টমাস বয়, দ্য বস

মেক্সিকোর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারদের যদি একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়, তাহলে সেখানে হুগো সানচেজ , রাফা মার্কোয়েজ বা চিচারিতোদের পাশে অবশ্যই থাকবে টমাস বয়ের নাম। কিন্তু তাঁর নিজের সময়ে মেক্সিকোর অন্যতম সেরা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারটিকে আর বাকি তারকা মেক্সিকান ফুটবলারদের মত চিনি কই আমরা?

১৯৭১ সালে মেক্সিকান ফুটবল লিগে প্রথম আত্মপ্রকাশ। ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোর প্রথম সারির ক্লাব টাইগার্স ক্লাবে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ চৌদ্দ মৌসুম সেই ক্লাবে কাটিয়ে অবসর নেন তিনি। হয়ে উঠেছিলেন ক্লাবের ঘরের ছেলে। ক্লাবকে এনে দিয়েছেন একাধিক ট্রফি। মোট ৪১৩ টি ম্যাচে টাইগার্সের হয়ে মাঠে নেমে করেছেন ৯৮ টি গোল।

১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনাতে অনুষ্ঠিত হতে চলা ফুটবল বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে মেক্সিকো। টমাস বয় তখন ফুটবল জীবনের মধ্যগগনে। ক্লাবের হয়ে দাপিয়ে খেলছেন। মেক্সিকো ফুটবলের অন্যতম তারকা তখন তিনি। কিন্তু সারা দেশকে অবাক করে দিয়ে ২৭ বছরের টমাস বয়কে বাদ দিয়েই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেন তৎকালীন মেক্সিকো জাতীয় দলের কোচ হোসে আন্তোনিও রোকো।

সংবাদমাধ্যম ও ফুটবল প্রেমীদের প্রতিবাদ ও সমালোচনায় কর্ণপাত না করে, বয়কে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে যায় মেক্সিকো। আর বিশ্ববাসী সেরা সময়ের টমাস বয়ের ফুটবল প্রতিভার সাথে অপরিচিতই থেকে যায়। অথচ সে বছরই তিনি মেক্সিকোর বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে তিন ম্যাচের তিনটিতেই হেরে ১২ গোল হজম করে একরাশ লজ্জা নিয়ে দেশে ফেরে মেক্সিকো ফুটবল দল।

আশ্চর্যজনকভাবে এরপরেও নিয়মিত জাতীয় দলের দরজা খোলে না বয়ের জন্য। ১৯৭৯ সালে মেক্সিকোর মন্তেরি শহরে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর অভিষেক। কিন্তু ১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় মেক্সিকো। বয় অপরিচিতই থেকে যান বিশ্ব ফুটবলের আসরে।

১৯৮৩ সালে মেক্সিকোর জাতীয় দলের কোচ হয়ে আসেন যুগোস্লাভ বোরা মিলুতিনোভিচ । উপেক্ষিত বয়ের প্রতিভা চিনতে ভুল করেননি তিনি। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকেন বয়কে কোচ মিলুতিনোভিচ। মিলুতিনোভিচের কোচিং কোচিংয়েই ১৯৮৪ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্তে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মেক্সিকোর হয়ে প্রথম গোল করেন তিনি। মোট নয়টি আন্তর্জাতিক গোলের সবগুলিই মিলুতিনোভিচের কোচিংয়েই।

১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপের আসর বসে বয়ের নিজের দেশ মেক্সিকোতেই। কোচ মিলুতিনোভিচ ঘরের মাঠে দেশের অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড তুলে দেন ৩৫ বছরের টমাস বয়ের হাতে। জীবনের প্রথম ও শেষ বিশ্বকাপের আসরে নজর কাড়েন বয় এবং তাঁর সতীর্থরা। তৎকালীন সময়ে মেক্সিকো ফুটবলে সবচেয়ে বড় নাম রিয়াল মাদ্রিদের তারকা ফুটবলার হুগো সানচেজ খুব একটা ফর্মে না থাকলেও, দলগত খেলায় বিপক্ষকে টেক্কা দিয়ে গ্রুপ পর্যায়ে বেলজিয়াম ও ইরাককে হারিয়ে এবং প্যারাগুয়ের সাথে ড্র করে দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌছে যায় মেক্সিকো ।

দ্বিতীয় রাউন্ডের নক আউট ম্যাচে বুলগেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে মেক্সিকো। ১৯৭০ মেক্সিকো বিশ্বকাপের মত এটিও ছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসে তাদের সেরা ফল । কোয়ার্টার ফাইনালে অবশ্য শক্তিশালী পশ্চিম জার্মানির কাছে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র রেখে অবশেষে টাইব্রেকারে হেরে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করে বয়ের ছেলেরা ।

১৯৮৭ সালে দেশের হয়ে মোট ৫২ টি ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন বয়। নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। তাই ফুটবল প্রেমীরা তাঁকে ‘এল জেফে’ নামেই ডাকত, যার অর্থ ‘দ্য বস’। অবসরের পর কোচিং করিয়েছেন একাধিক ক্লাবকে । দীর্ঘ ৩৩ বছর যুক্ত ছিলেন কোচিং এর সাথে।

ফুসফুসের ধমনীর সমস্যা নিয়ে ভুগছিলেন সম্প্রতি। ৭০ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন মেক্সিকোর সর্বকালের অন্যতম সেরা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার, টমাস বয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link