গত রাতে দারুণ দুটি ম্যাচ দেখেছে ফুটবলপ্রেমীরা। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খেলায় চেলসি রিয়াল মাুিদ্রদকে পরাজিত করলেও সেমিফাইনালে যেতে পারেনি। অন্যদিকে ভিলারিয়ালের কাছে হেরে গেছে বায়ার্ন মিউনিখ। দুটি ম্যাচ থেকে রিয়াল ও ভিলারিয়াল উঠে গেছে সেমিফাইনালে। আজ রাতে বাকি দুটি সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে চারটি দল।
লিভারপুল-বেনফিকার পাশাপাশি আলোচিত ম্যাচে ম্যানচেষ্টার সিটি মুখোমুখি হবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের। সিটি-অ্যাতলেটিকো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। আজ রাতে ইতিহাদে দুটি দল মুখোমুখি হবে। এর আগে শেষ ষোলোতে স্পোর্টিং সিপিকে হারিয়ে শেষ ষোলতে উঠে সিটি। অন্যদিকে স্প্যানিশ ক্লাব আতলেতিকো শেষ ষোলোতে হারিয়েছিল আরেক ইংলিশ দলটি।
হার এড়ালেই সেমিফাইনাল, এমন সমীকরণ নিয়ে অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে মাঠে নামবে সিটি। ঘরের মাঠে ইংলিশ জায়ান্টদের কি সেই সমীকরণ মেলাতে দেবেন ডিয়েগো সিমিওনের দল। নিশ্চয়ই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে চাইবেন পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। আজ রাতে অবশ্য হাজার পাচেঁকের মতো দর্শকদের সমর্থন কম পাবে অ্যাটলেটিকো। প্রথম লেগে সিটির মাঠে সমর্থকদের বাজে আচরণের শিকার হয়ে শাস্তি পেয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাবটি।
উয়েফা শাস্তি হিসেবে পাঁচ হাজার টিকিট কম বিক্রি করার আদেশ দিয়েছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদকে। শাস্তি মেনেই আজকে মাঠে নামতে যাচ্ছে সিমিওনের শীষ্যরা। ইতিহাদে প্রথম লেগে ‘আদিযুগে’ ফিরে গিয়েছিল অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ, এমনই অভিযোগ করেছিল সিটি! টানা ৯০ মিনিট ম্যানসিটির পোস্টে একটিও শট নিতে পারেনি তারা। উল্টো ৫-৫-০ ফরমেশনে আক্রমণের রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছিল পেপ গার্দিওলার দলটি।
এমন ছক নিয়ে বাদানুবাদেও জড়ান সিটি কোচ ও অ্যাটলেতিকো অধিনায়ক কোকে। সেমিফাইনালের টিকিট আজ ফিরতি লেগে সবাই মিলে ২-০ গোলে জিততে হবে অ্যাতলেটিকোকে। প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতে এগিয়ে রয়েছে সিটি। অ্যাতলেতিকোকে শাস্তি হিসেবে আজ নিজেদের মাঠে পাঁচ হাজার দর্শকের একটা স্ট্যান্ড খালি রাখতে হবে। সেখানে উয়েফার লোগোসহ টানাতে হবে বর্ণবাদবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। এমন শাস্তিতে বেশ বিব্রত অবস্থায় রয়েছে অ্যাতলেতিকো। ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে আর সেমিফাইনাল খেলা হয়নি ডিয়েগো সিমিওনের দলের। এছাড়া পক্ষে নেই ঘরের মাঠের রেকর্ডও।
এসবকে পায়ে মাড়িয়ে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে মাঠে নামছে অ্যাটলেটিকো। ২০০০ সালের অক্টোবরের পর ওয়ান্দা মেত্রপলিতানোয় চ্যাম্পিয়নস লিগের কোনো ম্যাচ অবশ্য জেতেনি তারা। ড্র করেছে চারটি আর পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তিন ম্যাচে। লা লিগার সর্বশেষ ম্যাচে মায়োর্কার কাছেও আবার হেরেছে অ্যাতলেতিকো। এর পরও হাল ছাড়ছেন না দলটি।
