তোমার আগুনে ঝলসানো আমি

আধুনিক ক্রিকেটের গ্রেটদের একজন; এই সময়ের সবচাইতে কমপ্লিট ও ভার্সেটাইল ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্সকে নিশ্চয়ই নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না। তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা রান সংগ্রাহকদের একজন; যাকে ‘সর্বকালের সেরা’দের একজন বলেও মানেন অনেকেই। ক্রিকেট বিশ্বে যিনি পরিচিতি পেয়েছেন মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রী কিংবা সুপারম্যান নামে!

ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি ও দেড়শ রানের মালিক ডি ভিলিয়ার্স একজন সত্যিকারের ম্যাচ উইনার। তাঁর আছে যেকোন পরিস্থিতিতে একা হাতে ম্যাচ জেতানোর অতিমানবীয় ক্ষমতা। ইনোভেটিভ স্ট্রোকপ্লে, ক্লিন হিটিং অ্যাবিলিটি, ভয়ডরহীন মানসিকতা, আগ্রাসনের সাথে টেম্পারমেন্টের নিখুঁত কম্বিনেশন তাঁকে করে তুলেছে সবার চেয়ে আলাদা।

পেস ও স্পিনের বিপক্ষে সমান স্বচ্ছন্দ, ডানহাতি এই ব্যাটিং জিনিয়াসের উদ্ভাবনী শটের রেঞ্জ এতই বিস্তৃত যে উনি খেলতে পারেন না এমন কোন শট বোধ হয় এখনও আবিষ্কৃতই হয় নি। ফিল্ডারদের দর্শক বানিয়ে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় যেকোন বলকে পাঠিয়ে দিতে পারেন মাঠের যেকোন প্রান্তে। ‘মিঃ থ্রি সিক্সটি ডিগ্রী’ তো আর তাঁকে এমনি এমনি বলে না লোকজন! এবির ব্যাটিং স্টাইলকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে তাঁর হাই ব্যাকলিফট, রিদমিক ব্যাট সুইং এবং দৃষ্টিনন্দন ফলোথ্রু।

প্রতিটি বলের জন্য ডি ভিলিয়ার্সের রয়েছে অন্তত তিন চার রকমের ইম্প্রোভাইজিং স্ট্রোক খেলার অপশন! এর পেছনে রহস্য হল পিচ ও কন্ডিশন অনুযায়ী তাঁর টেকনিক্যালি এডাপ্ট করার ক্ষমতা, সাবলীল ফুট মুভমেন্ট, ডেপথ অফ দ্য ক্রিজের সুনিপুণ ব্যবহার, দ্রুত বলের লেংথ রিড করতে পারার ক্ষমতা, চমৎকার হ্যান্ড আই কো-অর্ডিনেশন, মেন্টাল স্ট্যাবিলিটি এবং নিজের সামর্থ্যের ওপর প্রবল আত্মবিশ্বাস। রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেটেও অসাধারণ তিনি।

১৯৮৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সভাল প্রদেশের প্রিটোরিয়ায় জন্মেছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। বাবা আব্রাহাম ছিলেন পেশায় একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক আর মা মিলি ছিলেন রিয়াল এস্টেট কোম্পানির চাকুরে। তিন ভাইয়ের মধ্যে এবি ছিলেন সবার ছোট।

এবির বাবা আব্রাহাম ছিলেন খেলাপাগল মানুষ। খেলাধুলা ব্যাপারটা যেন তাঁর রক্তেই মিশে আছে। নিজেও একসময় প্রচুর রাগবি খেলেছেন, অবসর পেলেই ছেলেদের সাথে মেতে উঠতেন বিভিন্ন রকম খেলাধুলায়।

স্কুলে থাকতে এবি প্রায় সব খেলাই খেলেছেন। ক্রিকেট-টেনিস-হকি-রাগবি-সাঁতার সব। তবে খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ালেখাতেও যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন তিনি। ন্যাশনাল সায়েন্স প্রজেক্টের জন্যে একবার নেলসন ম্যান্ডেলার হাত থেকে অ্যাওয়ার্ডও নিয়েছিলেন।

ছেলেবেলার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় হয়ে বাবার মত চিকিৎসক হবেন। কিন্তু খেলাধুলাকে এতটাই মনেপ্রাণে ভালবেসে ফেলেন যে, ছেলেবেলার স্বপ্নটা শেষমেশ অধরাই থেকে যায়।

ক্রিকেটের প্রতি এবির ভালোলাগা কিংবা অনুরাগের শুরুটা হয়েছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে। বর্ণবাদের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর ওটাই ছিলো প্রোটিয়াদের প্রথম আইসিসি ইভেন্ট। এবির বয়স তখন মাত্র আট বছর। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান ইনজামাম-উল-হককে চিতার ক্ষিপ্রতায় রানআউট করছেন জন্টি রোডস! অসাধারণ সেই দৃশ্যটি ‘ছোট্ট’ এবির শিশুমনকে আলোড়িত করেছিল দারুণভাবে।

