অবশ্যই সময়ে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। তবে, বাবর আজমের টেস্ট ক্যারিয়ার খুব বেশি লম্বা নয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তাঁর অভিষেক। ২০১৮ সালে এসে পান প্রথম সেঞ্চুরির দেখা।
২০১৯ সালটা বেশ ভাল কাটে বাবর আজমের। সেই এক বছরেই তিনটা সেঞ্চুরি পান। সর্বশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ২০২০ সালে, রাওয়ালপিন্ডিতে, বাংলাদেশের বিপক্ষে। অপরাজিত ছিলেন ১৪৩ রানে। সেটাই আজকের আগে বাবর আজমের সেরা টেস্ট ইনিংস ছিল।
এরপরের সময়টাতে বাবর আজম রান পাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছিলেন না। বড় ইনিংস খেলাটা হয়ে উঠছিল না। সেই খরা কাটাতে বাবর শুধু বড়ই না বিরাট বড় কিছুরই অপেক্ষায় ছিলেন।
সেই অপেক্ষাটার অবসান হল করাচিতে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সেটাও কি কঠিন একটা সময়ে। চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তানের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য ৫০৬ রানের। হাতে প্রায় দুই দিন সময়।
এই পুরোটা সময় কাটিয়ে দেওয়া তো আর মুখের কথা নয়। তার ওপর, মাত্র ২১ রানে দুই উইকেট হারিয়ে মহা বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা। এই সময়ে উইকেটে আসলেন অধিনায়ক। আর সেই অধিনায়ক মনে গেলেন মহানায়ক। প্রমাণ করে দিলেন, তিনিই এখনকার ক্রিকেট ব্যাটিংয়ের মুঘল-ই-আজম।
সেঞ্চুরিটা পেয়েছিলেন চতুর্থদিনের শেষ বেলাতেই। অধিনায়ক হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি। সেই অর্জনই বা কম কিসে। ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেট মিলিয়ে আগে যে রেকর্ড ছুঁতে পেরেছেন মোটে তিনজন। বাবর তাতে সন্তুষ্ট হননি। লড়াইয়ের ধারাবাহিকতাটা অব্যাহত রাখলেন পঞ্চম দিনেও। চতুর্থ দিনের পর পঞ্চম দিনেও তিনিই মহানায়ক পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে।
//
বাবর আজম জানতেন, উইকেট যেমনই হোক ব্যাটিংটা সহজ হবে না। মনো:সংযোগের একটু ঘাটতি হলেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রন হারাতে হতে পারে। যেকোনো সময় ব্যাটিং ধস নামাটাও অবিশ্বাস্য কিছু নয়। আর পাকিস্তান ক্রিকেট যে আনপ্রেডিক্টেবল, তাঁদের ইনিংসে যখন-তখন যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।
তাই, সংশয় তো ছিলই। তবে, বাবর আজম ছিলেন অটল। আর সেই লড়াই, সেই বীরত্বের যথার্থ প্রতিদানও পেয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ইনিংসটা পঞ্চম দিনের কঠিন উইকেটেই পেয়ে গেছেন।
না, পাকিস্তান জিতে যায়নি। তবে, পঞ্চম দিনের পুরোটা জুড়ে সংগ্রাম করে ঐতিহাসিক একটা ড্র আদায় করে নিতে পেরেছে পাকিস্তান দল। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের নিশ্চিত একটা জয় হাতছাড়া করতে পেরেছেন তাঁরা। আরও স্পষ্ট করে বললে কাজটা একাই অনেকটা করেছেন বাবর আজম।
সেই লড়াইয়ে সঙ্গী বদলেছে বারবার। কখনও, আব্দুল্লাহ শফিক। কখনও বা মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে, কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন ওই একজনই। বাবর আজম। আসলে শুধু পাকিস্তানের এই ইনিংস বলছি কেন, শুধু পাকিস্তানের এই ক্রিকেট দলই বা বলবো কেন, তিনি তো বিশ্ব ক্রিকেটের ব্যাটিংয়েরই এখন অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র।
তিনিই তো এখনকার ব্যাটিংয়ের মুঘল-ই-আজম। যেমন ক্ষুরধার ব্যাটিং, যেমন নান্দনিক সব শট, তেমনি কার্য্যকর তার প্রভাব। বাদশাহ বাবরের এই ব্যাটিং যাত্রা অব্যাহত থাকুক!