বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার একটা প্যাটার্ন আছে। মধ্যবিত্ত পরিবার অনেক কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে। তখন তাঁদের জীবনের শুরুর সময়টা থেকে অনেক কষ্টে টাকা জমাতে শুরু করে। আস্তে আস্তে ব্যাংকে টাকা জমতে থাকে, একটা বয়সে গিয়ে জমার পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু যে কষ্ট করে তাঁরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্তে পরিণত হয়েছে সেটা ভুলে না।
তাই দামী জিনিস ব্যবহার করতেও তাঁদের মানসিকতা আটকে যায়। বাসার সুন্দর কাপ-প্লেটে-গ্লাস সবসময় শোকেসেই থাকে। সেগুলোতে কখনো বাসার মানুষজনের খাওয়া হয় না। আবার বাচ্চারা একটু ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেই অভিভাবকেরা বলে ওঠেন রেস্টুরেন্টে গিয়ে টাকা খরচ করার কী দরকার, বাসায় তো খাবার আছে।
যদি কমিউটের জন্য খরচ করার টাকা থাকেও তবু বাড়ির ছেলেটা কষ্ট করে বাসে, হেঁটে বাসায় ফেরে, কলেজে-ভার্সিটিতে যায়। উদ্দেশ্য একটাই – টাকা জমানো!
হয়তো হঠাৎ একবারে একটু বেশি টাকা খরচ করে পরিবারসহ কখনোই বিদেশ ঘুরতে যাওয়া হয় না। কারণ টাকা খরচ করবার সেই মানসিকতাই নাই! অফিশিয়াল ভিজিটে বাড়ির কর্তা হঠাৎ বিদেশে যাবার সুযোগ পান। কর্তা সেটাতেই খুশি। বাড়ির অন্য সদস্যদের সেই সৌভাগ্য হয় না।
তবে নিজেদের বাসায় মেহমান আসলে খাওয়া দাওয়ায় কমতি হয় না। অতিথি আপ্যায়নে বাঙালির বেশ সুখ্যাতি আছে। বাসায় যখন মেহমান আসে তখন সেই সুযোগে বাসার মানুষজনেরও ভালো খাওয়া দাওয়া হয়। অতিথি উপলক্ষ্যে বাসায় একটু বেশি করে ভালো রান্নাবান্না হয়। অতিথি চলে গেলে বাসায় সবাই মিলে সেই খাবার খেয়ে নেয়। এইটা খুব একটা গায়ে লাগে না। কারণ এইখানে থাকা বা চলাচলের কোন এক্সট্রা খরচ নেই। রান্নায় দুই পট পোলাওয়ের চাল বেশি দিলেই হয়ে যায়।
আমাদের বিসিবির হয়েছে সেই অবস্থা। অনেকদিন খারাপ অবস্থা থেকে এখন আস্তে আস্তে ব্যাংকে টাকা হয়েছে। ৯০০ কোটি টাকা এফডিআর জমেছে। কিন্তু খরচ করবার মানসিকতায় মধ্যবিত্ত অবস্থা থেকে বের হতে পারেনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজেদের খরচে মাত্র এক জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলো। আমিনুল বিপ্লবের পিছনে নিজেদের খরচ করতে হবে বলে দেশে ফেরত এনেছে। পুরো বিশ্বকাপে এই কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে বাংলাদেশ দল আট টা ম্যাচ খেলেছে। ইনজুরিতে পরে একজনের পরে একজন ফেরত এসেছে। তারপরেও অতিরিক্ত খরচ করবার চিন্তা করেনি। শেষ ২ ম্যাচে তো স্কোয়াডে ছিল মাত্র ১৩ জন!
বিশ্বকাপের পরে দেশে পাকিস্তান খেলতে এসেছে। কামরুল ইসলাম রাব্বি, পারভেজ হোসেন ইমনকে এমনিতেই টি-টোয়েন্টিতে দলে ডেকে পাঠিয়েছিলো। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে কামরুল রাব্বি সেই মধ্যবিত্ত ছেলেটার মতো নিজের ব্যাগ নিজে টেনে সিএনজি খুঁজে বাসায় ফিরেছে। একটা উবার/পাঠাও-ও ডেকে দেয়নি তাঁর জন্য!
এখন আবার টেস্ট স্কোয়াডে ২০ জনকে ডেকে নিয়েছে। নিজ দলের জন্য তো বিদেশে যাবার কোন প্লেন খরচ বা অতিরিক্ত থাকার খরচ নাই। পাকিস্তানকে আতিথেয়তা দেয়ার জন্য যা রান্না হচ্ছে তাঁর সাথে দুই পট চাল বেশি দিলেই চলছে! তাই যতজনকে ইচ্ছা ডাকা যায়!