তিনি আপনার প্রতিপক্ষের মূল শক্তি, কিন্তু তাকে ভালবাসতে বাধ্য আপনিও। তার আগ্রাসী খেলার ধরণ আর খেলাটাকে আঁকড়ে ধরার জন্য। তাঁর মানসিকতার জন্য। তাঁর প্রচণ্ড আবেগের জন্য। সব পারলেও উপেক্ষা করতে পারবেন না আপনি এদের।
কারো ক্ষেত্রে নামটা মজিদ বাসকার, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, কারো ক্ষেত্রে হোসে ব্যারেটো-সুব্রত ভট্টাচার্য। কারো ক্ষেত্রে নামটা শচীন রমেশ টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি, আর কারো বা স্টিভ ওয়াহ কিংবা শহীদ আফ্রিদি। আজকের লেখাটা এই শেষ নামটার জন্য।
তাকে অনেকে চেনে বুম বুম নামে। কেউ বা লালা নামে। আর এদের চেয়ে অনেক বেশি লোক চেনে শহীদ আফ্রিদি নামে। তিনি সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার এবং পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। যদিও, তাঁকে ‘সাবেক’ বলে দেওয়াটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে ২৭ টি টেস্ট ম্যাচ, ৩৪৯ টি একদিনের ম্যাচ ও ৫৬ টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৯৬ সালের দুই অক্টোবর, ১৬ বছর সামান্য ওপরে বয়স নিয়ে কেনিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে এবং ১৯৯৮ সালের ২২ অক্টোবর, ১৮ বছর প্লাস বয়সে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক ঘটে। একজন সফল অলরাউন্ডার হিসেবে আফ্রিদিকে তাঁর সামঞ্জস্যপূর্ণ বোলিং এবং আগ্রাসী ব্যাটিং স্টাইলের জন্য সবাই চেনে।
রেকর্ড আর আফ্রিদি ছিল যেন একে অন্যের পরিপূরক। ৩৭ টি ডেলিভারিতে দ্রুততম একদিনের সেঞ্চুরি করার বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী ছিলেন এবং তিনি একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাধিক ছক্কা হাঁকানোর সম্মানের অধিকারী। আফ্রিদি বেশি পরিচিত তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ভঙ্গি এবং একদিনের ম্যাচে দ্রুততম শতক ধরে রাখার জন্য।
তিনি এক ওভারে করেছিলেন ৩২ রান, যা একদিনের ম্যাচে এক ওভারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। তাছাড়াও তিনি একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ছয় মারার কৃতিত্ব অর্জন করেন। যদিও আফ্রিদি নিজেকে একজন ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি বোলার মনে করতেন।
তিনি টেস্ট ৪৮ টি উইকেট এবং ৩৪৮ টির বেশি একদিনের আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন। এছাড়াও একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শহীদ আফ্রিদি সাত সহস্রাধিক রান ও ৩৫০ উইকেট দখল করেছেন। আফ্রিদি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৫৬ টি ম্যাচে ৬২ টি উইকেট নিয়েছেন।
২০০৯ সালের জুন মাসে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব পান ইউনুস খানের হাতফেরত। কিছুদিন পরে ২০১০ সালে তাঁর প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অধিনায়কত্বের অভিষেক হয় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যেখানে তার একটি শতকও ছিল কিন্তু পাকিস্তান ম্যাচটি হেরেছিল ১৬ রানে।
তার খেলোয়াড়ী মহানুভবতা প্রকাশ পেয়েছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। রান নিতে গিয়ে সাকিব আল হাসান পড়ে যান। এই সময় নিশ্চিত রান আউট থেকে বেঁচে যান এই ব্যাটসম্যান। রান আউট থেকে বাঁচার জন্য তাড়াহুড়া করতে গিয়ে সাকিবের পায়ে থাকা কেডসটি (জুতা) খুলে যায়। পরে সাকিবের এই কেডসটি নিজ হাতে তুলে দেন আফ্রিদি।
বছর দুয়েক আগে পাকিস্তানের ঘরোয়া কুড়িবিশ ম্যাচে ৩৮ বছর বয়স্ক (আনুষ্ঠানিক ভাবে বয়সটা নাকি আরো বেশি) আফ্রিদির একটি চমকপ্রদ ক্যাচ ধরার ভিডিও এখনও ভাইরাল। আজীবন ওই রকমই চমকপ্রদ থেকে থেকে যাবার জন্যই জন্মান শহীদ খান আফ্রিদির মত ক্রিকেটাররা। ভাল থাকুন অবসরোত্তর আফ্রিদি, শহীদ বুম বুম লালা আফ্রিদি।