মাত্র দশ বছর বয়সে স্কুল ক্রিকেটে হাতেখড়ি। স্কুল দলে এবির সতীর্থরা বেশিরভাগই ছিল তেরো-চৌদ্দ বছরের। সতীর্থদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন অধিনায়ক জ্যাক রুডলফ, ফাফ ডু প্লেসি আর হেইনো কুন যারা পরবর্তীতে টাইটান্স ও দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

স্কুল ক্রিকেট খেলতে খেলতেই ডাক পেয়ে যান স্থানীয় অনুর্ধ্ব-১৪ দলে। সেখানকার নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে জায়গা করে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের ক্যাম্পে।

স্কুল ক্রিকেটে থাকতেই দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া লিগের দল ‘টাইটানস’ এর কোচ ডেভ নসওয়ার্দির নজরে পড়ে যান এবি। কানাডার বিপক্ষে ২০০৩ বিশ্বকপের একটি প্রস্তুতি ম্যাচে টাইটানসের হয়ে অভিষেকও হয়ে যায় ১৯ বছরের তরুণ ডি ভিলিয়ার্সের।

অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ২০০৩ সালের ইংল্যান্ড সফরে দুর্দান্ত পারফর্ম করায় রাতারাতি তারকা বনে যান এবি। জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা ছিল তাই কেবলই সময়ের ব্যাপার।

সেই দলে ফাফ ডু প্লেসি, জেপি ডুমিনি, ভার্নন ফিল্যান্ডাররাও ছিলেন। কিন্তু তাদের সবাইকে ছাপিয়ে জাতীয় দলের দরজাটা প্রথম খুলে গিয়েছিল এবিরই।

২০০৪ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এসেছিল ইংল্যান্ড। ১৬ ডিসেম্বর, পোর্ট এলিজাবেথে সিরিজের প্রথম টেস্টে গ্রায়েম স্মিথের সাথে ওপেন করতে নামলেন ২০ বছরের তরুণ ডি ভিলিয়ার্স। স্মিথ শূন্য রানে ফিরে গেলেও দ্বিতীয় উইকেটে জ্যাক রুডলফকে সাথে নিয়ে ৬৩ রানের জুটি গড়লেন অভিষিক্ত এই ব্যাটসম্যান। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ার আগে নিজের নামের পাশে যোগ করলেন ২৮ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ১৪।

নিয়মিত উইকেটরক্ষক বাউচারের অনুপস্থিতিতে সিরিজের পরের টেস্টেই এবির ঘাড়ে দায়িত্ব পড়ল উইকেটের পেছনে গ্লাভস সামলানোর। ওপেনিং থেকে নেমে গেলেন মিডল অর্ডারে। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও রান পেলেন দ্বিতীয় ইনিংসে; সাতে নেমে খেললেন অপরাজিত ৫২ রানের ‘ম্যাচ সেভিং’ এক ইনিংস। বদলি উইকেটরক্ষক হিসেবে অর্জনের ঝুলিতে যোগ হল পাঁচটি ডিসমিসাল।

সিরিজের শেষ টেস্ট সেঞ্চুরিয়নে আবার ফিরে গেলেন ওপেনিং পজিশনে। প্রথম ইনিংসে করলেন ৯২ আর দ্বিতীয় ইনিংসেই পেয়ে গেলেন কাঙ্খিত তিন অংকের দেখা! ফ্লিনটফ-হগার্ড-সাইমন জোন্সদের নিয়ে গড়া ইংলিশ পেস আক্রমণকে সামলালেন শক্ত হাতে, খেললেন ১০৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস, হলেন ম্যাচ সেরা।

৫ ম্যাচের সিরিজে অভিষিক্ত এবি করেছিলেন ৪০.২২ গড়ে ৩৬২ রান। ১টি সেঞ্চুরির পাশে হাফ সেঞ্চুরি ছিল দুটি।

একই সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। সুযোগ পেলেন সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে, করতে পারলেন মাত্র ২০। তবে দুর্দান্ত ফিল্ডিং দিয়ে ঠিকই নজর কেড়েছিলেন সবার। ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভনকে রানআউট করার পর দারুণ এক ক্যাচে ফিরিয়েছিলেন পল কলিংউডকে।

ওয়ানডে সিরিজে চার ম্যাচে সুযোগ পেয়েও ব্যাটিংয়ে তেমন ভাল কিছু করতে না পারায় পরের সিরিজেই জায়গা হারালেন একাদশ থেকে।

২০০৫ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টে খেললেন ১৭৮ রানের ‘ম্যাচ উইনিং’ এক ইনিংস, বারবাডোজের কেনসিংটন ওভালে। সেঞ্চুরি পেলেন পরের টেস্টেও, অ্যান্টিগাতে করলেন ১১৪। চার টেস্টে ৬৫.৭১ গড়ে করলেন ৪৬০ রান।

তবে অস্ট্রেলিয়া সফরটা ভাল গেল না মোটেও। ৬ ইনিংসে করলেন মাত্র ১৫২ রান। সিরিজের মাঝপথে অবশ্য একটা রেকর্ডও করে ফেললেন। পার্থের ওয়াকায় ৬৮ রানের ইনিংসটি খেলার পথে স্পর্শ করলেন টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক। গ্রায়েম স্মিথের পর ‘দ্বিতীয় দ্রুততম’ এবং গ্রায়েম পোলকের পর ‘দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম’প্রোটিয়া হিসেবে টেস্টে হাজার রানের এ মাইলফলক অর্জন করেছিলেন এবি।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুতে দলে ডি ভিলিয়ার্সের ভূমিকাটা ছিল অনেকটা জন্টি রোডসের মত। ওপেনিং, মিডল অর্ডার সব জায়গাতেই ট্রাই করা হয়েছে তাঁকে। তবে কেন জানি ব্যাট হাতে ছন্দটা ঠিক খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

