প্যাডেল স্কুপ জনকের হংকং অধ্যায়

প্যাডেল স্কুপের জনক কে? এই প্রশ্নের জবাবে জিম্বাবুয়ের ডগলাস মারিলিয়ারের নাম যতটা আলোচিত হয় ঠিক ততটা আলোচনা হয় না জন রায়ান ক্যাম্পবেলকে নিয়ে।

নামটা শুনেই হয়তো আকাশ থেকে পড়বেন। নি:সন্দেহে নামটা খুব বেশি পরিচিত নয় ক্রিকেটাঙ্গনে। তবে, মজার ব্যাপার হল কেউ কেউ দাবি করেন ২০০২ সালে তার ব্যাটেই নাকি ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম প্যাডল স্কুপ দেখা গিয়েছিল। এর বাদে অস্ট্রেলিয়ান এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারটা বেশ সাদামাটা।

দাপটের সাথে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেললেও জাতীয় দলের হয়ে তাঁর ক্যারিয়ারটা বেশ একটা লম্বা হতে পারেনি। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রায় আট বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পর ৩০ বছর বয়সে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন। তবে, সেটাও মাত্র দু’টি ওয়ানডে ম্যাচের জন্য। সেখানে দুই ইনিংসে করেছিলেন ৫৪ রান। শুরু হিসেবে মন্দ নয়।

তবে, রায়ান ক্যাম্পবেল কখনোই আর ফিরতে পারেননি। দলে যখন অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মত একজন ‘দানব’ খেলেন সেখানে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার সুযোগ কোথায়। অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও তাই ক্যাম্পবেলের সঙ্গী হয় দুর্ভাগ্য।

না, ক্যাম্পবেলের গল্পটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন ১৪ বছর পর। তবে, সেটা অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে নয়। হংকংয়ের হয়ে। সেটাও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে। ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হংকংয়ের হয়ে তিনটি ম্যাচও খেলেন। তাতে ৩৬ রান করেন, দু’টো উইকেটও নেন। এর মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচেই ২৪ বলে ২৭ রান করেন, দু’টি উইকেটও নেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটে রায়ান ক্যাম্পবেল মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে, সেটাতেও তিনি কখনোই অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। যদিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১ টি সেঞ্চুরি-সহ করেন ছয় হাজারের ওপর রান।

২০০৮ সালে ভারতীয় বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) আহমেদাবাদ রকেটসের হয়ে খেলেছেন। এরপর রায়ান ক্যাম্পবেল অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ২০১২ সালে। ওই বছরই যোগ দেন হংকং ক্রিকেট লিগে। কওলুন ক্রিকেট ক্লাবের প্রধান দায়িত্ব নেন ক্যাম্পবেল। পরে তিনি ওই দলের হয়ে মাঠও মাতিয়েছেন। গত মৌসুমে পাঁচ ম্যাচে দুটি হাফ সেঞ্চুরি সহ ১৬০ রান করেন তিনি।

এর মাঝে হংকংয়েরই এক মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছেন। সেখানেই তার ছেলের জন্ম হয়। এমনকি রায়ানের দাদা হংকংয়ের মানুষ, আর দাদি ছিলেন চাইনিজ। হংকংয়ের সাথে আরেকটা পুরনো সম্পর্কও ছিল ক্যাম্পবেলের। ১৯৯৭ সালে হংকং সিক্স আ সাইড খেলতে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে।

২০১৩ সালে হংকংয়ের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পান ক্যাম্পবেল, তাঁর ব্যাটিং প্রতিভা দেখে তার প্রশিক্ষণার্থী ক্রিকেটাররা মুগ্ধ হয়ে যায়। এরপর আবার ২০১৫ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করে দেন তিনি। ১৮ মাস আগে ক্যাম্পবেল কওলুন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে মাত্র ১০৭ বলে অপরাজিত ৩০৩ রানের এক ইনিংস খেলেন।  আর এই সুবাদেই ১৪ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সুযোগ পান তিনি।

তবে, সেটাও হত না যদি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইরফান আহমেদ ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ে এখন ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ না হতেন। দলের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য হংকং ক্রিকেট কমিটির ডিরেক্টর চার্লি বুরকি তাকে বিশ্বকাপের মত মঞ্চে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরই সুবাদে বিশ্বকাপের মঞ্চে হংকংয়ের জার্সি গায়ে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ার ক্যাম্পবেলকে।

তাই বলে ৪৪ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট? রহস্যটা কি? প্রশ্নের উত্তরটা রায়ান যথার্থই দিয়েছিলেন, ‘আমি আসলে বেশি অনুপ্রাণিত ব্র্যাড হগকে দেখে। ৪৫ বছর বয়সে ব্র্যাড খেলতে পারলে আমি পারব না কেন? তাঁকে দেখেই আমার মনে হয়েছে, বয়সটা স্রেফ সংখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।’

আর তার এই প্রত্যাবর্তনে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন খুব সম্ভবত পুরনো ‘শত্রু’ অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। রীতিমত টুইট করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন গিলি। রায়ান আজও ক্রিকেটের সাথেই আছেন। আর সহযোগী ক্রিকেটে তিনি এখন বড় মুখ। হংকংয়ের পর এখন নেদারল্যান্ডস দলের কোচ তিনি।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link