ক্রিকেট দর্শক-সমর্থকদের ক্রিকেট ক্ষুধা নিবারণের বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ(আইপিএল)। বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট লিগের শুরু সেই ২০০৮ সাল থেকে। তারপর থেকে ক্রমশই খেলার মান এবং খেলোয়াড়দের উন্নয়নের পাশাপাশি অঢেল অর্থের ছড়াছড়িতে এই লিগে জায়গা করে নিয়েছে দর্শক-সমর্থক থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের ধ্যান-জ্ঞানে।
এখন ভারতের বেশিরভাগ উদীয়মান ক্রিকেটারদের স্বপ্ন থাকে আইপিএলে খেলার। শুধু যে খেলতে পারলেই খুশি তাঁরা বিষয়টা তেমন নয়। তাঁদের মধ্যে কাজ করে ভাল পারফর্ম করার ক্ষুধাও। কেননা বিশ্বের নানাদেশের সব বাঘা-বাঘা খেলোয়াড়রা আসেন এই ক্রিকেট লিগে অংশ নিতে। তাঁদের বিপরীতে কিংবা তাঁদের সাথে খেলে সেই সকল নামিদামি তারকাদের টপকে যাওয়াই থাকে উদীয়মান খেলোয়াড়দের লক্ষ্য।
ভারতীয় ক্রিকেটের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি আইপিএল সুযোগ করে দিয়েছে ভিন্নদেশি খেলোয়াড়দের মেলবন্ধনের। একই সাথে একটা লম্বা সময় ধরে খেলতে থাকা দুই খেলোয়াড়ের মাঝে দৃঢ় ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের এক ব্রিজ হিসেবে কাজ করছে আইপিএল। যার ফলশ্রুতিতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সাথে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বন্ধুত্ব হবার পাশাপাশি বিদেশি খেলোয়াড়দের মাঝেও বিস্তার লাভ করছে বন্ধুত্বের মধুর সম্পর্কের।
১৪টি মৌসুম পার করা আইপিএলে তৈরী হওয়া কিছু বন্ধুত্বের গল্প থাকছে আজ।
- বিরাট কোহলি- এবি ডি ভিলিয়ার্স
তালিকার শুরুতেই থাকছে বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। ভারতীয় বিখ্যাত শোলে সিনেমার জয়-ভিরুর বন্ধুত্ব বন্ধনের সাথে তুলনা করা যায় বিরাট কোহলি ও ডি ভিলিয়ার্সের বন্ধুত্বের সম্পর্কের। প্রায় চৌদ্দ বছর যাবৎ তাঁরা এক সাথে খেলছেন রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে।
কতশত নান্দনিক জুঁটি গড়ে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন এই দুই খেলোয়াড় তাঁর হিসেব করা বেশ কঠিন। মাঠের জুঁটি পরিণত হয়েছে বন্ধুত্বে। এমনকি এই দুইজনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাপিয়ে গিয়েছে দুই পরিবার অবধি।
- মহেন্দ্র সিং ধোনি- সুরেশ রাইনা
একটা ঘটনা দিয়ে খুব সহজেই সংজ্ঞায়িত করা যাবে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সুরেশ রাইনার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের। ২০১৬ সালে যখন ভারতের অধিনায়ক হিসেবে ধোনি ব্যস্ত অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পরিকল্পনা নিয়ে ঠিক তখন ভূমিষ্ট হয় ধোনির প্রথম সন্তান। ধোনি অবধি সেই খবর পৌঁছে দিতে তাঁর স্ত্রী ফোন করেছিলেন সুরেশ রাইনাকে। স্পষ্টতই তাঁদের বন্ধুত্বের ঘনিষ্টতা আন্দাজ করে নেওয়া যায়।
২০০৮ সালের আইপিএলের প্রথম আসর থেকে দুইজন খেলছেন একই সাথে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছরের বন্ধুত্বের যাত্রা অব্যাহত রয়েছেন এখন অবধি। তাঁদের এই গভীর সম্পর্কে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে আইপিএল। ধোনি রাইনা দুই বন্ধু একই সাথে ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
- লোকেশ রাহুল- মায়াঙ্ক আগারওয়াল
অনূর্ধ্ব-১৯ থেকেই একসাথে রয়েছেন লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল। বর্তমানে ভারতের হয়ে করছেন টেস্ট ওপেনিং। তবে তাঁদের বন্ধুত্বকে দৃঢ় করেছে আইপিএলের দল পাঞ্জাব কিংস।
ভারতীয় জাতীয় দলের পাশাপাশি এই দুই স্টাইলিশ ব্যাটার ওপেনিং করে থাকেন পাঞ্জাব কিংসেরও ইনিংস। আইপিএলের কল্যাণেই হয়ত তাঁদের বন্ধুত্বের জুঁটি বেশ কাজে দিচ্ছে ভারতের হয়ে বাইশ গজে।
- রোহিত শর্মা-যুজবেন্দ্র চাহাল
রোহিত শর্মা ও যুজবেন্দ্র চাহালের মধ্যকার সম্পর্কটা বন্ধুত্বের অপেক্ষা ভ্রাতৃত্বের বেশি। ২০১১ সালে যুজবেন্দ্র চাহাল তাঁর আইপিএল যাত্রা শুরু করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। সেখানেই তাঁর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে অধিনায়ক রোহিত শর্মার। তারপর থেকেই দু’জনে সোশ্যাল মিডিয়াতে একজনের বিপক্ষে আরেকজনকে নিয়ে করা ঠাট্টা চোখ এড়ায় না দর্শকদেরও।
এভাবেই শুধু ক্রিকেটের উন্নতিতে নয় ক্রিকেটারদের মাঝে দূরত্ব দূরীকরণেও অবদান রেখে যাচ্ছে আইপিএল, সেই ২০০৮ সাল থেকে।