অবশেষে ২০০৬ সালে সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্টস পার্কে ভারতের বিপক্ষে, ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৯৮ বলে ৯২* রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্যের কথা জানান দিলেন এবি। সাফল্যের ধারাটা তিনি বজায় রাখলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের সিরিজেও। ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ১১৫.৫০ গড়ে করলেন ২৩১ রান।

শুধু ব্যাটিং নয়, ডি ভিলিয়ার্স একজন ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন ফিল্ডারও বটে। দুর্দান্ত রিফ্লেক্স, স্ট্যামিনা ও অ্যাথলেটিসিজম তাঁকে দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডারের স্বীকৃতি। আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকেই অনেকে তাঁকে তুলনা করেছেন ‘ফিল্ডিং কিংবদন্তি’ জন্টি রোডসের সাথে। এবির স্পেশালিষ্ট ফিল্ডিং পজিশন ছিল স্লিপ, গালি এবং কাভার অঞ্চল।

২০০৬ সালে একটি টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সাইমন ক্যাটিচকে অসাধারণ এক ডিরেক্ট থ্রোতে রান আউট করেছিলেন এবি। অবিশ্বাস্য সেই রান আউটের ঘটনাটা জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো বর্ণনা করেছিল এভাবে, ‘When he (AB) dived to stop the ball, and while still lying on his stomach facing away from the stumps, he tossed the ball backwards over his shoulder and effected a direct hit.’

টেস্টের তুলনায় ওয়ানডেতে কেমন জানি বিবর্ণ দেখাচ্ছিল এবির ব্যাট। একসময় ব্যাটিং এভারেজ ছিল ত্রিশের নিচে, স্ট্রাইক রেটও আশির নিচে। অভিষেকের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না। অবশেষে ওয়ানডেতে পরম আরাধ্য সেই ট্রিপল ফিগারের দেখা পেলেন ২০০৭ বিশ্বকাপে, ক্যারিয়ারের ৩৮ তম ওয়ানডেতে এসে।

গ্রেনাডায় সুপার এইটের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তুলে নিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতরান, ১২ চার ও ৫ ছক্কায় খেললেন ১৩০ বলে ১৪৬ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। যার সুবাদে প্রোটিয়ারা দাঁড় করিয়েছিল ৩৫৬ রানের বিশাল এক স্কোর। মজার ব্যাপার হল, ডি ভিলিয়ার্সকে ইনিংসটির বেশিরভাগ সময় খেলতে হয়েছিল ‘রানার’ নিয়ে। প্রচন্ড গরমে পানিশূন্যতা ও মাসল ক্র‍্যাম্পে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবি।

২০০৭ বিশ্বকাপের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল ভীষণ বাজেভাবে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই পেলেন ‘ডাক’! পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ব্যাট হাতে ‘অধারাহিক’ ডি ভিলিয়ার্স ডাকের দেখা পেয়েছিলেন আরও ৩ বার! এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৪ টি ডাকের লজ্জাজনক রেকর্ডটিও যে এবিরই দখলে!

টুর্নামেন্টের চার ম্যাচে ০ রানে আউট হলেও ওভারঅল খুব খারাপ করেন নি এবি। ১০ ইনিংসে ৩৭.২ গড়ে ৩৭২ রান। স্বাগতিকদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি বাদেও খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭০ বলে ৯২, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৫ বলে ৬২, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৫ বলে ৪৪ রানের মত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইনিংস।

বিশ্বকাপের পরের বছর ২০০৮ সালটা এবির কাছে ধরা দিয়েছিল নতুনভাবে। অনেকের মতে এই বছরটাই ছিল এবির ক্রিকেট জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ২০০৬-২০০৭ এই দুটো বছর টানা বেশ কয়েকটি সিরিজে ব্যাট হাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ‘ফ্লপ’ এবির ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা শুরু হয় ২০০৮ সালে।

২০০৮ সালের জানুয়ারিতেই পেয়ে যান প্রায় ভুলতে বসা টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ! ডারবানের কিংসমিডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রায় আড়াই বছর পর সেঞ্চুরি করেন এবি; অপরাজিত ১০৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে দলকে জেতাতে রাখেন বড় ভূমিকা।

এপ্রিলে আহমেদাবাদ টেস্টে ভারতের বিপক্ষে পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি(২১৭*)। ভারতের বিপক্ষে কোন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানের টেস্টে এটাই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। জুলাইতে হেডিংলি টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭৪ রানের আরও একটি মাস্টারক্লাস ইনিংস খেলেন এবি; প্রোটিয়াদের জয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল যে ইনিংস। ২০০৮ সালে টেস্টে ৪ সেঞ্চুরিসহ ৫৮.৯৪ গড়ে ডি ভিলিয়ার্সের সংগ্রহ ছিল ১০৬১ রান।

