মন্দ গড়ে সম্ভাবনার প্রয়াণ

গড়টা ২৯৪। খানিকটা বিস্মিত করার মতো। না এটা ব্যাটিং গড় নয়। তাও বোধকরি সম্ভব নয়। এটা শ্রীলঙ্কান একজন খেলোয়াড়ের বোলিং গড়।  রজার উইজেসুরিয়া নাম তাঁর। টেস্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা  এমন একটা গড় নিয়েই তিনি শেষ করেছেন। রজার উইজেসুরিয়ার জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬০ সালে। আর জাতীয় দলের তাঁর অভিষেকটা হয়েছিলো ১৯৮২ সালে। তিন বছর বাদেই জাতীয় দল থেকে ছিটকে যান তিনি।

কিছু খেলোয়াড় তাঁদের ক্যারিয়ারে অনবদ্য সব পারফর্মেন্সের জন্যে অবিস্মরনীয় হয়ে থাকেন চিরকাল। যেমন স্যার ডন ব্রাডম্যানের ৯৯.৯৪ গড় কিংবা শচীন টেন্ডুলকারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শতকের শতক হাঁকানো, এসব কীর্তি তাঁদেরকে ইতিহাসের পাতায় চির অমলিন রাখবে। সে বিচারে রজার বিজেসুরিয়াও হয়ত ইতিহাসের পাতায় হয়ে রইবেন চির অমলিন। তাঁর এমন অদ্ভুত বোলিং গড় দিয়ে।

অবশ্য তিনি যে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে এমন অদ্ভুত রেকর্ড গড়েছেন তা কিন্তু নয়। এমন বিচিত্র বোলিং গড়ের পাশে বাংলাদেশের খেলোয়াড় নাঈম ইসলামের নামও রয়েছে। নাঈমের গড়টা আরো বেশি, ৩০০। তবে রজার বিজেসুরিয়ার ক্যারিয়ারটা শুরু করেছিলেন বেশ আশা জাগিয়েই।

বয়সভিত্তিক দলে বাঁ-হাতি স্পিন বোলিংয়ের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন রজার। ১৯৭৮ সালে তাইতো তিনি সুযোগ পান লংকান অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। অস্ট্রেলিয়ান অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টেই পাঁচ উইকেট তুলে সাড়া ফেলে দেন সেই সময়ের কিশোর বোলার রজার বিজেসুরিয়া। তবে তিনি মূলত লাইমলাইটে এসেছিলেন পরের বছর হওয়া পাকিস্তান অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে হওয়া সিরিজ দিয়ে।

প্রথম তিন দিনের ম্যাচে তিনি নিয়েছিলেন নয় উইকেট। প্রথম ইনিংসে চারটি এর পরের ইনিংসে পাঁচটি। এর পরের ম্যাচে দুই ইনিংসে সমান পাঁচ উইকেট মিলিয়ে মোট দশ উইকেট তুলে নেন। এখানেই থামেননি তিনি। ওয়ানডে ম্যাচে তিনি চার উইকেট নিয়ে নিজেকে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করেন।

যার ফলশ্রুতিতে তিনি সুযোগ পান ১৯৭৯ সালে হওয়া বিশ্বকাপের লংকান দলে। যদিও কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তরুণ রজার। সে সময়ে শ্রীলঙ্কা নিজেদের টেস্ট স্ট্যাটাসের জন্যে বেশ তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছিলো। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ম্যাচে রজার উইজেসুরিয়া খেলেছিলেন লঙ্কানদের হয়ে। এরপর অবশ্য তিনি সুযোগ পান ওয়ানডে দলে। ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ান্ডে অভিষেক হয় তাঁর।

অভিষেক ম্যাচে তিনি কেবল মাত্র একটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন। এরপর আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট সেই মার্চ মাসেই তাঁর অভিষেক হয়। সেই ম্যাচেও খুব একটা উজ্জ্বল পারফর্ম করেছিলেন তা বলার সুযোগ নেই। ফলস্বরুপ তিনি বাদ পড়ে যান দল থেকে।

১৯৮৫ সালে আবার দলে ফিরেছিলেন তিনি। ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে মোটামুটি পারফর্ম করে তিনি দলের সাথে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন সেই পাকিস্তানে। আফসোস তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তিনি কেবলমাত্র একটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন। সেই একটি উইকেটই ছিলো তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ও শেষ উইকেট।

মাত্র চার টেস্ট খেলে ২৯৪ গড়ে তিনি একটি মাত্রই উইকেট নিতে পেরেছিলেন। তবে ওয়ানডেতে তাঁর রেকর্ডটা তুলনামূলক বেশ ভাল সেখানে আট ম্যাচে আট উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি ৩৫.৮৭ গড়ে। আর জাতীয় দলের সুযোগ পাননি রজার উইজেসুরিয়া। যদিও ১৯৯৪ পর্যন্ত তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে গিয়েছিলেন। এমনকি শ্রীলঙ্কা ‘বি’ দলের হয়েও খেলেছেন, তবে, জাতীয় দলে ফেরা আর হয়নি। এরপর তিনি কোচিংয়ে মন দেন।

দারুণ সম্ভাবনায় শুরু করা ক্যারিয়ারটার ইতিটা ছিলোনা আশানুরুপ। দারুণ এক সম্ভাবনা অজানা কারণে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। শেষমেশ বিচিত্র এক রেকর্ডের মালিক হয়েই রইলেন ইতিহাসের পাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link