প্রতিভাদের কদর হবে, তাঁদের পরিচর্যা হবে, বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে, আন্তর্জাতিক থেকে শুরু করে দেশের ক্রিকেটের আগামীদের বাছাই করা হবে। এমন সব প্রত্যয় নিয়েই তো ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করেছিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। দেখতে দেখতে পনেরোটি মৌসুমে পদার্পণ করে ফেলেছে আইপিএল। তবে যে প্রত্যয় নিয়ে শুরু করেছিল তা যে আইপিএল পূরণ করতে পেরছে তা বলাই যায়।
এই তরুণ সব ক্রিকেটারদের জয়জয়কার হচ্ছে বিশ্ব জুড়েই। ভারতের ক্রিকেটের পাইপলাইন হচ্ছে শক্তপোক্ত। এর জন্য অবশ্য স্কাউটিংকে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট দিতে হয়। এক একজন জহুরির তাঁদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি সদা মেলে রেখেছেন ভারতের আনাচে-কানাচে। সে স্কাউটিং থেকে উঠে আসা সবচেয়ে বড় অস্ত্র যদি বিবেচনা করেন তবে তা জাসপ্রিত বুমরাহ। এর জন্য আলাদাভাবে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক জন রাইটকে বাড়তি ধন্যবাদ দেওয়াই যায়।
কেননা রাইটই প্রথম বুমরাহকে দেখেছিলেন স্থানীয় কোন এক টুর্নামেন্টে বোলিং করতে। তাঁর মধ্যে বড় কিছু করে দেখাবার সম্ভাবনা রয়েছে এমনটা আন্দাজ করতে পেরেই রাইট তাঁকে নিয়ে আসেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স শিবিরে। এরপর থেকে তো যা ঘটেছে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। শক্তি থেকে, আশ্চর্য জাগানিয়া এক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছেন তিনি সময়ের পরিক্রমায়।
তবে সেখানেই থেমে থাকেনি আইপিএল। একের পর এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। এই যেমন গত আসরের ভেঙ্কেটেশ আইয়ার। কলকাতা নাইট রাইডার্স যেন ছিল এক ফিনিক্স পাখি। পয়েন্ট তালিকার নিচের দিকে থাকা দল হয়েছিল আসরের রানার্স আপ। আর এই ঘুরে দাঁড়ানোর পথে কলকাতার সবচেয়ে বড় শক্তি জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অলরাউন্ডার ভেঙ্কেটেশ আইয়ার। আর এরপর জাতীয় দলে তাঁর অভিষেকটাও হয়ে যায়।
তাছাড়া অন্যদিকে, অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে উঠে আসা রবি বিষ্ণয় নির্বাচকদের দরজায় কড়া নাড়ছেন তাঁকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করবার জন্যে। সে কাজটার জন্যে তিনি বেছে নিয়েছিলেন গেল মৌসুমের আইপিএলকে। পাঞ্জাব কিংসের হয়ে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে তিনি নজর কেড়েছেন, জাতীয় দলের রাডারেও ঢুকে পড়েছেন। এখন শুধু থিতু হওয়া বাকি।
ঠিক এমনিভাবে প্রতিটা আসর থেকে ভারতের ক্রিকেট পাচ্ছে কিছু রত্ন। মাত্র ক’দিন হল শুরু হয়েছে আইপিএলের পঞ্চদশতম আসর। তবে ইতোমধ্যে তরুণ বেশ কিছু ক্রিকেটার কেড়ে নিতে শুরু করেছেন আলো। আয়ুশ বাদোনি, তিলক ভার্মা, অভিনব মনোহার ও অনুজ রাওয়াতিয়ারা চলে এসেছেন আলোচনায়। সে সাথে আলোচনায় ভাগ বসিয়ে উমরান মালিক এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন জাতীয় দলেও।
অথচ এই আয়ুশ বাদোনি কিংবা উমরান মালিক তাঁদের হয়ত রয়ে যেতেন আড়ালে। ভারতের বয়সভিত্তিক দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন আয়ুশ বাদোনি। বয়সের মারপ্যাচে ২০২০ সালে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা হয়নি আয়ুশের। সেখান থেকেই যেন ভাগ্য়ের সাথে লড়াই করে যেতে হয় বাদোনির। রাজ্যের দলে জায়গা মেলেনি দিল্লির ছেলের। ঘুরতে হয়েছে নানা জায়গায়। তবুও বড় একটা মঞ্চ খুব একটা পাওয়া হয়নি তাঁর।
দিল্লি ক্যাপিটালস তাঁকে ট্রায়ালে ডেকেও দর হাঁকায়নি নিলাম ঘরে। আর নেই আয়ুশ নিজের জাত চেনাচ্ছেন আইপিএলের মঞ্চে। তরুণদের রক্ত বরাবরই থাকে বেশ গরম। তবে আয়ুশ তাঁর ধৈর্য্য আর ক্রিকেটীয় দক্ষতা দিয়ে চলে এসেছেন আলোচনা। অন্যদিকে, উমরানেরও রয়েছে গল্প। অবহেলা আর আড়ালের গল্প। সেখান জম্মু-কাশ্মীরের এক স্থানীয় মাঠ থেকে উঠে এসে তিনি এখন আলোড়ন কাড়ছেন বিশ্বক্রিকেটে গতির ঝড় তুলে।
তিলক ভার্মাও ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাথে। সেখান থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটও যুক্ত ছিলেন। তবে ঠিক আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হতে পারেননি তিনি। কিন্তু এবার যেন মেঘ না চাইতেই জল। তিলকের আইপিএল সঙ্গী রোহিত শর্মা। তাঁর কাছ থেকে নিশ্চয়ই অনেক কিছু শেখার রয়েছে তিলকের। তাছাড়া নিজের দীক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করছেন না তিলক।
একই হাল অনুজ রাওয়াতের। তিনি রয়েছেন বিরাট কোহলি ও ফাফ ডু প্লেসিসের মত খেলোয়াড়দের ছায়া তলে। তবে তিনি যে একেবারেই কিছু করছেন তা বলার সুযোগ নেই। আবার অভিনব মনোয়ার একেবারেই তরুণ ক্রিকেটার নন। বয়স ২৭-২৮ এর ঘরে। তবে মাত্র মাস চারেক আগে তিনি জায়গা পেয়েছিলেন কর্ণাটক দলে। আর এরপরই আইপিএলের হয়ে আলোচনার বিষয় বনে গেছেন তিনি।
এভাবেই প্রতিবছর আইপিএল প্রতিভাবানদের জন্যে জায়গা করে দিচ্ছেন নিজেদেরকে মেলে ধরবার। তাছাড়া আইপিএলের বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজিদের সাথে যুক্ত থাকা স্কাউটরা এসবের নিরব নায়ক হিসেবে ভারত কিংবা গোটা ক্রিকেট বিশ্বের উন্নয়নে রেখে যাচ্ছেন ভূমিকা। এভাবেই আইপিএল তাঁর প্রত্যেয়ের সবটুকু নিংড়ে দেওয়া চেষ্টাটা করে যাচ্ছেন প্রতিটি মৌসুমে।