নতুন পাকিস্তানের ১০ নম্বর

নামের শেষে আফ্রিদি। বড় ভাই জাতীয় দলের ক্রিকেটার। একটু বড় হতে না হতে সম্পর্ক করে ফেললেন শহীদ খান আফ্রিদির কন্যার সাথে। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটার হতে আর কী চাই!

না। নামের ওজনে, পরিবারের ওজনে বা সম্পর্কের ওজনে এখানে আসেননি তিনি। নিজেকে বারবার প্রমাণ করেই এসেছেন। এবং ২০২১ সালে এসে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি থাকতে এসেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে চলতি বছরের সেরা উইকেট শিকারী হয়ে গেলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।

কানপুরে অশ্বিনের সামনে সুযোগ আছে শাহীনকে টপকানোর। তাতেও পাকিস্তানের এই ফাস্ট বোলারের বছরটা ম্লান হবে না। ৮ ম্যাচে ৪৪ উইকেট নিয়ে বছরটাকে যে নিজের জন্য অন্তত বাঁধাই করে রেখেছেন তিনি।

শাহীনের অবশ্য ক্রিকেটার না হয়ে যেন উপায়ই ছিলো না।

বড় ভাই রিয়াজ আফ্রিদি যখন জাতীয় দলে ডাক পেলেন, তখন শাহীনের বয়স মোটে চার। রিয়াজ জাতীয় দলের ক্যারিয়ার খুব বড় করতে পারেননি। একটি টেস্টেই শেষ হয়ে গেছে তার ক্যারিয়ার। তবে ক্রিকেটার চেনার চোখ ছিলো তার। ছোট্ট ভাইটাকে দেখে বুঝেছিলেন, তার মত মিডিয়াম পেসার নয়, এক সত্যিকারের ফাস্ট বোলার এসেছে তাদের পরিবারে।

শাহীনের শুরুর গল্পটা ক্লাসিক পাকিস্তানি ফাস্ট বোলারদের মত। গলিতে টেপ টেনিসে ঝড় তুলে শুরু। এরপর রিয়াজ খুব দ্রুত তাকে ক্রিকেট বলে খেলার ব্যবস্থা করে দেন। আর ১৪ বছর বয়স থেকেই শাহীন হয়ে ওঠেন পাকিস্তানের ‘নেক্সট বিগ থিঙ’।

২০১৫ সালে অল্প বয়সেই অনূর্ধ্ব ১৬ এক প্রতিভা বাছাই ক্যাম্পে তাঁকে দেখে অবাক হন কোচরা। তার উচ্চতা, শক্তি আর গতিতে মুগ্ধ সবাই। ফলে পরের বছরের অস্ট্রেলিয়াগামী অনুর্ধ্ব-১৬ দলে জায়গা হয়ে যায় শাহীনের।

কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে অভিষেকেই নেন ৮ উইকেট। এটা ছিলো শাহীনের ব্রেক থ্রু। ওখান থেকে জাতীয় দলে আসাটা ছিলো তার জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরব আমিরাতে টেস্ট অভিষেক হয়। ওই বছরই শর্টার দুই ফরম্যাটেও যাত্রা শুরু করেন। শুরু থেকে ঝলসাচ্ছিলেন শাহীন।

তবে এই ২০২১ সালের মত পারফরম্যান্স আগে কখনো করতে পারেননি। এ বছর গুনে গুনে ৪৪টি উইকেট নিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে। আপাতত বছরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি। সব ফরম্যাট মিলিয়েও খুব ভালো অবস্থায় আছেন শাহীন।

এ বছরে সর্বোচ্চ ৭১ টি আর্ন্তজাতিক উইকেট শিকার করেছেন তিনি। সমান উইকেট নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন সতীর্থ হাসান আলী।

পুরো ব্যাপারটা যে শুধু সংখ্যার নয়, সেটা এই চট্টগ্রামেই বোঝা গেলো। উইকেটে সেই অর্থে পেসারদের কিছু ছিলো না। কিন্তু উচ্চতা, গতি আর সুইং দিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন। কঠিনতম দ্বিতীয় ইনিংসে এসেই নিয়েছেন ৫ উইকেট।

শাহীন বোঝালেন, তিনি সত্যিই আফ্রিদি হতে চলেছেন। জার্সি নম্বরটা এমনিতেই ১০ নয়। এখন তিনি আর নেক্সট বিগ থিঙ নন, শুধুই বিগ থিঙ, কেবল পাকিস্তানের নয় – বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link