টোয়েন্টি ইয়ার্স চ্যালেঞ্জ

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ছবি বেশ ভাইরাল। ২০০২ সালে বেনোনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণের একটা চিত্র! সেবার বাংলাদেশের করা ১৫৪ রানের বিপরীতে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটা জিতে নেয় দশ উইকেটের ব্যবধানে! এরপর পেরিয়ে গেছে ২০ বছরেরও বেশি সময়।

যুগ পালটেছে, পালটে গেছে ক্রিকেটের চিত্র। সেই সাদামাটা বাংলাদেশ দলটা এখন বিশ্ব ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে শিখে গেছে। এখন আর সম্মানজনক হারের লড়াই নয়, প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রেখে জয়ের জন্যই মাঠে নামেন তামিম-সাকিরা।

২০ বছর আগে বেনোনির সেই ম্যাচটা যেনো আরও একবার পুনরাবৃত্তি হলো। সেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যেনো ভেসে উঠলো ২০ বছর আগে চিত্র। তবে, এবারে বাংলাদেশের অবস্থানটা মূদ্রার আরেক পিঠে। বেনোনিতে সেদিন লজ্জাজনক পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়া বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ ওয়ানডেতে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবার সিরিজ জয় করেছে।

এবার জয়ের নায়ক তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের অগ্নিঝরা স্পেলে দাঁড়াতেই পারেনি প্রোটিয়া ব্যাটাররা। তাসকিনের রেকর্ডগড়া পাঁচ উইকেট শিকারে মাত্র ১৫৪ রানেই গুড়িয়ে যায় স্বাগতিকরা। এরপর তামিম ইকবালের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেটে দুর্দান্ত জয়ে ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ!

সময় পাল্টেছে। পেরিয়েছে দুই দশক! পালটে গেছে বাংলাদেশের অবস্থানও। সেই সাদামাটা বাংলাদেশ আর নেই! সেই খর্বশক্তির বাংলাদেশই এখন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আতংক। ২০ বছর বাদে নিজের দেশেই বাংলাদেশের কাছে লজ্জাজনক ভাবে ধরাশায়ী হলো প্রোটিয়ারা।

বিশ্বক্রিকেটে যারা শুধু কোনো রকমে লড়াই করে টিকে থাকতে চাইতো সেই বাংলাদেশ ২০ বছরে বদলে গেছে অনেকখানি। নেই দক্ষিণ আফ্রিকার সেই পুরনো দাপট কিংবা আগ্রাসন। অবশ্য ঘরের মাটিতে প্রোটিয়ারা বরাবরই কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে, সাকিব-তাসকিনদের সামনে এবার আর মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াতেই পারেনি প্রোটিয়ারা!

বেনোনিতে সেদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে গতির ঝড় তোলা সাদা বিদ্যুৎ খ্যাত অ্যালান ডোনাল্ড এখন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ। এই ডোনাল্ডই ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার এক গণমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘টাইগারস হ্যাভ দিয়ার ফুট অন দ্য টয়লেট!’

মূলত প্রোটিয়া পেসারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটারদের অসহায়ত্বের কারণেই এমন মন্তব্য করেন এই কিংবদন্তি পেসার। প্রোটিয়া পেসারদের ভয়ে বাংলাদেশি ব্যাটাররা টয়লেটে দৌড়াবেন ব্যাপারটা ছিলো অনেকটা এমনই! অবশ্য সেসময় বাংলাদেশের দলের অবস্থাও ছিল করুন।

ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে ঘুরতে সময়ের ব্যবধানে বদলে গেছে সবকিছু। সেই ডোনাল্ডই সেঞ্চুরিয়ানে বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে বসে তাসকিনের অগ্নিঝরা স্পেল দেখলেন! দেখলেন প্রোটিয়া ব্যাটারদের অসহায়ত্ব আর মুখ থুবড়ে পড়া। একসময় প্রোটিয়া পেসারদের সামনে নাকানিচুবানি খাওয়া বাংলাদেশি ব্যাটারদের কাছে লুঙ্গি এনগিডি-কাগিসো রাবাদাদের তুলোধুনো হওয়াও দেখলেন চোখের সামনে! ২০ বছর আগে এই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পরাজয় নিয়ে ফিরে আসা খালেদ মাহমুদ সুজন এখন দলের ম্যানেজার!

জয়ের অন্তিম মূহুর্তে ডাগআউটে বসা খালেদ মাহমুদ সুজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ২২ গজে! যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠেছে ২২ বছর আগের সেই লজ্জাজনক হারের স্মৃতি। কিংবা প্রোটিয়াদের মাটিতে বার বার হারের দু:সহনীয় কিছু স্মৃতি। ড্রেসিং রুমে বসে অ্যালান ডোনাল্ডও হয়তো বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে ভাবছিলেন এই কি সেই বাংলাদেশ!

এই লম্বা সময়ে বদলে গেছে দৃশ্যপট। প্রোটিয়াদের চোখে চোখ রেখে বুক চিতিয়ে লড়াই করা এই বাংলাদেশ দলটাক্বে নিয়ে আমাদের প্রত্যাশার কমতি নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এমন ভয়ডরহীন ক্রিকেট ক’জনই বা প্রত্যাশা করেছিলেন? খর্বশক্তির বাংলাদেশ দলটাকে এখন অন্তত ওয়ানডে ফরম্যাটে বিশ্বসেরা দলের কাতারে ফেলতে দ্বিধা হবে না নিশ্চয়ই?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link