টেস্টে বাজে সময় কাটালেও কখনও শূন্য রানে আউট হন নি ডি ভিলিয়ার্স! টেস্ট ইতিহাসে অভিষেকের পর থেকে একটানা সবচেয়ে বেশি (৭৮ টি) ইনিংস তিনি ‘ডাকবিহীন’ ছিলেন যা একটি বিশ্বরেকর্ড। অবশেষে ২০০৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ৭৯ তম টেস্ট ইনিংসে এসে প্রথম ‘ডাকের’ স্বাদ পান ডি ভিলিয়ার্স।

সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ফ্লাইটে পরাস্ত হয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে স্টাম্পড হয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ‘ডাক’ মারার পূর্বে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের (২৯৫৮ রান) রেকর্ডটিও ডি ভিলিয়ার্সের দখলে।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থ টেস্টের শেষ দিনে চতুর্থ ইনিংসে টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১৪ রান তাড়া করে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬ উইকেটের অবিশ্বাস্য সেই জয়ে ব্যাট হাতে বড় অবদান রেখেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স (১৮৬ বলে অপরাজিত ১০৬*)।

সেই ম্যাচে ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত ‘৪টি’ ডাইভিং ক্যাচ নিয়েছিলেন এবি। ঐতিহাসিক এই জয়টি ছিল ১৫ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম জয়।

২০০৯ সালে ওয়ান্ডারার্সে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিরতি সিরিজের প্রথম টেস্টে ‘স্রোতের বিপরীতে’ দাঁড়িয়ে ১৮৫ বলে অপরাজিত ১০৪* রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেন এবি। মিচেল জনসন-পিটার সিডল জুটির তোপের মুখে, প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিলে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ হারে ১৬২ রানে।

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ডারবানে, সিরিজের পরের টেস্টেও। ১৭৫ রানের বিশাল ব্যবধানে আবারও হেরে বসে প্রোটিয়ারা। তবে ব্যাট হাতে ঠিকই প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলেছিলেন এবি; খেলেছিলেন ১৯৯ বলে ৮৪ রানের দারুণ সংযমী একটি ইনিংস।

কেপটাউনে সিরিজের শেষ ম্যাচে আবারও সেই চিরচেনা আক্রমণাত্মক রূপে আবির্ভূত হন ডি ভিলিয়ার্স। ১২ চার ও ৭ ছক্কায় খেলেন ১৯৬ বলে ১৬৩ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। প্রোটিয়ারা ম্যাচ জেতে এক ইনিংস ও ২০ রানের বিশাল ব্যবধানে। ১৬৩ রানের আগ্রাসী সেই ইনিংসটি খেলার পথে অস্ট্রেলিয়ান পেসার অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডের এক ওভারে টানা ৪ বলে ৪টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স যা টেস্ট ক্রিকেটে একটি বিশ্বরেকর্ড। ২-১ ব্যবধানে প্রোটিয়ারা সিরিজ হারলেও ৮৯.২৫ গড়ে ডি ভিলিয়ার্স করেছিলেন ৩৬৭ রান।

টেস্ট সিরিজ হারলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি ৩-২ ব্যবধানে জিতে নিয়েছিল প্রোটিয়ারা। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সেই সিরিজের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে থাকা এবি ডি ভিলিয়ার্স। ৬৫ গড়ে ৩ ফিফটিতে করেছিলেন ২৬০ রান। ২০০৯ সালের অক্টোবরে ভারত সফরের ওয়ানডে সিরিজে টানা দুই ম্যাচে ‘অপরাজিত’ সেঞ্চুরি (১০১ বলে ১১৪* এবং ৫৯ বলে ১০২*) হাঁকান এবি।

২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে ওয়ানডেতে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরি আর ২ ফিফটিতে এবি করেছিলেন ২৮৩ রান। সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হাঁকান টানা ২ ম্যাচে সেঞ্চুরি (১০৯ ও ১০১)।

সে বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে আরও একটি ওডিয়াই সিরিজ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ ম্যাচের সিরিজে ৬১.৮ গড়ে এবির সংগ্রহ ছিল ৩০৯ রান।

২০১০ সালের নভেম্বরে আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এবি খেললেন ২৭৮ রানের ক্যারিয়ার সেরা টেস্ট ইনিংস। ৪১৮ বলের ‘ম্যারাথন’ সেই ইনিংস খেলতে এবির সময় লেগেছিল ১০ ঘন্টারও বেশি। ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাশিম আমলার ট্রিপল সেঞ্চুরির (৩১১) আগে এটিই ছিল টেস্টে যেকোন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস।

এই ঘটনার মাত্র একমাস পরই ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে মাত্র ৭৫ বলে সেঞ্চুরি করেন ডি ভিলিয়ার্স যা বলের হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড।

২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিলেও ব্যাট হাতে ডি ভিলিয়ার্স ঠিকই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৮৮.২৫ গড়ে ৩৫৩ রান, স্ট্রাইক রেট ১৩৬.৭৩!

