মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের বুড়ো

২০১৯-২০২১ এই দুই বছরে তিনি টেস্ট খেলেছেন মোটে পনেরোটি। শুরুর সিরিজেই তিনি তুলে নিয়েছিলেন নিজের একটু দেরীতে শুরু হওয়া ক্যারিয়ারের দুইটি শতক। সম্ভাবনা ছিল, প্রত্যাশার চাপও ছিল তাঁর উপর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম সিরিজের প্রথম ম্যাচে এক ইনিংস ব্যাটিং করে  তিনি ছিলেন ১০৯ রানে অপরাজিত। পরের ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে রান করলেন ২১২। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছিলেন ১৭৪ রানের এক দূর্দান্ত ইনিংস। সুতরাং তাঁর উপর প্রত্যাশা করা যুক্তিযুক্ত এবং খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা।

লঙ্কান পেসার বিশ্ব ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের খানিক বাইরে দিয়ে আসা শর্ট বল ব্যাকফুটে গিয়ে আলতো করে ঠেলে দিলেন কাভারের দিকে। দৌড়ে নিয়ে নিলেন দুই রান। পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। ৩২ ছাড়িয়ে যাওয়া পাকিস্তানি ব্যাটার আবিদ আলী তাঁর অভিষেক টেস্টেই তুলে নিলেন শতক। ঘটনাটা অবশ্য ২০১৯ এর ডিসেম্বরের।

৩২ বছর বয়সে ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফরম্যাটে অভিষেক কিংবা সেই ফরম্যাটে টিকে যাওয়া একটু কষ্টকর। বয়স বাড়লে কষ্ট করার সামর্থ্যও তো নিম্নগামী হয় ব্যাস্তানুপাতিক হারে। কিন্তু এসব প্রথাগত কথার ধার ধারেন না লাহোর থেকে উঠে আসা আবিদ আলি।

২০১৯-২০২১ এই দুই বছরে তিনি টেস্ট খেলেছেন মোটে পনেরোটি। শুরুর সিরিজেই তিনি তুলে নিয়েছিলেন নিজের একটু দেরীতে শুরু হওয়া ক্যারিয়ারের দুইটি শতক। সম্ভাবনা ছিল, প্রত্যাশার চাপও ছিল তাঁর উপর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম সিরিজের প্রথম ম্যাচে এক ইনিংস ব্যাটিং করে  তিনি ছিলেন ১০৯ রানে অপরাজিত। পরের ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে রান করলেন ২১২। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছিলেন ১৭৪ রানের এক দূর্দান্ত ইনিংস। সুতরাং তাঁর উপর প্রত্যাশা করা যুক্তিযুক্ত এবং খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা।

কিন্তু প্রত্যাশার চাপ এবং সেখান থেকে মানসিক অবিচলতায় তিনি যেন প্রায় হারিয়ে গেলেন। গত ২০২০ এ খেলা পাঁচ টেস্টে তাঁর রান মাত্র ১৬৪। অভিষেকের পর প্রথম দুই টেস্টে ৩২১ রান করা ওপেনারের রান পরবর্তী পাঁচ টেস্টে পার করেনি ২০০ এর ঘর। এ কেমন ছন্দপতন! দশ ইনিংসের সর্বোচ্চ রান মাত্র ৬০।

অভিষেকের নজড়কাড়া পারফর্মেন্স যেমন প্রত্যাশা বাড়িয়েছিল ঠিক তেমনি তাঁর এই ছন্দপতনে ‘হঠাও তাঁরে’ শোরগোল উঠে গেলো পাকিস্তান ক্রিকেট মহলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করে যাওয়া আবিদ আলীর উপর থেকে আস্থা ঠিক হারাতে পারলেন না নির্বাচকেরা। সুযোগ তিনি পেতে থাকলেন। শেষমেশ নিজেকে সত্যিকার অর্থে প্রমাণ করলেন তাঁর সামর্থ্য।

২০২১ এ এসে তিনি এখন পর্যন্ত খেলেছেন আটটি টেস্ট ম্যাচ। নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান ছুঁয়ে দেখলেন তিনি এ বছরই। ২১৫ রানের এক হার না মানা ইনিংস তিনি খেললেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বছরের মধ্যভাগে। তাছাড়া মোটামুটি রানেই ছিলেন তিনি। প্রায় ৫০ গড়ে এ বছর জুড়ে রান করা আবিদ আলী বছরের শেষের দিকে এসে দেখা পেয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতকের।

হয়ত পঞ্চমটাও পেয়ে যেতে পারতেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে তিনি একাই পাকিস্তানের রক্ষণ দূর্গ হিসেবে ঠায় দায়িয়ে থেকেছেন দুই ইনিংসে। শুধু দাঁড়িয়ে থাকেননি ৩৪ বছরে পা রাখা আবিদ, নিজের উইকেটকে আকড়ে ধরে প্রথম ইনিংসে রান করেছেন ১৩৩। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানে যখন তিনি আউট হন তখন দলের জয় সুনিশ্চিত।

বয়স্টা নেহাৎ একটি সংখ্যা আবিদ আলীরা তারই প্রমাণ দেন। নিন্দুক, সমালোচকদের কঠোর জবাব দিয়ে ২০২১ সালে তিনি রয়েছেন রান সংগ্রাহকদের তালিকা ষষ্ঠ স্থানে। বনেদী ফরম্যাটে তিনি পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন ২০২১ সালে। তাঁর রানের সংখ্যা ৬৫৬। পেয়ছেন দুইটি শতকের পাশাপাশি সমান সংখ্যক অর্ধশতকের দেখা। তাঁর হাতে সুযোগ রয়েছে বছরের রান সংগ্রাহকদের তালিকার সেরা পাঁচে পৌঁছে যাবার।

তাঁর নিন্দুকেরা এখন নিশ্চিত লজ্জিত। এভাবেই ব্যাটে জবাব দিতে হয়। বয়স যে শুধুই একটি সংখ্যা তার প্রমাণ দিতে হয় আট টেস্টে ১৩৪১ বল কিংবা ২২৩.৫ ওভার ব্যাট করে। তিনি শেষমেষ কোথায় গিয়ে শেষ করবেন এ বছরের তাঁর পরিসংখ্যান তা দেখার অপেক্ষা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...