চার্লস কর্টরাইট, দ্রুততম?

গ্লস্টারশায়ার ভার্সেস সারের ম্যাচ। প্রবাদপ্রতিম ডাব্লু জি গ্রেস আবার একবার ঠাণ্ডা মাথায় নিজের দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। লক্ষ্যও খুব দূরে নয়। কিন্তু অন্যদিকে, লাল বল হাতে দীর্ঘদেহী এক ফাস্ট বোলারের সংকল্প ঠিক গ্রেসের বিপরীত। শুধু সেই সময়েরই নয়, সর্বকালের অন্যতম দ্রুততম ফাস্ট বোলার – চার্লস কর্টরাইট।

গ্লস্টারশায়ার ভার্সেস সারের ম্যাচ। প্রবাদপ্রতিম ডাব্লু জি গ্রেস আবার একবার ঠাণ্ডা মাথায় নিজের দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। লক্ষ্যও খুব দূরে নয়। কিন্তু অন্যদিকে, লাল বল হাতে দীর্ঘদেহী এক ফাস্ট বোলারের সংকল্প ঠিক গ্রেসের বিপরীত। শুধু সেই সময়েরই নয়, সর্বকালের অন্যতম দ্রুততম ফাস্ট বোলার – চার্লস কর্টরাইট।

গ্রেসের ক্রিকেট স্কিলের সঙ্গে তার গেমম্যানশিপের কাহিনিও সর্বজনবিদিত। সেই ম্যাচেও এক বোলারের বলে কট এন্ড বোল্ড হওয়ার পর আম্পায়ারের আঙুল গ্রেসের ধ্মকে ওপরে ওঠার মুখে আবার গুটিয়ে গিয়ে নিচে নেমে এসেছে। তার কিছু পরে কর্টরাইটের বলে স্লিপ ফিল্ডার একটা ক্যাচ মিস করল।

তিরিশ পা ছুটে এসে আবার একটা অগ্নিবাণ ছুঁড়লেন কর্টরাইট। বলটি উইকেটের ঠিক সামনে গ্রেসের পা পেয়ে গেল। হাউজ দ্যাট?! কিন্তু গ্রেসের তীব্র দৃষ্টি উপেক্ষা করে আঙুল তোলার সাহস হোল না আম্পায়ারের। এক বুক নি:শ্বাস নিয়ে আবার ফিরে এলেন কর্টরাইট। এবার পরিষ্কার নিক উইকেটকিপারের দস্তানায় আশ্রয় নিল। আবারও আম্পায়ারের আঙুল উঠল না। গ্রেসও এগিয়ে এসে ব্যাট দিয়ে ক্রিজ ঠুকতে লাগলেন।

আবার ফিরে এলেন কর্টরাইট। সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এবার একটা ইয়রকার দিলেন। মিডল স্ট্যাম্প ছিটকে পড়ল। আর লেগ স্ট্যাম্প ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে পড়ল উইকেটকিপারেরও বেশ কিছুটা পেছনে। প্যাভিলিয়ন মুখো হওয়ার আগে কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করলেন ডক্টর গ্রেস, যদি আম্পায়ার বিলেটেড নো বল ডাকেন। তারপর ব্যাট বগলে করে হাঁটা দিলেন প্যাভিলিয়নের দিকে।

পেছন থেকে ভেসে এল কর্টরাইটের সেই ঐতিহাসিক উক্তি, ‘আরে, কোথায় চললেন ডাক্তার? একটা স্ট্যাম্প তো এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।‘ গ্রেস পরে বলেন তিনি তার জীবনে এতটা অপমানিত আর কোনদিন হননি।
ম্যাচটা শেষ অবধি গ্লস্টারশায়ার জিতে নেয় এক উইকেটে। ম্যাচের শেষে গ্রেস এবং কর্টরাইট করমর্দন করেননি সেদিন।

অবশ্য কিছুদিন পর জেন্টলম্যান ভার্সেস প্লেয়ারদের ম্যাচের শেষে গ্রেস এবং কর্টরাইটকে একটা প্রায় ম্যাচ বাঁচানো পার্টনারশিপের পর (শেষ অব্দি তিন মিনিটের জন্য ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি তারা) হাত ধরাধরি করে মাঠ ছাড়তে দেখা গেল দর্শকদের তুমুল অভিনন্দের মধ্যে। এটাই ক্রিকেট! কর্টরাইটের বল একবার পিচের ওপর ড্রপ খেয়ে বাউন্ডারির ওপারে গিয়ে পড়েছিল। সেটা নাকি বাউন্সারও ছিল না, ফুল লেন্থের বল ছিল। তবে নিয়ম ছিল না বলে ৬ নয়, ৪ বাই রানই পেয়েছিল প্রতিপক্ষ দল। এই নিয়ম সম্ভবত এখনও বহাল রয়েছে।

১৯৫২ সালে কর্টরাইটের মৃত্যুর পর উইজডেন তাঁকে ইতিহাসের দ্রুততম ফাস্ট বোলার হিসবে চিহ্নিত করেছিল। যারা কর্টরাইটকে পারফর্ম করতে দেখেছিলেন তাদের কেউ আপত্তি জানাননি। শোয়েব আখতার, প্যাট্রিক প্যাটারসন, মাইকেল হোল্ডিং, জেফ টমসন, ডেনিস লিলি, ফ্র্যাঙ্ক টাইসন, ফ্রেডি ট্রুম্যান, হারল্ড লারউড – এবং চার্লস কর্টরাইট – ইতিহাসের দ্রুততম ফাস্ট বোলারের লিস্টে আর কোন নাম আসবে?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...