প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়েছিলেন বিশ্বকাপের টানা দুই ম্যাচে শতরানের কীর্তি। সেঞ্চুরি দুটি এসেছিল টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস (৯৮ বলে ১৩৪) এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের (১০৫ বলে ১০৭*) বিপক্ষে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকার মিরপুরে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালে ডি ভিলিয়ার্স যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণ বেশ ভালভাবেই ম্যাচে ছিল প্রোটিয়ারা। এবির দুর্ভাগ্যজনক ‘রান আউটের’ মধ্য দিয়েই মূলত তাদের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়।

 

ব্যর্থ বিশ্বকাপ মিশন শেষে দেশের মাটিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অংশ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। কেপটাউনে সিরিজ নির্ধারণী শেষ টেস্টে এবি খেলেছিলেন ২০৫ বলে অপরাজিত ১৬০* রানের অসাধারণ এক ইনিংস, হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। প্রোটিয়ারা সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে, ১১৭.৬৭ গড়ে ৩৬৩ রান করে ডি ভিলিয়ার্স হয়েছিলেন সিরিজ সেরা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটাও দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছিল সেবার। ৫ ম্যাচের সিরিজটা শেষ পর্যন্ত ৩-২ ব্যবধানে জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১০৯.৬৭ গড়ে ৩২৯ রান করে সিরিজসেরা হয়েছিলেন যথারীতি এবি ডি ভিলিয়ার্স! সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে ৯৮ বলে অপরাজিত ১২৫* রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলে মূল পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছিলেন এবিই। সেবারই গ্রায়েম স্মিথকে সরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে দলের অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়েছিল ডি ভিলিয়ার্সকে।

পরের বছর নিউজিল্যান্ড সফরেও আস্থার প্রতিদান দিয়েছিলেন ‘অধিনায়ক’ ডি ভিলিয়ার্স, ব্যাট হাতে এক সেঞ্চুরিসহ করেছিলেন ১৭৬ রান। ডি ভিলিয়ার্স-আমলাদের ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকদের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল প্রোটিয়ারা।

২০১২ সালে পার্থ টেস্টে ডি ভিলিয়ার্স আবির্ভূত হয়েছিলেন ‘ধৈর্য্যের প্রতিমূর্তি’ রূপে। ফাফ ডু’প্লেসিকে নিয়ে ৪ ঘন্টারও বেশি সময় উইকেট আঁকড়ে পড়ে ছিলেন কেবল দলকে নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে। ম্যাচের পরিস্থিতি ও দলের চাহিদা মেটাতে খেলেছিলেন আদর্শ এক টেস্ট ইনিংস! স্বভাববিরুদ্ধ রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলে করেছিলেন ২২০ বলে মাত্র ৩৩ রান!

এবি আউট হয়ে গেলেও ৩৭৬ বলে অপরাজিত ১১০ রানের ‘গ্রাইন্ডিং’ ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ঠিকই বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন ‘ম্যাচসেরা’ ফাফ ডু প্লেসিস।

ব্যাটসম্যান হিসেবে এবি কতটা ভার্সেটাইল সেটা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন পরের টেস্টেই। ২২০ বলে ৩৩ রানের ‘ম্যাচ সেভিং’ ইনিংস খেলার পরের ম্যাচেই এবি খেলেছিলেন ১৮৪ বলে ১৬৯ রানের ‘ম্যাচ উইনিং’ এক ইনিংস! একজন ব্যাটসম্যান চাইলে কিনা করতে পারেন সেটা ডি ভিলিয়ার্সকে দেখে শেখা উচিত।

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্টে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১১টি ডিসমিশালের বিশ্বরেকর্ডে ভাগ বসান ‘উইকেটকিপার’ এবি ডি ভিলিয়ার্স।১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে ১১টি ডিসমিশালের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক উইকেটকিপার জ্যাক রাসেল।

শুধু তাই নয়, ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৭ বলে ১০৩ রান করে অপরাজিত থাকেন এবি। এর ফলে টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র উইকেটরক্ষক হিসেবে এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০টি ডিসমিশালের অনন্য এক রেকর্ডের অধিকারী হন তিনি। সিরিজে ২ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিসহ ৮৮ গড়ে ডি ভিলিয়ার্সের সংগ্রহ ছিল ৩৬২ রান। আর সাউথ আফ্রিকার কাছে পাকিস্তান হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল ৩-০ ব্যবধানে।

২০১৩ সালের মার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজটাও জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। যথারীতি এবারও সিরিজসেরা মনোনীত হন এবি ডি ভিলিয়ার্স। এক সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিসহ ৯১.৭৫ গড়ে করেন ৩৬৭ রান। ১৮ মার্চ জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় একদিনের ম্যাচে হাশিম আমলার সাথে তৃতীয় উইকেট জুটিতে রেকর্ড সর্বোচ্চ ২৩৮ রান যোগ করেন ডি ভিলিয়ার্স। ১০৮ বলে ১২৮ রান করে ম্যাচ সেরাও হয়েছিলেন তিনিই।

ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে সাফল্যের পাল্লাটা ধরে রেখে একই বছর ভারতের বিপক্ষে পরবর্তী সিরিজে করেছিলেন ১৮৯ রান, ৬৩ গড়ে!

