কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত – ওপেনে বিপ্লব

অনেকে মনে করেন বিশ্বক্রিকেটে ধ্বংসাত্মক ওপেন করাটা নাকি শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া শুরু করেছিলেন। পরে টেস্টে এই মনোভাবে ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা নিয়ে আনেন বীরেন্দ্র শেবাগ।

এটা ঠিকই যে অতীতে ব্যারি রিচার্ডস, গর্ডন গ্রিনিজ, রয় ফেডেরিক্স, মাজিদ খান মাঝে মাঝে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ওপেন করার নমুনা দেখালেও সারাজীবন অতি আক্রমণাত্মক ওপেন করেছেন এমন নয়। এঁরা পরিস্থিতি অনুসারে খেলতেন। রক্ষণ মজবুত হওয়ায় দরকারে রক্ষণাত্মক ইনিংসও খেলতে পারতেন এবং খেলতেনও।

কিন্তু, আটের দশকে টেস্ট বা একদিনে অতি আক্রমণাত্মক ওপেন করার রীতি বা বলা যায় প্রথাগত ব্যাপার জলাঞ্জলি দিয়ে প্রলয়ঙ্কর ওপেন করার রীতি নিয়ে আনেন কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। তাঁর খেলার রীতিটাই আগাগোড়া বিচিত্র। বিচিত্র স্টান্স। দুই পা বড়ো ফাঁক রেখে ব্যাট হাতে দাঁড়ানো, বিচিত্র মুখভঙ্গি, অকুতোভয়ে শট খেলা, রক্ষণের নিয়ম না মানা – এর সাথে ছিলো প্রলয়ঙ্কর স্কোয়ার কাট, পুল বা হুক শট।

ছিল শ্রীকান্ত স্পেশাল শট যাতে হাত দিলে ফিল্ডারের ক্রিকেট জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারতো। বোলারের খারাপ বলে ডিফেন্স করে ভালো বলটাকে বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেলে প্রায়শই তাদের বিভ্রান্ত করতে পারতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভীতিকর ফাস্ট বোলারদের মাথার ওপর দিয়ে লফট করে বল বাউন্ডারি পার করার কাজ সেই যুগে কেউ সহজে করতে পারতো না। কিন্তু শ্রীকান্ত পারতেন। দুর্দান্ত চোখ, রিফ্লেক্স আর হ্যান্ড আই কোঅর্ডিনেশন ছিলো তাঁর। কিন্তু ধারাবাহিকতা বিশেষ ছিলো না। একমাত্র ধারাবাহিকতা তাঁর অস্ট্রেলিয়ার মাঠে।

বড়ো পছন্দ করতেন এখানকার পিচ। ১৯৮৫ সালে বেনসন অ্যান্ড হেইজেস সিরিজ জেতায় তাঁর যেমন বড়ো ভূমিকা ছিলো তেমন ১৯৮৫-৮৬ অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও তিনি ফর্মের চূড়ায় ছিলেন।

প্রথম টেস্ট অ্যাডিলেডে তিনি ৮০ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন। পরের টেস্ট মেলবোর্নে করেন ৮৯ বলে ৮৬ রান। ১৬ টা চার ছিলো এ ইনিংসে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের জয়ের আশায় জল ঢালেন সুনীল গাভাসকার। ৫৮ বলে ৮ রান করেন। ১২৬ রান জেতার জন্য দরকার ছিলো। শ্রীকান্ত ৬১ বলে ৩৮ করেন। অথচ ২৫ ওভার ভারত ব্যাট করেছিলো। কেন জেতার বিন্দুমাত্র প্রয়াস শ্রীকান্ত থাকা সত্ত্বেও ভারত নেয় নি তা রহস্যজনক।

পরের টেস্ট সিডনিতে শ্রীকান্ত আবার ধ্বংসাত্মক ওপেন করেন। এবার ১১৭ বলে ১১৬ আসে তাঁর ব্যাট থেকে। ১৯ টা চার আর ১ ছক্কায় সাজানো সে ইনিংস অতুলনীয় ছিলো। এ টেস্টও ভারত জিততে পারতো। যদি ভালো স্পিনার দলে রাখা হতো। শিবলালের পাশে সাপোর্ট দেওয়ার কেউ ছিলেন না

১৯৮৫ আর ১৯৯২ দুবারই সিডনি টেস্টে জয় হাতছাড়া হয় ভুল দল নির্বাচন ও আম্পায়ারিং এর কারণে। শ্রীকান্ত পরের ১৯৯১ -৯২ সিরিজেও অস্ট্রেলিয়া এসেছিলেন। একদিনের ম্যাচগুলিতে ভালো খেললেও টেস্টে রান পান নি। বয়স বেড়েছিলো। কমেছিলো রিফ্লেক্সও। তাঁর ব্যাটিং রীতিতে এ বয়সে অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি পিচে সাফল্য সহজ ছিলো না। তবুও তাঁর অতীত রেকর্ড দেখে টিম ম্যানেজমেণ্ট ভরসা করেছিলো। কিন্তু পুরো সফল হন নি শ্রীকান্ত।

আজও আটের অন্যতম সেরা এণ্টারটেইনার হিসাবে শ্রীকান্ত স্মৃতিতে আছেন ও থাকবেন। ১৯৮৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল বা ইডেনে প্রথম একদিনের ম্যাচের অতুলনীয় শতরান ভোলা যাবে না। ক্রিকেটে নতুন চরিত্র আসবেন। কিন্তু বিচিত্র শ্রীকান্ত ভারতীয় ক্রিকেটভক্তদের মনে থেকে যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link