বছরখানেক ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই আলোচনাটা ঘুরে ফিরে আসছিল। তবে এই আলোচনাটা মূলত ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেই। সেটা হলো কয়েকজন ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ কিংবা স্ট্রাইকরেট। তবে এতদিন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা এই বিষয়টা ওয়ানডে ফরম্যাটেও টেনে আনলেন মাহমুদউল্লাহ রিiয়াদ।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি ‘সাইলেন্ট কিলার’ নামে পরিচিত। মূলত প্রতিপক্ষকে নীরবে হারের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্যই রিয়াদকে এই নাম দেয়া হয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ফিনিশারও তিনি। লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে অনেক ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। এছাড়া তাঁর স্লগিং এবিলিটিরও একটা সময় প্রশংসা করা হতো। সেজন্যই বোধহয় বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হিসেবেও তাঁর নামটা এসেছিল।
তবে সেই রিয়াদ আর আজকের রিয়াদের পার্থক্য অনেক। প্রায় প্রতি ম্যাচেই (বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে) এখন তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ও স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে ইদানিং ওয়ানডে ফরম্যাটেও রিয়াদের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয়। আজকের ইনিংস দিয়েই শুরু করা যাক। ওয়ানডে ক্রিকেটে ছয় নম্বরে নেমে ৫৩ বলে ২৯ রানের ইনিংস আজকের দিনে অবিশ্বাস্যই বটে।
এখন আজকে হয়তো ব্যাটিং বিপর্যয়ের অযুহাত দেয়া যেতে পারে। তবে তিনি যখন ব্যাট করতে নামেন তখন কী আসলেই এত ধীরগতির ইনিংস খেলার মত পরিস্থিতি ছিল? এমনকি সেই সময় তো দারুণ খেলতে থাকা লিটন দাসও বাইশ গজে ছিলেন। এরপর আফিফ, মিরাজরাও ছিলেন। ফলে মাত্র ৫৪.৭১ স্ট্রাইকরেটে খেলা ইনিংসটা মেনে নেয়া যায় না।
ছয় নাম্বারে নেমেও ৫৩ বলের এই ইনিংসটিতে একটি বাউন্ডারিও নেই। ওয়ানডে ক্রিকেটে স্ট্রাইকরেটের জন্য প্রথম সমালোচিত হয়েছিলেন তামিম ইকবাল। তবে ওপেনার তামিমকে বড় ইনিংস খেলে কখনো কখনো হয়তো স্ট্রাইকরেটটা পুষিয়ে দেন। তবে ছয় নাম্বারে নামা রিয়াদের ধীরগতি ব্যাটিং বাংলাদেশের দল বহন করতে পারবে তো?
রিয়াদের আজকের ইনিংসে আরেকটি ব্যাপার ছিলো বোলারদেরকে ব্যাটিংয়ে এক্সপোজ করে দেওয়া। অন্তত তিন বার তিনি ওভারের শুরুর দিকে সিঙ্গেল নিয়ে পুরো ওভারের জন্য তাসকিন, শরিফুলদের বোলারের সামনে এক্সপোজ করেছেন। রিয়াদদের টিকে থাকার বড় দাবিই হলো, তারা সিনিয়র। তরুন বোলারদের এভাবে বিপদের সামনে ঠেলে দেওয়াটা সিনিয়র সুলভ ব্যাপারও নয়। সেই সাথে হিসেব করুন যে, রিয়াদের সাথে ব্যাটিং করার সময় তিন জন ব্যাটসম্যান রান আউট হয়েছেন।
শুধু আজকের ম্যাচই নয়। এই পুরো সিরিজেই রিয়াদ এমন ব্যাটিং করেছেন। প্রথম ম্যাচে ফিরে গিয়েছিলেন ১৭ বলে ৮ রান করে। স্ট্রাইকরেট ৪৭.০৫৫। তবে সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিং করেছেন দ্বিতীয় ম্যাচে। লিটনের সেঞ্চুরির কারণে দারুণ একটা শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। একটা সময় মনে হচ্ছিল ৩৩০ রানও হওয়া সম্ভব। তিনি যখন ব্যাট করতে নামেন তখন ৪৬.২ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৮৫।
সেখান থেকে শেষ চার ওভারে রিয়াদের কাছ থেকে একটা ঝড়ো ইনিংসই প্রত্যাশিত ছিল। তবে এই শেষ সময়ে রিয়াদ যেন অ্যাংকোরিং করলেন। তিনি যেন সেট হওয়ার জন্য সময় নিচ্ছিলেন। অথচ ৫০ ওভার যে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তাঁর দৃষ্টি নেই। ওই সময়ে ৯ বল খেলে তাঁর ব্যাট থেকে এলো মাত্র ৬ রান। স্ট্রাইকরেট ৬৬.৬৬। ফলে বাংলাদেশের স্কোর হলো সর্বসাকুল্যে ৩০৬ রান।
আফগানিস্তানের সাথে সিরিজ বলে হয়তো এটা বাংলাদেশের জন্য তেমন কোন বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি। তবে বড় দলগুলোর সাথে এখন আর ৩০৬ রান নিরাপদ নয়। ফলে বড় ম্যাচে এই ছোট ছোট ব্যাপার গুলোই বাংলাদেশকে হারিয়ে দিতে পারে। আর ছয় নাম্বারে ব্যাট করা ব্যাটসম্যান এবং দেশটির টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক যখন এমন ইনিংস খেলেন তখন প্রশ্নগুলো আরো বেশি জোড়ালো হয়।