Social Media

Light
Dark

একদিনের ব্যাটিং বিপ্লবী

এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। এই বিশেষণগুলো যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটে খুঁজি তাহলে অনেক উদাহরণই পাওয়া যাবে। এই যেমন মোহাম্মদ আশরাফুলের কথাই ধরা যাক। ১৬ বছরের এক তরুণ ক্রিকেটার তার প্রথম টেস্টেই মুরালিধরন-ভাসদের মেরে হাঁকান সেঞ্চুরি।

তারপর, বলা যায় মুস্তাফিজুর রহমানের কথা। তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডে ম্যাচেই একদম খাঁদের কিনারায় ফেলে দেন শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে। এখানে আশরাফুল পারেননি লম্বা দৌড়ে, মুস্তাফিজ পেরেছেন এখন পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই মুস্তাফিজ এখন বাংলাদেশের বড় বিজ্ঞাপন।

‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’ – এর সাথে ‘হারিয়ে গেলেন’ বিশেষণটি যদি যোগ করি তাহলেও উদাহরণ দেবার কমতি হবে না বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তেমনই একজন হলেন আবুল হাসান রাজু। মৌলভিবাজারের কুলাউড়ার এই ক্রিকেটারের সাথে এমন বিশেষণটি খুব ভাল ভাবে মানিয়ে যায়। 

প্রথমে টি-টোয়েন্টি দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক। সেখানে বলার মত তেমন কিছু করতে না পারলেও টেস্ট অভিষেকে করেন বাজিমাত। মূলত একজন পেসারের অভিষেকে আশা থাকে পাঁচ উইকেট বা দশ উইকেট পেয়ে ম্যাচটাকে স্মরণীয় করে রাখার। কিন্তু তার বেলায় হয়েছে একদম ৩৬০° ডিগ্রি উল্টো।

যখন বাংলাদেশ দল ১৯৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল, তখনই ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভাব ঘটে তার। তার পর ভাঙ্গেন ১১০ বছর আগের রেকর্ড। ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে করেন সেঞ্চুরি। তার আগে মাত্র ৩ জন ১০ নম্বর পজিশনে সেঞ্চুরি করেন ৷ আর অভিষেকে ১৯০২ সালে এই পজিশনে সেঞ্চুরি করেন রেজি ডাফ।

যদিও রেজি ছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, কোন এক কারণে সেদিন তিনি ১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন। সেই ইনিংসে রাজু করেন ১১৩ রান। কি তাজ্জব ব্যাপার! বোলার হয়ে আসলেন, আর বাজিমাৎ করলেন ব্যাটিংয়ে – গড়ে ফেললেন অভিনব কীর্তি, যা আগে কেউ ভাবতেও পারেনি!

বোলিংয়েও দেন ঠিক ১১৩ রান। কোন উইকেট পাননি। অভিষেকটা এমন স্মরণীয় হয়ে থাকলেও তারপরের গল্পটা শুধু হতাশার। পরে টেস্ট খেলেন মাত্র ২ টি। আর ৬ ওয়ানডে খেলেও থাকেন উইকেটশূন্য। জাতীয় দলে সর্বশেষ খেলেন ২০১৮ সালে।

তাকে নিয়ে এত কথা বলার কারণ আজকে তার জন্মদিন। ১৯৯৩ সালের ৫ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়সটা সবে মাত্র ২৯ বছর। এখনও তিনি অনায়াসে ৫ থেকে ৬ বছর খেলতে পারবেন। তবে, সেই রাজুর কোনো হদিস নেই।

অভিষেক টেস্টের দারুণ ব্যাটিংয়ের পর রাজু নিজেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে মন দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) কয়েকবার তাঁকে অলরাউন্ডার হিসেবে সুযোগ দিয়েছিল। রাজুই বাংলাদেশের পেস বোলিং অলরাউন্ডারের আক্ষেপ ঘুচাবেন – তেমন স্বপ্ন ছিল। কিন্তু, কখনোই ব্যাটিং বা বোলিংয়ে ভরসার প্রতিদান দিতে পারেননি রাজু। বিসিবি তাঁকে নিয়ে যত-শত পরিকল্পনা করেছে – তার সবই ভেস্তে গেছে।

রাজু নিজেও সেই বিষয়টা নিয়ে খুব সিরিয়াসলি কাজ করেছিলেন বলে মনে হয়নি। যদিও আজও তিনি খেলে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে, ধুঁকে ধুঁকে। বড় কোনো পারফরম্যান্স নেই, নেই কোনো এক্স ফ্যাক্টর। দিনকে দিন সময়টাও চলে গিয়েছে। বাংলাদেশের অসংখ্য স্বপ্নের ক্ষেত্রে যা হয় রাজুর ক্ষেত্রেও তাই হল, এক ম্যাচের – নাহ! এক ইনিংসের বিপ্লবী হয়েই তিনি টিকে রয়েছেন ক্রিকেটের ইতিহাসে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link