রান আছে। না, কথাটা ভুল নয়। সত্যিই টি-টোয়েন্টিতে রান করছেন নাঈম। কিন্তু, সেটা টি-টোয়েন্টির মেজাজের সাথে কতটা মানানসই?

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে ব্যর্থ নাঈম শেষ ম্যাচে ৪৭ রান করেছেন। তাতে বল খেলেছেন ৫০ টি। স্ট্রাইক রেট মাত্র ৯৪।

তিনি নিয়মিত রান করেন। দুই-তিন ইনিংস বাদে বাদে হাফ সেঞ্চুরিও করেন – কিন্তু তাঁর ব্যাটিংটা টি-টোয়েন্টিসুলভ নয় কোনো ভাই। নাঈমই এই ব্যাটিং অর্ডারের নষ্টের গোড়া!

নাঈমের ব্যাটিংটা বরং বেশি মানানসই ওয়ানডের জন্য। অথচ, সেখানে তিনি মাত্র সুযোগ পেয়েছেন দু’টি ম্যাচে। এটাও বাংলাদেশের নিয়মিত দৃশ্য। মারকুটে ব্যাটসম্যান বলে পরিচিত ইয়াসির আলী রাব্বি কিংবা পারভেজ হোসেন ইমনরা টি-টোয়েন্টি খেলারই সুযোগ পাচ্ছেন না, কিন্তু দিব্যি সাইফ হাসানের মত ‘টেস্ট ব্যাটসম্যান’ খেলে ফেললেন দু’টো টি-টোয়েন্টি। নাঈমও তাই!

ইমনকে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগেই প্রাথমিক স্কোয়াডে রাখা হয়েছিল। তাঁকে দিয়েই ওপেন করানোর আলোচনা ছিল। কিন্তু, অদ্ভুত ডান-বাম অজুহাতে তাঁকে স্কোয়াডেই রাখা হল না। আবার সাইফ যেই দুই ম্যাচে ব্যর্থ হলেন ডাক পরলো ইমনের। নির্বাচকরাও জানালেন, অভিষেক হবে ইমনের। কিন্তু হল না। তবে, ডান-বাম অজুহাত থেকে সরে আসলে বাংলাদেশ। ওপেন করতে নামলেন শান্ত ও নাঈম।

শান্ত আগের ম্যাচে রান পেলেও এবার পেলেন না। অন্যদিকে আগের দুই ম্যাচের রান ক্ষরা কাটালেন। কিন্তু, স্টাইলটা পাল্টালো না।

বছর জুড়েই নাঈমের ব্যাটিংয়ের টি-টোয়েন্টি ঘরানা এমনই। ২০২১ সালে তিনি ২৬ টি ইনিংস খেলেছেন ১০০.৩৪ স্ট্রাইক রেটে। ২০২০ সালে তিন ম্যাচের স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০, এর আগে ২০১৯ সালে তিন ম্যাচে স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩৩.৬৪। সেটাও কেবল ভারতের বিপক্ষে ৪৮ বলে ৮১ রানের ইনিংসের সুবাদে। সেটা না হলে, বাকি সময়টা ওই ১০০ বা তাঁর একটু এদিক-সেদিক স্ট্রাইক রেটেই ব্যাটিং করেছেন। তামিম ইকবালকে নিয়ে যে সমালোচনা হত, সেখানে নাঈম আরো এক কাঠি সরেস!

নাঈমের ব্যাটিং স্টাইলটা এখান থেকেই স্পষ্ট। তারপরও কেন টি-টোয়েন্টিতে বারবার তাঁর ওপরই ভরসা? টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে এটাও একটা প্রশ্নই – যার উত্তর কারো জানা নেই।

শুধু, নাঈম কেন – গোটা বাংলাদেশ দলই কি এই দোষে দুষ্ট নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দল করলো ১২৪ রান। ১২০ বলের মধ্যে ৫৮ টাই ছিল ডট বল। মানে বাকি ৬২ টি ডেলিভারি থেকে এসেছে ১২৪ রান। একটু স্ট্রাইক রোটেট করে খেললেই স্কোরটা সহজেই ১৬০ গিয়ে ঠেকতো।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link