২০১৪ সালে শ্রীলংকা সফরের ওয়ানডে সিরিজে ৩ ম্যাচে ৭০.৬৭ গড়ে এবির সংগ্রহ ছিল ২১২ রান। সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচে খেলেছিলেন ৭১ বলে ১০৮ রানের আরও একটি ‘টিপিক্যাল এবি’ ইনিংস!

একই বছর আগস্টে দেশের মাটিতে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজেও ব্যাট হাতে ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক। প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ১০৬ বলে অপরাজিত ১৩৬* রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো ম্যাচে ৪১ বলে অপরাজিত ৫৭ রান করে ডি ভিলিয়ার্স অবতীর্ণ হয়েছিলেন ফিনিশারের ভূমিকায়। এবির ব্যাটে ভর করেই (৩ ম্যাচে ১৫৯ রান) বছরের শেষ পর্যায়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আরও একটি ওয়ানডে সিরিজ জেতে প্রোটিয়ারা।

২০১৪ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে ওডিয়াই সিরিজ হারে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ব্যাট হাতে ঠিকই ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। ৪ ম্যাচে ৬৭.৭৫ গড়ে, ১১৩.৩৯ স্ট্রাইক রেটে ২৭১ রান করেও দলের হার এড়াতে পারেন নি তিনি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পরের সিরিজেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় প্রোটিয়ারা। ৩-০ তে টেস্ট সিরিজ এবং ৪-১ এ জিতে নেয় ওয়ানডে সিরিজ।

টেস্ট সিরিজে এবির ব্যাট থেকে আসে দুই সেঞ্চুরিসহ (১৫২ ও ১৪৮) ৭৭.৫ গড়ে ৩১০ রান। আর ওডিয়াই সিরিজে ১ সেঞ্চুরি, ১ ফিফটিতে ৮৩ গড়ে ২৪৯ রান।

২০০৪ সালের ১৭ ডিসেম্বরে অভিষেকের পর থেকে ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৯৮টি টেস্ট ম্যাচে অংশ নিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স।

অভিষেকের পর থেকে একটানা সর্বোচ্চসংখ্যক টেস্ট ম্যাচ খেলার এই রেকর্ডটি পরে ভেঙে দেন নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (১০১ ম্যাচ)।

২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি, ‘ডি ভিলিয়ার্স’ নামের প্রলয়ংকরী ‘সাইক্লোনের’ তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ; যার সাক্ষী হয়েছিল সমগ্র ক্রিকেট বিশ্ব। জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে ক্যারিবীয় বোলারদের পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে মাত্র ১৬ বলে ফিফটি আর ৩১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স! যা বলের হিসাবে ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড!

এবি শেষ পর্যন্ত থেমেছিলেন ৪৪ বলে ১৪৯ করে। স্ট্রাইক রেটটাও ছিল অবিশ্বাস্য (৩৩৮.৬৪)! এমন এক ইনিংস যেখানে চারের চাইতে ছক্কাই বেশি। ৯টি চারের পাশে ছক্কা ছিল ১৬টি! ক্রিস গেইল আর রোহিত শর্মার সাথে ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার (১৬টি) রেকর্ডের অংশীদার হয়েছিলেন তিনি।

‘জোহানেসবার্গ তাণ্ডবের’ মাসখানেক পরই ২০১৫ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে আরো একবার ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাট নামক তরবারির ধ্বংসাত্মক নির্মমতার শিকার হন ক্যারিবীয় বোলাররা। সিডনিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ১৭ চার আর ৮ ছক্কায় মাত্র ৬৬ বলে অপরাজিত ১৬২* রান করে অপরাজিত থাকেন ডি ভিলিয়ার্স।

ফলে ওয়ানডেতে বলের হিসেবে দ্রুততম ৫০ (১৬ বলে), ১০০ (৩১ বলে) এবং ১৫০ রানের (৬৪ বলে) তিনটি রেকর্ডই চলে যায় তাঁর দখলে! ডি ভিলিয়ার্সের অপরাজিত ১৬২ রানের ইনিংসটি এসেছিল ৫ নম্বরে নেমে। ওয়ানডে ইতিহাসে পাঁচ নম্বর পজিশনে যেকোন ব্যাটসম্যানের এটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর।

২০১৫ বিশ্বকাপে ডি ভিলিয়ার্সের অধিনায়কত্বেই চতুর্থবারের মত সেমিফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজিত হলেও টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী (মার্টিন গাপটিল ও কুমার সাঙ্গাকারার পরেই) হয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরিতে ৯৬.৪০ গড়ে, ১৪৪ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেছিলেন ৪৮২ রান! ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার এক আসরে সর্বাধিক ২০টি ছক্কা মারার রেকর্ড গড়েন এবি।

এছাড়াও সব বিশ্বকাপ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩৭টি ছক্কা হাঁকানোর (ক্রিস গেইলের সাথে যুগ্মভাবে) রেকর্ডেরও অংশীদার হন তিনি। বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যানও এবি ডি ভিলিয়ার্স। ২৩ ম্যাচে ৬৩.৫২ গড়ে তিনি সংগ্রহ করেছেন ১২০৮ রান। ব্যাট হাতে ৪টি সেঞ্চুরির সাথে বল হাতে নিয়েছেন ৪ উইকেটও।

