অ্যাশেজের আগুনটা আলাদা

ভারতের মাটিতে কিছু টেস্ট ভালো লাগে, এছাড়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলেন আর পাকিস্তান, গল বলেন আর মিরপুর এসব টেস্ট দেখার জন্য কঠিনই যদি না পেশার কারণে দেখতে হয়। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মাটি আলাদা ব্যাপার! যতোই তাদের বিভিন্ন নাম দিয়ে কটাক্ষ করি না কেন, এসব দেশ টেস্ট ক্রিকেটের এসেন্সটার সাথে অনেক যায়।

একটা সময় তো মনে হতো আমাদের জার্সিও এক শেড ধূসর, ঠিক সাদার মতো সাদা না যেটা অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের হয়, মাত্র দশ বছরেই মনে হতো সাকিবের ব্যাগি গ্রিনটা কি পুরাতন? ফয়সাল ইকবালের হেলমেটের চলটা ওঠা কেন, লক্ষণ বা দ্রাবিড়কে কেন মনে হয় এরা লড়তেছেই, আর অজিরাই ডমিনেট করবে।

এটাই মনে হয় কলোনীর দায়, লড়াই করা, জবাব দেয়া, দেখি দেয়া, প্রতিশোধ এসব শব্দের খোলসে জিদগুলো জীবন পায়
কিন্তু আমরা সুন্দরের খোঁজে থাকি, সুন্দর একটা আপেক্ষিক বিষয়, আমার কাছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য সাকিবের দুই হাত দুদিকে দিয়ে পাখির মতো উড়ে যাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার কোনও ব্যাটসম্যানের উইকেট নিয়ে মিরপুরে।

পাকিস্তানে ভালো লাগতো, ইউনিস খান আর ইউসুফকে, অলসতাও যে ব্যস্ত হতে পারে, প্রচন্ড আলসে ভঙ্গিতেও কেউ আধিপত্য বিস্তার করতে পারে তার প্রমাণ এই দুজনের ব্যাটিং, জীবনানন্দ দাশের সেই কবিতার মতো, কোথাও পৌঁছুতে যেন কোনও তাড়া নেই! কিন্তু তারা অচল নন মোটেও।

ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপার হচ্ছে দলটার মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা, স্পিন কেন্দ্রিক একটা দলের পেস ব্যাটারি তৈরি করে বিদেশ যাওয়া, বিদেশে খেলানোর জন্য পেসারদের রেডি রাখা এবং সফলভাবে বিদেশে টেস্ট সিরিজ জিতে ফেরাও। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের অনেকদিন ধরেই কিছু ভালো লাগে না, তবু সাঙ্গাকারার জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্রিকেট অনেকদিন মনে রাখবো।

এমন নানা উদাহরণের বাইরে মনে রাখবো আমি শিবনারায়ণ চন্দরপলকে, এই লোকটা অনেক বড়, তার লো কী ইমেজে ঠিক ততটা বড় দেখায় না কিন্তু এই লোকটার বিশালতা অন্যখানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ক্রিকেটের শেষ প্রদীপ ছিলেন বলবো আমি, এরপর ক্যারিবিয়ানরা অনেক টেস্ট জিতেছে জিতবে, কিন্তু চন্দরপল টেস্ট ক্রিকেটটা খেলেছেন, সেটা অনেক হারের মধ্যেও খেলেছেন।

কিন্তু, অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ড আলাদা জিনিস! আমার প্রথম অ্যাশেজ দেখা ২০০২ সালে! ঠিক প্রিয় শব্দটা না গেলেও ওই অ্যাশেজে অ্যান্ডি ক্যাডিককে ভালো লাগে! অ্যালেক স্টুয়ার্টের আত্মবিশ্বাস আর ম্যাথু হগার্ড, তখনো তিনি তরুণই বলা যায়, ম্যাথু হগার্ডের সুইং দেখে অবাক হতাম।

আর তখন এতো চিন্তা না করেই অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীতা করতাম বলেই ইংল্যান্ড সাপোর্ট করতাম! কিন্তু ধীরে ধীরে গিলক্রিস্ট আর ব্রেট লির কারণে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিই ভালোবাসা বেড়ে চলে, আর অতি অতি স্বভাবের কারণে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ফুটবল কোনওটাই তেমন ভালো লাগেনা এরপর।

অ্যাশেজের ক্রিকেটটা আসলেই আলাদা, এটা কখনোই একটা দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজ থাকে না। অনেক অজি আর ইংলিশ ক্রিকেটারের কাছেই এটা বিশ্বকাপের মতো, বা বিশ্বকাপের চেয়েও বড়। ইভেন অনেকে ইন্টারভিউতেও বলেছেন, যে এই কাপটাই আরাধ্য। অ্যাশেজে পারফর্ম করাই ধ্যানজ্ঞান। অ্যাশেজের আগুনটা আলাদা, ছাইটাও তাই!

ব্রেট লি বসে পড়লেন, হার্মিসন তাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে গেলেন! একের পর এক বাউন্সারে আঘাত পেয়ে স্টিভ স্মিথ মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেন। মার্নাস ল্যাবুশেন এসে হলেন বড় নায়ক, বিকল্পকে বাদ দেয়াই মুশকিল হয়ে গেল! এটাই অ্যাশেজ! পিটারসেন, মিচেল জনসন, ফ্লিনটফ, পানেসার, পন্টিং, জাইলস, ভন! নামগুলাই অ্যাশেজ!

কাল থেকে আবার নতুন খেলা! বরাবরের মতোই অস্ট্রেলিয়ার দলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link