ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট এক সময় বেশ রমরমা ছিল। ভারত, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার গ্রেট ক্রিকেটাররা খেলে গেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া কিংবা ভারতের অজয় জাদেজারা ছিলেন একটা সময় এই আসরের পরিচিত মুখ। এমনকি স্বয়ং কপিল দেবও এখানে খেলার জন্য সাইন করেছিলেন, কিন্তু শেষ অবধি ইনজুরির কারণে হয়নি।
আজো ঢাকার ক্রিকেটে বিদেশিরা খেলেন। বিদেশি লিগে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ কমে গেলেও ঢাকার ক্রিকেটে কয়েকজন ভারতীয়কে দেখা যাচ্ছে এবারও। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ নিশ্চয়ই হনুমা বিহারী, অভিমন্যু ঈশ্বরণ, বাবা অপরাজিত কিংবা পারভের রসুল।
এর বাইরেও আছেন কয়েকজন, যাদের নিয়ে আলোচনা হয় সামান্যই। তাঁদেরই একজনের কথা বলছি আজ।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর প্রায় পাঁচ হাজার রান, ব্যাটিং গড় ৪০-এর কাছাকাছি। কিন্তু, তিনি যেহেতু ভারতীয় ক্রিকেটার, তাই এই পারফরম্যান্সটা জাতীয় দলে ঢোকার জন্য কখনোই যথেষ্ট হয়নি।বলছিলাম, অশোক ম্যানেরিয়ার কথা। রঞ্জির এক সময়কার বেশ প্রসিদ্ধ ক্রিকেটার ছিলেন। আজো খেলেন বেশ দাপটের সাথেই।
তবে, তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের মূল ধারার বেশ বাইরে আছেন। খেলতে এসেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। ভারতের মূলধারার ক্রিকেটাররা এই সময়টাতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলতে ব্যস্ত। তারপরও ম্যানেরিয়া ঢাকায়। এর অর্থ আড়ালের অনেক অনেক বাইরেই তাঁর অবস্থান।
যদিও, ম্যানেরিয়া চাইলে বিরাট কোহলির মত ও হতে পারতেন। অন্তত দু’জনের শুরুটা প্রায় একই রকম। বিরাট কোহলির মত ম্যানেরিয়াও ছিলেন ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়ক। যদিও, ২০১০ সালের সেই আসরটা একেবারেই ভাল যায়নি ভারতের। ভারত বাদ পড়ে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে পরাজিত হয়ে।
ম্যানেরিয়া অবশ্য সেই যুব বিশ্বকাপের আসরের পর খারাপ করছিলেন না। ২০১১ সালে সেই বিরাট কোহলিরই দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু দলে ডাক পান। পরের বছর খেলেন রাজস্থান রয়্যালসে। তবে, ২০১৩ সালের পর আর আইপিএলে দেখা যায়নি ম্যানেরিয়াকে। ২৯ ম্যাচেই থেমে যায় এই ক্রিকেটারের আইপিএল অধ্যায়।
রঞ্জিতে ২০১০-১১ মৌসুমে যাত্রা শুরু তাঁর, রাজস্থানের হয়ে। প্রথম মৌসুমেই তিনটি সেঞ্চুরি করেন। সেবার রাজস্থানের শিরোপা জয়ে রাখেন বড় ভূমিকা। সেই তিনটা ম্যাচ তিনি আবার খেলেন বড় একটা ইনজুরি থেকে সেরে উঠে। দলের রানসংগ্রাহকদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় ছিল তাঁর।
তবে, বলাই বাহুল্য যে, ক্যারিয়ারের শুরুটা যতটা চকচকে ছিল, পরের রাস্তাটা ছিল ততই অন্ধকার। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করে গেলেও, সেই রানটা কখনোই জাতীয় দলের জন্য যথেষ্ট হয়নি।
এই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলার পর ভারতের টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন হনুমা বিহারি। এখন তিনি সাদা পোশাকে ভারতের নিয়মিত সদস্য। ফলে, তেমন স্বপ্ন অনেকেই দেখতে পারেন। কিন্তু, ম্যানেরিয়া কি পারেন? কারণ, তাঁর বয়স যে ৩১। এই বয়সটা কি নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস যোগায়? প্রশ্নের উত্তর যাই হোক না কেন, একটা কথা সত্যি যে সত্যিকারের স্বপ্নবাজদের জন্য বয়স কখনোই কোনো বাঁধা হতে পারে না।