ওয়ানডে ক্রিকেটের চতুর্থ দ্রুততম ৬০০০ রান (১৪৭ ইনিংস), তৃতীয় দ্রুততম ৭০০০ রান (১৬৬ ইনিংস), দ্বিতীয় দ্রুততম ৮০০০ রান (১৮২ ইনিংস) এবং দ্বিতীয় দ্রুততম ৯০০০ রানের (২০৫ ইনিংস) রেকর্ডটি এবি ডি ভিলিয়ার্সের দখলে।

বলের হিসাবে ওয়ানডের দ্রুততম ৯০০০ রানের রেকর্ডটি অবশ্য এবিরই। ওয়ানডেতে নয় হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে তিনি খরচ করেছেন মাত্র ৯০০৫ বল! এর আগের রেকর্ডটি ছিল অ্যাডাম গিলক্রিস্টের, ৯৩২৮ বল।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মোট ২৫ টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স যার প্রত্যেকটিতেই তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০ এর ওপর! ‘সুপারম্যান’ নামটা তো আর এমনি এমনিই দেয়া হয় নি!

২০১৫ সালের ভারত সফরের টেস্ট সিরিজে প্রথম ৩ ম্যাচের দুটোতেই হেরে আগেভাগেই সিরিজ হার নিশ্চিত করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় শেষ টেস্টটা ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার।

দিল্লি টেস্টে দলের পরাজয় এড়াতে আরও একবার নিজের সহজাত আক্রমণাত্মক মানসিকতাকে বিসর্জন দিয়ে তাঁকে খেলতে হয়েছিল ‘আল্ট্রা ডিফেন্সিভ’ মুডে।

নিশ্চিত হারের মুখ থেকে দলকে বাঁচাতে ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে ছিলেন পাক্কা ৭ ঘন্টা! ২৯৭টি বল খেলে রান করেছিলেন মাত্র ৪৩, স্ট্রাইক রেট ১৪.৪৭! সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন হাশিম আমলাকে, তিনিও খেলেছিলেন ২৪৪ বলে ২৫ রানের ধৈর্যশীল এক ইনিংস। কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হয় নি। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৩৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারতে হয়েছিল ম্যাচটা।

সে বছর ভারত সফরে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে একাই তিনটি সেঞ্চুরি (১০৪*, ১১৯ ও ১১২) হাঁকান ডি ভিলিয়ার্স। যেটি অধিনায়ক হিসেবে ভারতের মাটিতে একই সিরিজে সর্বাধিক সংখ্যক সেঞ্চুরির রেকর্ড। ডি ভিলিয়ার্স ও হাশিম আমলার ব্যাটিং নৈপুণ্যেই ‘ভারতের মাটিতে’ ভারতকে ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারাতে সক্ষম হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মটা তিনি ধরে রাখেন পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতেও। শ্রীলংকা (৫৭ গড়ে ১৭১ রান), ইংল্যান্ড (৭২.৬৭ গড়ে ২১৮ রান) এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (৮৭.৩৩ গড়ে ২৬২ রান) ওয়ানডে সিরিজগুলোতেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই পারফর্ম করে গেছেন এই ডানহাতি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।

তবে একদমই ভাল যায় নি ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা। ৩ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬.৬৭ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৬ রান! তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরে দলও ছিটকে পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই।

২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টি২০ ম্যাচে মাত্র ২৯ বলে ৭৯ রান করেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। ইনিংসটি খেলার পথে তিনি পঞ্চাশ ছুঁয়েছিলেন মাত্র ২১ বলে যা টি২০ তে প্রোটিয়াদের হয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড।

২০১৬ সালের আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে বিরাট কোহলির সাথে দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৯২ বলে ২২৯ রানের বিশাল জুটি গড়েছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটিং ‘জিনিয়াস’, যেটি স্বীকৃত টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। সে ম্যাচে ডি ভিলিয়ার্স অপরাজিত ছিলেন মাত্র ৫২ বলে ১২৯ রানে।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর বেশ কিছু দিন সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়েছে তাঁকে। পিঠের ইনজুরিটা ভোগাচ্ছিল দীর্ঘদিন থেকেই। ফলে অধিনায়কত্বের সাথে ছাড়তে হয়েছে উইকেটকিপিংটাও।

অবশেষে কামব্যাক করলেন ২০১৭ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। প্রত্যাবর্তনটাও হয়েছিল একেবারে রাজার মত! সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাট করারই সুযোগ পান নি, তবে দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এখনও ফুরিয়ে যান নি তিনি। বাংলাদেশি বোলারদের রীতিমতো ‘কচুকাটা’ করে খেলেছিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস! ১৫ চার ও ৭ ছক্কায় ১০৪ বলে ১৭৬ রান!

২০১৫ বিশ্বকাপের পরের দুই বছর ডি ভিলিয়ার্স টেস্ট খেলেছেন মোটে ৪টা! ২০১৬ সালে ৩টা আর ২০১৭ তে মাত্র ১টা!

