ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নো বল বিতর্ক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। রাজস্থান রয়্যালস ও দিল্লী ক্যাপিটালসের ম্যাচে নো বল বিতর্ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়। এই ঘটনায় আম্পায়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় দিল্লীর অধিনায়ক ঋষাভ পান্ত, সাপোর্ট স্টাফ প্রবীন আম্রে ও শার্দুল ঠাকুরকে জরিমানা করে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।
শেষ ওভারে দিল্লীর প্রয়োজন ছিল ৩৬ রানের। স্ট্রাইকে ছিলেন ক্যারিবিয়ান পাওয়ার হিটার রভম্যান পাওয়েল আর বোলিংয়ে আরেক ক্যারিবিয়ান ওবেড ম্যাকয়। ম্যাকয়ের করা প্রথম দুই বলেই দুই ছক্কা হাঁকালেন পাওয়েল। যদিও দিল্লীর জন্য জয়টা তখনও অসম্ভব প্রায়।
এরপর তৃতীয় বলটা দিলেন কোমরের কাছাকাছি উচ্চতায় ফুলটস। সেটিও সজোরে হাঁকিয়ে আছড়ে ফেললেন গ্যালারিতে। প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল এটি নো বল। কিন্তু অন ফিল্ড আম্পায়ার নিতিন মেনন অবশ্য নো বল ডাকলেন না। ফুঁসে উঠলেন পাওয়েল। আম্পায়ারকে নো বলের কথা জানাতেই সেই আবেদন নাকচ করে দিলেন। এরপর মেননকে তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে যাওয়ার কথা জানান পাওয়েল। কিন্তু তাঁর সেই আবেদনও নাকচ করে দেন ব্যাটার।
ততক্ষণে দিল্লীর ডাগআউটে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন অধিনায়ক ঋষাভ পান্ত। ডাগ আউট থেকে সমানে ডেভিড ওয়ার্নার, পান্তরা নো বলের ইঙ্গিত করতে থাকেন। তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে আবেদন জানানোর ইশারা করলেও অন ফিল্ড আম্পায়াররা সেদিকে কর্ণপাত না করে খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এতে ক্রিজে থাকা পাওয়েল এবং কুলদ্বীপ যাদবকে মাঠ থেকে বেড়িয়ে আসার নির্দেশ দেন দিল্লি অধিনায়ক পান্ত। অধিনায়কের নির্দেশে দুজনে মাঠের বাইরে চলে যেতে চাইলে তাঁদের আটকান আম্পায়াররা। বেশ কিছু সময় ধরে চলতে থাকে এই নাটক।
এরপর হঠাৎ করেই রাগে, ক্ষোভে মাঠে ঢুকে পড়েন দিল্লীর সাপোর্ট স্টাফ প্রবীন আম্রে। তিনি গিয়ে আম্পায়ারদের সাথে তর্কে জড়ান। যদিও ম্যাচ শেষে জানা যায় আম্রের মাঠে প্রবেশের পেছনের ঘটনা। দিল্লীর এক স্টাফের ভাষ্যমতে, ‘ঋষাভ পান্ত আম্রেকে বলেন, স্যার, আপনি আম্পায়ারদের সাথে কথা বলবেন? নাকি আমি যাব।’
ওই সময় আমরে চিন্তা করলেন এই মূহুর্তে অধিনায়কের মাঠে যাওয়াটা মোটেও ঠিক হবে না। যার কারণে পান্তকে রেখে তিনিই মাঠে চলে যান আম্পায়ারদের সাথে কথা বলতে। ওই সময় পান্ত মাঠে প্রবেশ করলে নিয়ম অনুযায়ী এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেতেন। আমরে সেদিন বিবেচনা করেই পান্তকে মাঠে যেতে নিষেধ করেন।
বেশকিছু সময় তর্কাতর্কির পর পুনরায় শুরু হয় খেলা। ততক্ষণে অবশ্য মনযোগ ব্যাহত হয় পাওয়েলের। এরপর খেলা শুরু হলেও জয়ের দেখা আর পায়নি দিল্লী। পরের দুই বল থেকে নেন দুই রান। আর শেষ বলে আউট হয়ে হতাশাজনক হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে দিল্লী। পাওয়েলের ১৫ বলে পাঁচ ছক্কায় ৩৬ রানের ক্যামিওতেও পরাজয় এড়াতে পারেনি দিল্লী ক্যাপিটালস।
এরপর শনিবার সকালে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল আমরে, পান্ত ও শার্দুল ঠাকুরকে নিয়ম ভঙ্গের জন্য ম্যাচ ফি থেকে জরিমানা করে। পান্ত ও আমরের ম্যাচ ফির শতভাগ জরিমানা করা হয়। সেই সাথে আমরেকে এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। শার্দুল ঠাকুরকে ম্যাচ ফির পঞ্চাশ শতাংশ করা হয় জরিমানা।
আম্রেকে মাঠে পাঠানোর প্রসঙ্গে পান্ত বলেন, ‘অবশ্যই এটা ঠিক ছিল না কিন্তু আমাদের সাথে যা হয়েছে তাও ঠিক হয়নি। কিন্তু ওই মূহুর্তে আসলে এর চেয়ে বেশি কিছু করারও ছিল না।’
দিল্লী ক্যাপিটালসের কোচ শেন ওয়াটসন বলেন, ‘দেখেন শেষ ওভারে যা হয়েছে এটা খুবই হতাশাজনক। আমরা ম্যাচে ছিলাম না কিন্তু শেষ ওভারে একটা মোমেন্টাম পাই। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল-সঠিক যাই হোক আমাদের মানতে হবে। কেউ পিচে দৌড়ে যাচ্ছে এমনটা মানা যায় না। এটা অবশ্যই ভাল কিছু না।’
এই ব্যাপারে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক মন্তব্য করতে নারাজ রাজস্থান রয়্যালসের ডিরেক্টর ও প্রধাণ কোচ কুমার সাঙ্গাকারা। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় দিনের শেষে খেলাটা আম্পায়াররাই নিয়ন্ত্রণ করেন। আইপিএলে প্রচুর চাপ এবং টেনশন থাকে। যে কোনও দিকে যেতে পারে ম্যাচ। কিন্তু দিনের শেষে পরিস্থিতি আম্পায়াররাই নিয়ন্ত্রণে আনেন। খেলাটা চলতে থাকে। আমি এভাবেই দেখি বিষয়টি। আমার মনে হয় না আমি এটা বলতে পারি যে, কোনটা গ্রহণযোগ্য, আর কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়। খেলোয়াড়রা খেলে, আম্পায়ারদের কাজটা কঠিন। আমরা সাপোর্ট স্টাফরা রয়েছি প্লেয়ারদের সমর্থন করার জন্য।’