আতোয়ান গ্রিজম্যান, জোয়াও ফেলিক্স, লুই সুয়ারেসের মতো ফরোয়ার্ড আছে যে দলে, তাদের সমীহ না করে যে আবার উপায় নেই ম্যানসিটির। ১-০ গোলে এগিয়ে থাকায় যে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায়নি, সেটি ভালো করেই জানা আছে পেপ গার্দিওলার। তাই সতর্ক হয়েই মাদ্রিদে খেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। দুই দলের লড়াইয়ের বাইরে লড়াইটা আবার দুই কোচেরও।
এদিকে অতীত পরিসংখ্যান অ্যাটলেটিকোর পক্ষে থাকলেও বর্তমান ম্যানসিটিকেই ফেবারিট বলতে হচ্ছে। দলটিতে দুর্দান্ত সব ফুটবলার খেলছেন। বিশেষ করে বেলজিয়ান তারকা কেভিন ডি ব্রুইন, ব্রাজিলের গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ইংল্যান্ডের রহিম স্টারলিং ও ফিল ফোডেন, আলজেরিয়ার রিয়াদ মাহরেজ, পর্তুগালের বার্নার্ডো সিলভা।
এদের মধ্যে বর্তমান ফুটবলে সেরাদের মধ্যেও রয়েছেন তারা। প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদেও তারকার কমতি নেই। উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ, ফ্রান্সের আতোয়ান গ্রিজম্যানরা, জোয়াও ফেলিক্সরা আছেন এই দলে। গত ম্যাচে ম্যানসিটি অবশ্য কঠিন পরীক্ষা দিয়েছে লিভারপুলের বিপক্ষে। ২-২ গোলে ড্র করলেও পেপ গার্ডিওলার চমৎকার একটা ম্যাচ উপহার দিয়েছেন সমর্থকদের।
অন্যদিকে আগের ম্যাচে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ মায়োর্কার কাছে ১-০ গোলে পরাজয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠে নামবে আজ। তবে লিগ ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ বিশ্লেষণ করা বেশ কঠিনই হবে। দিয়েগো সিমিওনে ও পেপ গার্ডিওলা আজ কী কৌশল নিয়ে শীষ্যদের মাঠে নামান সেটাই দেখার বিষয়! এই দুই দলের লড়াইটা মূলত দুই হেভিওয়েট কোচের লড়াই। পেপ গার্দিওলা ও ডিয়েগো সিমিওনে এর আগেও বেশ কবার মুখোমুখি হয়েছেন।
কখনো গার্দিওলা আবার কখনো সিমিওনে জিতেছেন। তবে অ্যাতলেটিকোর মাঠে শেষ ম্যাচে গার্ডিওলা ১-০ গোলে হেরেছিলেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কোচ হিসেবে সিমিওনের অ্যাতলেটিকোর কাছে হেরেছিলেন গার্দিওলা। অ্যাটলেটিকোর মাঠে গার্ডিওলার অধীন দল ছয় ম্যাচ খেলে তিন ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি হেরেছে সমান সংখ্যক ম্যাচে। এবার কী হতে যাচ্ছে সেটাই আজকের রাতের ফুটবলের বড় খবর!
তবে, প্রথম লেগে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে নামলেও ব্যবধান এতটাই নূন্যতম যে, নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না ম্যানসিটি। তাছাড়া অ্যাতলেটিকোর অতীত রেকর্ডও বিপদেরই বার্তাই দিয়ে যাচ্ছে। প্রথম লেগে হেরেও পরের লেগে জিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার রেকর্ড নিটক অতীতে আছে অ্যাতলেটিকোর। ২০১৫-১৬ মৌসুমে বার্সেলোনার কাছে প্রথম লেগে ২-১ গোলে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় লেগে ২-০ ব্যবধানে জিতে সেমিফাইনাল খেলেছিল অ্যাটলেটিকো।
২০১৪-১৫ মৌসুমে জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষেও প্রথম লেগে ১-০ গোলে হেরে দ্বিতীয় লেগে একই ব্যবধানে জিতে নিয়েছিল অ্যাতলেটিকো। পরবর্তীতে টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে জিতে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল দিয়েগো সিমিওনের দল। আজ সে কারণে দুই কোচের লড়াইয়ে কারোরই নিশ্চিন্তে থাকার কোন সুযোগ নেই। সেই লড়াই দেখার অপেক্ষায়।