ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) মানেই নামি-দামি সব তারকা ক্রিকেটারদের এক মিলনমেলা। আবার এই আইপিএলই তরুণ ক্রিকেটারদের নিজেদের প্রমাণের সবচেয়ে বড় এক মঞ্চ। আইপিএলের জন্মলগ্ন থেকে বহু তরুণ ক্রিকেটার সুযোগ পেয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাতাচ্ছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের সার্বিক উন্নয়নে আইপিএল নি:সন্দেহে বেশ বড় প্রভাব ফেলছে।
জাসপ্রিত বুমরাহ, যুজবেন্দ্র চাহাল, হার্দিক পান্ডিয়া, শার্দুল ঠাকুর থেকে হালের মোহাম্মদ সিরাজ, ঈশান কিষাণ, সুরিয়াকুমার যাদব, রুতুরাজ গাইকড়, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, ঈশান কিষাণরা জাতীয় দলের মঞ্চে উঠে এসেছেন এই আইপিএল থেকেই। ভারতের তরুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের গড়ে তুলতে আইপিএল সন্দেহ ছাড়াই সেরা এক টুর্নামেন্ট।
পনেরো আসরে এখন পর্যন্ত বহু তরুণ ক্রিকেটারই সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে জাতীয় দলের সবুজ গালিচায় পা মাড়িয়েছেন। তবে আগের আসর গুলো ছাড়িয়ে বেশ কিছু তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার নজর কেড়েছেন এবারের আসরের আইপিএলে।
আগের আসর গুলোতে আট দল থাকায় দেশ-বিদেশের তারকা ক্রিকেটারদের ভীড়ে তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগটা অনেকটাই কম ছিল। তবে এবারের আসরে প্রথমবার দশ নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আইপিএল। আর এতে করে বহু তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার নিজেদের প্রমাণের বড় সুযোগই পেয়েছেন। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকে দেখিয়েছেন নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স।
আয়ুশ বাদোনি, জিতেশ শর্মা, তিলক ভার্মা, বৈভব অরোরা, অভিনব মনোহররা নিজেদের প্রথম আসরে সুযোগ পেয়েই প্রমাণ করছেন নিজেদের। জাতীয় দলে অভিষেক না হওয়া এই তরুণ ক্রিকেটাররা ব্যাট হাতে দাপট দেখাচ্ছেন আইপিএলের পঞ্চদশ আসরে। এছাড়া বল হাতে তরুণ উমরান মালিক গতির ঝড় তুলছেন নিয়মিতই।
ওই তরুণ সম্ভাবনাময় তারকাদের ভীড়ে এবারের আসরে কোটি টাকার অনেক বিদেশী তারকাই জায়গা পাচ্ছেন না একাদশে। অন্যান্য বারের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন চিত্র এবারের আসরের আইপিএলে। এখন পর্যন্ত ২৯ ম্যাচ খেলা হলেও এর মাঝে ১১ ম্যাচে কোনো একটি দল চার জনের কম বিদেশি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এমনকি গুজরাট টাইটান্স বাদে কোনো দলই সব ম্যাচে চার বিদেশি খেলায়নি। এদের মধ্যে কোন দল মাত্র দেশি ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়ে মাত্র দুই বিদেশি নিয়েও একাদশ সাজিয়েছে!
প্রথম ৬ ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্টে প্লে অফের লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে সুযোগ পাচ্ছেন না ৮.৫ কোটি রুপির টিম ডেভিড! প্রোটিয়া যুব তারকা ডেওয়াল্ড ব্রেভিস ও ভারত যুব দলের তারকা তিলক ভার্মার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে মিডল অর্ডারে ঠাঁই মিলছে না ডেভিডের।
এই তরুণ তুর্কিদের অসাধারণ পারফরম্যান্সে এবারের আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো খুব একটা বিদেশি ক্রিকেটারদের উপর নির্ভরশীল হচ্ছে না। অনেক বিদেশি তারকা ক্রিকেটারই ম্যাচের পর ম্যাচ বেঞ্চ গরম করছেন। অবশ্য একটা সময় এই আইপিএলেই বিদেশি ক্রিকেটারদের জন্য মুখিয়ে থাকতো দলগুলো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তরুণ ক্রিকেটাররা নিজেদের সেরাটা দিয়ে সেই জায়গাটা নিজেদের করে নিচ্ছেন।
অবশ্য বিদেশি তারকাদের ভীড়ে চাপ তো অবশ্যই আছে। পারফরম না করতে পারলেই যেতে হবে একাদশের বাইরে। সেই চাপ মাথায় নিয়েও ব্যাটে-বলে তরুণদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের দেখা মিলছে। ছোট ছোট ইনিংসেও হিটিং অ্যাবিলিটি কিংবা ম্যাচজয়ী ইনিংসে তরুণ ক্রিকেটাররা অবদান রাখছেন দলের হয়ে। অবশ্য দলগুলোও আস্থা রাখছে এই তরুণদের উপর।
এবারের আসরে বিদেশি ক্রিকেটারদের অনেকেই সেভাবে পারফরম করতে পারছেন না। তার উপর তরুণরা আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। যার কারণে আনরিচ নর্কে, রিলি মেরিডিথ, রহমানুল্লাহ গুরবাজ, ডেভন কনওয়ে, টিম ডেভিডরা এবার সুযোগই পাচ্ছেন না। বিদেশি ক্রিকেটারদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভারতের তরুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের উপর বিনিয়োগ করছেন অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি দল। আর ফলস্বরুপ ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তরুণ তারকার দেখা মিলেছে এবারের আসরে।
ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত ভাবনায় তরুণদের ধারাবাহিক সুযোগ পাওয়াটা অবশ্যই বিরাট ব্যাপার। দল বেড়েছে যেমন তেমনি বেড়েছে সুযোগও। আইপিএল বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপি এক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এই আইপিএল দিয়ে তরুণ ক্রিকেটাররা নিজেদের প্রমাণ করে জাতীয় দলে উঠে আসতে পারলে এর চেয়ে বড় সার্থকতা আর কি হতে পারে?