আইপিএল ও ক্যারিবিয়ান ফেরিওয়ালা
ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট মানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের বাড়তি সমাদর। ক্যারিবিয়ান প্লেয়ারদের প্রতি এমন আগ্রহের কারণও অবশ্য আছে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলা হয় ছোট ফরম্যাটে; বিশ ওভারের এই খেলায় যত দ্রুত রান করা যায় ততই দলের মঙ্গল। ক্রিজে সেট হওয়া, কিংবা স্ট্রাইক রোটেশন এর চেয়ে পাওয়ার হিট করাটাই মাঠের খেলায় বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি দর্শকদের জন্যও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠে পাওয়ার হিটিং ইনিংস।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট মানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের বাড়তি সমাদর। ক্যারিবিয়ান প্লেয়ারদের প্রতি এমন আগ্রহের কারণও অবশ্য আছে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলা হয় ছোট ফরম্যাটে; বিশ ওভারের এই খেলায় যত দ্রুত রান করা যায় ততই দলের মঙ্গল। ক্রিজে সেট হওয়া, কিংবা স্ট্রাইক রোটেশন এর চেয়ে পাওয়ার হিট করাটাই মাঠের খেলায় বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি দর্শকদের জন্যও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠে পাওয়ার হিটিং ইনিংস।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা স্বভাবসুলভ ভাবেই পাওয়ার হিটার। এমনকি ওপেনার থেকে এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান সবাই ছয় মারতে বেশ দক্ষ। তাছাড়া বল হাতেও অনেকে অবদান রাখতে পারেন বেশ ভালোভাবে। এককথায় একাই একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতানোর সব গুন রয়েছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ক্রিকেটারদের।
ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সেরা টুর্নামেন্ট বলে খ্যাত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগও (আইপিএল) ব্যতিক্রম নয়। তাই প্রতি নিলামেই হাই প্রোফাইল উইন্ডিজ ক্রিকেটারদের পিছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালতে আপত্তি থাকে না মালিকপক্ষের। সবসময় টাকার প্রতিদান না মিললেও অধিকাংশ সময়েই লাভবান হন দলের মালিকরা।
একসময় ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলস কিংবা লেন্ডল সিমন্সরা ছড়ি ঘুরিয়েছিলো এসব ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসরে; এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ডোয়াইন ব্রাভো, কাইরেন পোলার্ড, সুনীল নারাইন বা আন্দ্রে রাসেলদের মত তারকারা। তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে উঠে আসছে তরুন উইন্ডিজের খেলোয়াড়রাও। বিশেষ করে শিমরন হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান, কার্লোস ব্রাথওয়েট বেশ জনপ্রিয় ক্রিকেটাঙ্গনে।
আইপিএলের শুরুটা ২০০৮ সালে। শুরু থেকেই মনে রাখার মত পারফরম্যান্স করে আসছে ক্যারিবিয়ানরা। গেইলের তান্ডব, পোলার্ড-ব্রাভোদের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স পরিচিত দৃশ্যই বটে। তবে আজ আইপিএলের এবারের আসরের কিছু চোখে লেগে থাকার মত পারফরম্যান্স ফিরে দেখা যাক।
প্রথমেই যার কথা বলতে হয় তিনি ওডেয়ান স্মিথ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের হয়ে খেলা এই ক্রিকেটারকে অনেকেই চিনে না। মাত্র কয়েকটি আন্তজার্তিক ম্যাচ খেললেও আহামরি কিছু করতে পারেননি তিনি। তবু মেগা নিলামে যখন ছয় কোটি রুপিতে তাকে কিনেছিল পাঞ্জাব কিংস তখন অনেকেই দলটির ম্যানেজম্যান্টকে নিয়ে হাসিতে মেতেছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই ভরসা’র প্রতিদান দিলেন এই অলরাউন্ডার।
বল হাতে দিনটি ভালো যায়নি, ব্যাট হাতে খেলেছেন মাত্র আট বল। তবু ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতেছিলেন; কারণ মাত্র আট বলেই ২৫ রান করে ম্যাচের ফলাফল বদলে দিয়েছিলেন। ব্যাঙ্গালোরের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিলেন স্মিথ।
আইপিএলের নতুন দল লখনৌ সুপার জায়ান্টস ভরসা রেখেছিল আরেক উইন্ডিজ তারকা এভিন লুইসের উপর। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হলেও নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ২৩ বলে ৫৫ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলকে জয় উপহার দেন লুইস। চেন্নাইয়ের দেয়া ২১০ রানের টার্গেট লুইসের কল্যানেই টপকে যেতে সক্ষম হয় নবাগত লখনৌ। স্বাভাবিক ভাবেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতে নেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের অভিজ্ঞ পারফর্মার আরেক উইন্ডিজ তারকা আন্দ্রে রাসেল। আসরের শুরুতে একটু নড়বড়ে হলেও এমন এক সময় জেগে উঠলেন যখন তাকে দলের প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। লো স্কোরিং এক থ্রিলারে পাঞ্জাব কিংসের দেয়া ১৩৮ রানের টার্গেটে তখন ৫১ রানে চার উইকেট হারিয়ে পথ হারাতে বসেছিল কলকাতা। কিন্তু ব্যাটকে হাতিয়ার বানিয়ে পাঞ্জাবের আশার নৌকা ধ্বংস করে দেন একজন আন্দ্রে রাসেল। মাত্র ত্রিশ বলে সত্তর রানের একটি অতিমানবীয় ইনিংসে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।
এছাড়াও আরেক বিধ্বংসী ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ার ধারাবাহিকভাবেই রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ডেথ ওভারে ঝড় তুলছেন। প্রথম ম্যাচে হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ১৩ বলে ৩২ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে করেন ১৪ বলে ৩৫।
হেটমায়ার-কে দলে ভেড়ানোতে রাজস্থানের মিডল অর্ডার কতটা শক্তিশালী হয়েছে তা ব্যাট হাতেই দেখিয়ে দিলেন এই ব্যাটার। এছাড়াও বল হাতে ডোয়াইন ব্রাভো চেন্নাইয়ের হয়ে দারুন ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন। আইপিএলের ইতিহাসে সর্ব্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ব্রাভো।
সব আসরেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে থাকেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আসরের শুরু থেকেই নিজেদের নাম এবং দাম দুটোর প্রতিই সুবিচার করে যাচ্ছেন তারা। এমন পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই ভবিষ্যতেও ক্যারিবিয়ানদের প্রতি ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তুলবে।
শুধু মাঠের জয়-পরাজয় নয়; চার ছয়ের মারে গ্যালারির দর্শকদের বিনোদন দিতেও নাম্বার ওয়ান উইন্ডিজের পাওয়ার হিটাররা। ভিন্নধর্মী উদযাপন, নাচ-গান, চুলের স্টাইল সবমিলিয়ে ক্রিকেটের মাঠে ভিন্নতা এনে দর্শকদের মুগ্ধ করতে ভুলেননা তারা। শুধু আইপিএল নয়, বিশ্বজুড়েই সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টই বিনোদনের পসরা সাজিয়ে বসেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা। ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা’ উপাধি তো এমনি এমনি পেয়ে যাননি।