তবে ২০১৮ তে ফিরেই দলকে টেস্ট জেতাতে রেখেছেন বড় ভূমিকা। ভারতের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজের ‘লো স্কোরিং’ প্রথম ম্যাচে দুই ইনিংস মিলে এবি করেছিলেন ১০০ রান (৬৫ ও ৩৫)। শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল ওই রানটাই। সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন বুঝি একেই বলে! সিরিজ শেষে এবির সংগ্রহ ছিল ৩৫.১৭ গড়ে ২১৭ রান। প্রত্যাবর্তন সিরিজ হিসেবে খুব খারাপ করেছেন একথা বলা যাবে না মোটেও।

টেস্ট খেলেছেন ১১৪টি। প্রায় ৫০.৬৬ গড়ে রান করেছেন ৮৭৬৫। ২২ টি সেঞ্চুরির সাথে আছে ৪৬ টি হাফ সেঞ্চুরি।

ওয়ানডেতে ডি ভিলিয়ার্স তো বোলারদের জন্য রাতের ঘুম কেড়ে নেয়া এক ব্যাটসম্যান; ২২৮ ম্যাচে এসেও স্ট্রাইকরেট ধরে রেখেছেন ১০০ এর ওপর। সবমিলিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ২০৪টি! ওয়ানডেতে ২১৮ ওয়ানডে ইনিংস খেলে এবি করেছেন ৯৫৭৭ রান; ৫৩.৫ গড়ে। সাথে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ২৫ টি, হাফ সেঞ্চুরি ৫৩ টি।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ১০ বার। ১৩৫.১৭ স্ট্রাইক রেটে ২৬.১২ গড়ে করেছেন ১৬৭২ রান। ক্রিকেটের সব ফরম্যাট মিলিয়ে ‘ফিল্ডারের’ ভূমিকায় নিয়েছেন ২৩৮টি ক্যাচ এবং ‘উইকেটকিপার’ হিসেবে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ২৩১টি ডিসমিশাল। এছাড়া ডিবলি ডবলি মিডিয়াম পেসে নয়টি আন্তর্জাতিক উইকেটও আছে তাঁর। এবিকে তাই ‘অলরাউন্ডার’ বললেও বোধ হয় খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে না।

টেস্টে পাঁচ বার ম্যাচ সেরা হয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স আর সিরিজ সেরা হয়েছেন চার বার। ওয়ানডেতে ২৭ বার হয়েছেন ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’, সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন ৬ বার। এছাড়া আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাত বার পেয়েছেন ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি।

২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা ১২ টেস্টে অন্তত একবার পঞ্চাশ বা তার বেশি রান করার দুর্লভ রেকর্ড গড়েছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স।

স্ত্রী ড্যানিয়েলা আর আড়াই বছরের ছেলে আব্রাহামকে নিয়ে তিনজনের সুখের সংসার। পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে ছেলের নাম রেখেছেন নিজের নামে; আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স। দাদা-বাবা-ছেলে সবারই এক নাম!

ডি ভিলিয়ার্সের জন্মতারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি। এই ‘১৭’ সংখ্যাটিকে তিনি মনে করেন ‘লাকি নাম্বার’। তাঁর জার্সি নাম্বারও তাই ১৭।

খেলাধুলার পাশাপাশি গানের প্রতি রয়েছে তাঁর বিশেষ দুর্বলতা। অবসর পেলেই গিটারের টুংটাং ছন্দে মেতে ওঠেন তিনি। গানের গলাটাও বেশ সুরেলা। ঘনিষ্ঠ বন্ধু অ্যাম্পি ডু প্রিজের সাথে মিলে ‘মেক ইওর ড্রিম কাম ট্রু’ নামে একটি অ্যালবামও বের করেছেন ইতেমধ্যেই। এবির প্রিয় দুটি ব্যান্ড দলের নাম হচ্ছে ‘স্নো পেট্রোল’ এবং ‘কালেকটিভ সোউল’।

এবি ডি ভিলিয়ার্স খ্রিস্ট ধর্মের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী। ক্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল তাঁর প্রিয় বই। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অন্ধভক্ত এবি ডি ভিলিয়ার্স। প্রিয় ফুটবল তারকা সাবেক ম্যানইউ লিজেন্ড রায়ান গিগস। তাঁর প্রিয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আছেন সুইজারল্যান্ডের টেনিস তারকা রজার ফেদেরারও।

অবসরে গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রও দেখেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে প্রিয় মুভির নাম হিসেবে বলেছিলেন অস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ এর কথা। সাবেক রাগবি তারকা ফ্রঁসোয়া পিয়েনারের সাথে মিলে ‘মেক আ ডিফ্রেন্স’ নামের একটি অলাভজনক দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ডি ভিলিয়ার্স; যারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়। এবি নিজেও বেশ কয়েকটি অনাথ বাচ্চার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং তাঁদেরকে জোহানেসবার্গের একটি নামকরা স্কুলে ভর্তিও করে দিয়েছেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ‘এবি: দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ নামে একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

২০০৯ সালে আইসিসি মনোনীত ‘ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার’ এবং ‘টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারে ভূষিত হন এবি ডি ভিলিয়ার্স। ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আইসিসি মনোনীত ‘ওয়ানডে প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে টানা দু’বার দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার গ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link